Thursday, April 24, 2025
Google search engine
Homeবিনোদনতারকাআসছে প্রিয়াঙ্কা তথাগত র সিনেমা ভামিনী

আসছে প্রিয়াঙ্কা তথাগত র সিনেমা ভামিনী

Priyanka Tathagata’s upcoming movie Bhamini:বাংলা সিনেমার ভাণ্ডারে যখন বাণিজ্যিকতা আর শহুরে গল্পের জোয়ার, তখন যেন এক অন্যরকম হাওয়া নিয়ে আসতে চলেছে একটি নতুন ছবি – ‘ভামিনী’। নামটা শুনলেই একরকম কৌতূহল জাগে, আর সেই কৌতূহলই যেন গল্পের মূলে। এই ছবি শুধু একটা ক্রাইম থ্রিলার নয়, বরং এটা একপ্রকার সাহসী উদ্যোগ – যেখানে দক্ষিণ দিনাজপুরের বিস্মৃতপ্রায় লোকনৃত্য ‘ভমিরা’-কে তুলে ধরা হয়েছে এক নতুন রূপে, রোমাঞ্চকর গল্পের মোড়কে। পরিচালক তথাগত মুখার্জি এবং অভিনেত্রী প্রিয়াঙ্কা সরকারের এই ছবি শুধু বিনোদন নয়, বরং একটা সামাজিক, সাংস্কৃতিক বার্তাও বহন করে নিয়ে আসছে। অনেকেই ভাবছেন, আজকের দিনে দাঁড়িয়ে যেখানে দর্শক অ্যাকশন, রোমান্স বা থ্রিলারের খোঁজে থাকে, সেখানে লোকসংস্কৃতি কীভাবে গৃহীত হবে? কিন্তু ভামিনী দেখিয়ে দেবে, আসলে এই মাটির সঙ্গে মিশে থাকা সংস্কৃতি আর গল্প মিললে তা কতটা প্রাণবন্ত হতে পারে।

আসছে প্রিয়াঙ্কা তথাগত র সিনেমা ভামিনী

‘ভামিনী’-তে প্রিয়াঙ্কা সরকার অভিনয় করছেন এক সাহসী ও অনুসন্ধিৎসু নারীর ভূমিকায়, যে তার নিজস্ব কৌতূহল থেকে একটি রহস্যের খোঁজে নেমে পড়ে। প্রিয়াঙ্কার এই চরিত্রটা একদমই সাধারণ কোনও নারীর নয় – বরং সে সাহস, আবেগ আর যুক্তির এক আশ্চর্য মিশেল। প্রিয়াঙ্কা নিজেও এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, “এই চরিত্রটা আমার জীবনের অন্যতম চ্যালেঞ্জিং রোল। কারণ একজন নারীর ভিতরের ভয় আর বাইরের সাহস – দুটোই একসঙ্গে ফুটিয়ে তোলা সহজ নয়।” তার বিপরীতে রয়েছেন তথাগত মুখার্জি, যিনি নিজেও একজন পরিচালক হিসেবে খ্যাতিমান, এবং অভিনয়ের ক্ষেত্রে তার সাবলীলতা দর্শকদের মন কাড়বেই। সিনেমাটিতে আরও দেখা যাবে উমাকান্ত পাটিল সহ একাধিক প্রতিভাবান অভিনেতাকে, যাঁরা প্রত্যেকেই গল্পে আলাদা মাত্রা যোগ করছেন।

গল্পের পটভূমি দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার প্রত্যন্ত গ্রাম। সেই গ্রামের মাটি, গন্ধ, সংস্কৃতি, ভাষা, লোকনৃত্য সবকিছুই এই সিনেমার প্রাণ। ‘ভমিরা’ – এই নাচটির নাম হয়তো অনেকেই শোনেননি। এটা মূলত একধরনের মুখোশনৃত্য, যা সাধারণত গ্রামীণ মেলায় বা ধর্মীয় উৎসবে পরিবেশিত হয়। এই নাচে থাকে রহস্য, ভয়, রঙ এবং একটি অদ্ভুত আধ্যাত্মিকতা। সেই ভমিরা-ই এখানে হয়ে উঠেছে রহস্য উদ্ঘাটনের মাধ্যম। বলা যায়, এই সিনেমায় ভমিরা শুধু নাচ নয়, বরং একটা চরিত্রের মতো – যেটা গোটা গল্পের চাবিকাঠি।

