Friday, August 1, 2025
Google search engine
Homeঅন্যান্যরাস্তায় আলু ফেলে রাস্তায় অবরোধ করে বিক্ষোভ

রাস্তায় আলু ফেলে রাস্তায় অবরোধ করে বিক্ষোভ

Protest by throwing potatoes on the road and blocking the road:আসানসোলের শিল্পাঞ্চল বহু দশক ধরে পশ্চিমবঙ্গের অর্থনৈতিক চালিকাশক্তির অন্যতম কেন্দ্র। বিশেষত কুলটি, চিনাকুড়ি, বারাবনি ও জামুড়িয়ার মতো এলাকাগুলি কয়লা শিল্পের ওপর অনেকটাই নির্ভরশীল। বহু পরিবার জীবিকা নির্বাহ করে কয়লাখনিতে কাজ করে। এই অঞ্চলের মানুষজনের কাছে খনি শুধু কাজের জায়গা নয়, একপ্রকার জীবনের অংশ। তবে বিগত কয়েক বছর ধরে এই শিল্পের নানা সংকট, বন্ধ খনি, বেসরকারিকরণ ও ছাঁটাই পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলেছে।সম্প্রতি কুলটির চিনাকুড়ি এলাকার একটি বেসরকারি কয়লাখনিতে কর্মরত ৫৫ জন শ্রমিককে আকস্মিকভাবে কাজ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। এর প্রতিবাদেই উত্তাল হয়ে উঠেছে গোটা এলাকা।বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই চিনাকুড়ি কয়লাখনির সামনের রাস্তায় জড়ো হতে থাকেন স্থানীয় বাসিন্দারা। তাঁদের হাতে ছিল প্ল্যাকার্ড, পোস্টার, মুখে ছিল একটাই দাবি—“৫৫ জন শ্রমিককে ফিরিয়ে দাও, স্থানীয়দের কাজে নিও।” এলাকাবাসীদের এই বিক্ষোভ ছিল শান্তিপূর্ণ হলেও, তাতে ছিল আবেগ, ক্ষোভ এবং দীর্ঘদিনের বঞ্চনার সুর।বিক্ষোভকারীদের অনেকেই বলছেন, “আমাদের পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি ছিলেন এই খনিতে কর্মরত। হঠাৎ কাজ না থাকলে আমরা খাব কি? চাল কিনবো কি করে?” কেউ কেউ কান্নায় ভেঙে পড়েন।স্থানীয় গ্রাম কমিটিগুলির উদ্যোগেই এই প্রতিবাদ সংঘটিত হয়। তাঁরা জানান, খনি কর্তৃপক্ষ কোনও আগাম নোটিশ না দিয়েই শ্রমিকদের কাজ থেকে সরিয়ে দিয়েছেন।

এটা শুধু অমানবিক নয়, আইনবিরুদ্ধও।এই প্রতিবাদের পরও কয়লাখনি কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে কোনো প্রতিক্রিয়া মেলেনি। তাঁদের তরফে কোনও লিখিত বিবৃতি বা প্রতিনিধির উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়নি। প্রশাসনের তরফ থেকেও এখনও পর্যন্ত কোনও মধ্যস্থতার চেষ্টা বা হস্তক্ষেপের খবর পাওয়া যায়নি।তবে সূত্রের খবর, স্থানীয় পুলিশ প্রশাসন বিক্ষোভস্থলে উপস্থিত ছিল আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি বজায় রাখতে। তবে তারা নিরপেক্ষ ভুমিকা নিয়েছে এবং বিক্ষোভকারীদের শান্তিপূর্ণভাবে প্রতিবাদ করতে বলেছে।চিনাকুড়ির স্থানীয় বাসিন্দারা ক্ষুব্ধ এবং হতাশ। তাঁদের মতে, দীর্ঘদিন ধরে যাঁরা এই খনিতে কাজ করছিলেন, তাঁদের এভাবে সরিয়ে দেওয়া উচিত হয়নি।একজন স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, “আমরা তো চিরকাল এই এলাকায় আছি। খনির কাজ ছাড়া আর কোনও সুযোগ আমাদের নেই। বাইরে থেকে লোক এনে কাজে নেওয়া হচ্ছে, আর আমাদের ছাঁটাই করা হচ্ছে। এটা মানা যায় না।”

Screenshot 2025 08 01 165848

একজন প্রাক্তন শ্রমিক বলেন, “আমরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কয়লাখনিতে কাজ করি। আজ যখন পরিবারের উপার্জন বন্ধ, তখন কর্তৃপক্ষ আমাদের কথাও শুনছে না।”কয়লা শিল্পে ছাঁটাই, অনিশ্চয়তা এবং বেসরকারিকরণের চাপ বিগত কয়েক বছর ধরেই চলছে। তবে স্থানীয়দের দাবি অনুযায়ী, এখানে পরিকল্পিতভাবে স্থানীয়দের বাদ দিয়ে বাইরের শ্রমিকদের নেওয়া হচ্ছে, যা রাজ্য সরকারের ‘স্থানীয় অগ্রাধিকার’ নীতির পরিপন্থী।৫৫ জন শ্রমিক ছাঁটাই হওয়ার ঘটনাটি শুধু কয়েকটি পরিবারকে নয়, গোটা এলাকাকে প্রভাবিত করছে। অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা, সামাজিক অস্থিরতা এবং শিক্ষা ও চিকিৎসার মতো মৌলিক চাহিদার ওপর এর প্রভাব পড়বে বলেই আশঙ্কা করছেন সমাজকর্মীরা।বিক্ষোভকারীরা দাবি তুলেছেন যতক্ষণ না পর্যন্ত ছাঁটাই শ্রমিকদের পুনর্বহাল করা হচ্ছে, ততক্ষণ তাঁরা আন্দোলন চালিয়ে যাবেন। প্রশ্ন উঠছে, প্রশাসন ও খনি কর্তৃপক্ষ এই সংকট সমাধানে উদ্যোগ নেবে কিনা।যদি শ্রমিকদের দাবি উপেক্ষিত হয়, তাহলে ভবিষ্যতে আরও বৃহত্তর আন্দোলনের সম্ভাবনা রয়েছে। এবং তা শুধু চিনাকুড়ি নয়, গোটা কয়লাঞ্চলে ছড়িয়ে পড়তে পারে।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments