...
Monday, May 5, 2025
Google search engine
Homeঅন্যান্যশৌচালয়ে পাকিস্তানি পতাকা লাগিয়ে প্রতিবাদ

শৌচালয়ে পাকিস্তানি পতাকা লাগিয়ে প্রতিবাদ

Protest by putting Pakistani flag in toilet:সকালের ব্যস্ত সময়ে হঠাৎই চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়ে উত্তর ২৪ পরগনার বারাসাত শহরে, যখন সাধারণ মানুষ দেখতে পান শহরের বিভিন্ন সুলভ শৌচালয়ে ঝুলছে পাকিস্তানের জাতীয় পতাকা—তাও আবার তার উপরে স্পষ্ট করে লেখা “পাকিস্তান মুর্দাবাদ”। এই অভিনব প্রতিবাদটি আয়োজন করেছিল বারাসাত নাগরিক সমাজ, যারা একজোট হয়ে কাশ্মীরের পেহেলগাঁও-এ সদ্য ঘটে যাওয়া নৃশংস জঙ্গি হামলার বিরুদ্ধে এই ব্যতিক্রমী প্রতিবাদের পথ বেছে নেন। সুলভ শৌচালয় এবং জাতীয় সড়কের পাশে শৌচাগারে পাকিস্তানি পতাকা লাগানোর মাধ্যমে তারা বার্তা দিতে চেয়েছেন—“সন্ত্রাসবাদকে আশ্রয় দেওয়া দেশকে বর্জন করুন, ঘৃণার প্রতীক হোক অবমাননার জায়গায়!” বারাসাত কলোনি মোড় সংলগ্ন সুলভ শৌচালয় ছিল এই প্রতিবাদের প্রধান কেন্দ্রবিন্দু। সেখানে সাধারণ মানুষ, সংবাদমাধ্যম, পথচলতি যাত্রী এবং প্রতিবাদকারীরা ভিড় জমান এই অভিনব প্রতিবাদের সাক্ষী হতে। পতাকার রঙে সবুজ আর চাঁদ তারা থাকলেও, সেই পতাকার নিচে বড় হরফে লেখা ছিল ‘মুর্দাবাদ’। সাদা কালিতে লেখা এই বার্তা যেন ভারতবাসীর প্রতিটি রক্তকণিকায় জ্বালা ধরিয়ে দিয়েছে, বিশেষত কাশ্মীরের নিরাপত্তা বাহিনীর উপর হওয়া বর্বরোচিত হামলার প্রেক্ষাপটে। পেহেলগাঁওয়ের ঘটনায় ইতিমধ্যেই শহীদ হয়েছেন একাধিক জওয়ান, আহতের সংখ্যাও নেহাত কম নয়। সেনাবাহিনী সূত্রে জানা গেছে, এই হামলার পেছনে জইশ-ই-মহম্মদ গোষ্ঠীর হাত থাকতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। বারাসাতের নাগরিক সমাজ বলছে, “কেবল মোমবাতি জ্বালিয়ে প্রতিবাদ নয়, আমরা চাই পাকিস্তানকে যেন ভারতবাসী প্রতিদিন ঘৃণার চোখে দেখে—এই বার্তাই দিতে আমরা এইভাবে শৌচালয়ে পাকিস্তানি পতাকা লাগিয়েছি।

” তাঁদের মতে, শৌচালয় হল সামাজিকভাবে সবচেয়ে অবহেলিত এবং নিকৃষ্ট জায়গা—সেই জায়গায় পাকিস্তানের পতাকা লাগানো মানে তাদের প্রতি ঘৃণার প্রকাশকেই সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছে দেওয়া। এই কাজের জন্য প্রশাসনিক অনুমতি না থাকলেও, এখনও পর্যন্ত কোনো আইনি বাধা আসেনি। বরং স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশ এই প্রতিবাদকে ‘সাহসী ও যুগোপযোগী’ বলেই অভিহিত করেছেন। বছর পঁচিশের বাসিন্দা অনির্বাণ সাহা বলেন, “সত্যি বলতে কি, যারা সন্ত্রাসবাদীদের আশ্রয় দেয়, তাদের পতাকার স্থান শৌচাগারেই হওয়া উচিত। প্রতিবাদের ভাষা পাল্টাতে হবে, নাহলে কেউ গুরুত্ব দেয় না।” তবে এই প্রতিবাদ নিয়ে সমাজে যেমন প্রশংসা হয়েছে, তেমনই উঠেছে নানা বিতর্কও। অনেকেই বলছেন, পাকিস্তানি পতাকা ব্যবহার করা মানেই তাদের প্রতি গুরুত্ব দেওয়া। আবার অনেকে মনে করছেন, এর ফলে দেশের মধ্যে সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা ছড়াতে পারে। সমাজবিজ্ঞানী ডঃ শুভদীপ সেন জানাচ্ছেন, “এই ধরনের প্রতিবাদ যতই আবেগপ্রবণ হোক না কেন, এটি একটি বৃহত্তর সামাজিক মনোভাবের প্রতিফলন। এটা দেখায় যে, সাধারণ মানুষও আর চুপ করে থাকতে রাজি নয়।” অন্যদিকে পুলিশ ও প্রশাসনের পক্ষ থেকে এখনো পর্যন্ত কোনও আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। তবে সূত্রের খবর, ভিডিও ফুটেজ ও সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হওয়া ছবিগুলি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। ইতিমধ্যে বারাসাত মডেল থানা পুরো ঘটনাটির পর্যবেক্ষণ শুরু করেছে। তবে নাগরিক সমাজের এই উদ্দীপনা থামেনি।

Screenshot 2025 05 05 151422

তাঁরা জানিয়েছেন, আগামী সপ্তাহে আরও বড় আকারে প্রতিবাদ সংগঠিত হবে বারাসাত ময়দানে, যেখানে শহরের প্রায় এক হাজার মানুষ পাকিস্তান বিরোধী শপথ গ্রহণ করবেন। শুধু বারাসাত নয়, বারাকপুর, হাবরা, অশোকনগর সহ বিভিন্ন শহরেও এই প্রতিবাদের প্রভাব পড়েছে। অনেকেই সোশ্যাল মিডিয়ায় নিজেদের প্রোফাইল পিকচারে “#PakistanMurdaBaad” যুক্ত করছেন, কেউ কেউ আবার নিজেদের বাড়ির শৌচাগারের দরজায় “No Entry for Terror Sympathizers” লিখে পোস্টারও ঝুলিয়ে দিচ্ছেন। পুরো ঘটনাটি ভারত-পাকিস্তান সম্পর্কের বর্তমান রাজনৈতিক বাস্তবতাকেও তুলে ধরে। যেখানে একদিকে কূটনৈতিক স্তরে আলোচনা চলছে, অন্যদিকে সাধারণ মানুষ নিজেদের মতো করে প্রতিরোধ গড়ে তুলছেন। পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী দাবি করলেও যে তারা সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে, বাস্তব চিত্র অন্য কিছু বলছে—সেটা পেহেলগাঁও হামলা ফের একবার চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল। এই প্রতিবাদ থেকে সমাজে দুইটি স্পষ্ট বার্তা পাওয়া যাচ্ছে—এক, সাধারণ মানুষ এখন অনেক বেশি সজাগ ও প্রতিবাদী। দুই, প্রতিবাদের ভাষা বদলে যাচ্ছে—আর শুধু মিছিলে বা পোস্টারে নয়, বাস্তবের দৃশ্যেও তা প্রতিফলিত হচ্ছে। এই ঘটনাটি হয়তো একদিন মিডিয়া পাতার নিচের অংশে স্থান পাবে, কিন্তু মানুষের মনের উপর যে দাগ রেখে গেল, সেটি মুছতে সময় লাগবে অনেক। বারাসাতের একজন প্রবীণ নাগরিক অশোক ভট্টাচার্য বলেন, “যদি প্রতিবাদ করতে হয়, তবে এমনভাবে করতে হবে যাতে সেটা চোখে লাগে। এই ছেলেরা সাহস দেখিয়েছে, কারণ তারা বুঝেছে—নিরবতা মানেই সম্মতি। আর পাকিস্তানের মতো দেশকে এখন চুপ করে মেনে নেওয়া চলবে না।”

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments

Seraphinite AcceleratorOptimized by Seraphinite Accelerator
Turns on site high speed to be attractive for people and search engines.