এই সিনেমার মুক্তি নিয়ে দক্ষিণ দিনাজপুর জেলায় এখন তুমুল উত্তেজনা। কারণ অনেকেই মনে করছেন, এই সিনেমার মাধ্যমে তাঁদের অঞ্চল, সংস্কৃতি, ভাষা ও পরিচয় এক নতুন করে আলোর সামনে আসবে। স্থানীয় লোকশিল্পী মদন কর্মকার বললেন, “আমরা তো ভাবতাম আমাদের ভমিরা আর কেউ দেখবে না। এখন সিনেমার মাধ্যমে যদি এটা নতুন প্রজন্ম দেখে, তবে এটাই তো আমাদের সংস্কৃতির জয়।” একইসঙ্গে কলেজপড়ুয়া মৌসুমি সাহা বলেন, “আমরা তো ছোটবেলায় দেখতাম এই নাচ। এখন সিনেমায় দেখব – এটা ভাবতেই ভালো লাগছে। প্রিয়াঙ্কা সরকারের মতো অভিনেত্রী আমাদের অঞ্চলের গল্প নিয়ে কাজ করছেন – এটা গর্বের।”

পরিচালক তথাগত মুখার্জি এই সিনেমা নিয়ে জানালেন, “আমি চেয়েছি একটা রহস্যের গল্প বলার পাশাপাশি বাংলার হারিয়ে যাওয়া সংস্কৃতিকে নতুন রূপে তুলে ধরতে। শুধু কলকাতা বা শহরকেন্দ্রিক গল্প নয়, গ্রামের ভিতরে যে জীবনের টানাপোড়েন, সেগুলো নিয়েও আমরা গল্প বলতে পারি।” সত্যি বলতে কী, এই সিনেমা হয়তো বাংলা সিনেমার ভাষাকেই কিছুটা বদলে দিতে চলেছে। কারণ এটা শুধুই একটি থ্রিলার নয়, এটি একটি কালচারাল থ্রিলার, যেখানে গল্প, সংগীত, নৃত্য, সংস্কৃতি – সব একসঙ্গে মিশে গেছে।

1719317693 priyanka sar

‘ভামিনী’ এখন মুক্তির অপেক্ষায়। জানা যাচ্ছে, এই সিনেমাটি রাজ্যের বিভিন্ন প্রেক্ষাগৃহে একযোগে মুক্তি পাবে। সঙ্গে থাকবে কিছু বিশেষ প্রদর্শনী দক্ষিণ দিনাজপুরে – যেখান থেকে এই গল্পের উত্থান। সোশ্যাল মিডিয়াতেও ইতিমধ্যেই ঝড় তুলেছে এই সিনেমার ট্রেলার। ট্রেলারে দেখা গেছে, প্রিয়াঙ্কার ইনটেন্স এক্সপ্রেশন, গ্রামবাংলার মাটি আর মুখোশে ঢাকা রহস্য – সব মিলে যেন দর্শককে টানছে এক নতুন অভিজ্ঞতার দিকে।

এই সিনেমা ঘিরে ভবিষ্যতে বাংলা সিনেমা ইন্ডাস্ট্রিতে একটা পরিবর্তন আসার সম্ভাবনা রয়েছে। নতুন পরিচালকরা বুঝতে পারবেন, শুধু কমার্শিয়াল এলিমেন্ট নয় – বরং লোকসংস্কৃতি, বাস্তবতা আর গল্পের মিশেলও দর্শকদের আকর্ষণ করতে পারে। একইসঙ্গে দর্শকরাও নতুন ধরণের কন্টেন্টের সঙ্গে পরিচিত হবেন, যা একদিকে যেমন বিনোদন দেবে, তেমনি শিক্ষাও দেবে। ‘ভামিনী’-র মাধ্যমে যদি ‘ভমিরা’ বা অন্যান্য লোকনৃত্য আবার জীবন্ত হয়ে ওঠে, তবে তা বাংলার সংস্কৃতির জন্য এক বড় সাফল্য বলেই ধরা যায়।

সবশেষে বলতেই হয়, ‘ভামিনী’ শুধুই একটি সিনেমা নয় – এটা এক ধরনের সাংস্কৃতিক প্রতিবাদের ভাষা, এক ধরনের শিল্পগত সাহসিকতা। এই সিনেমা যদি দর্শকের ভালোবাসা পায়, তাহলে ভবিষ্যতে আরও অনেক পরিচালক, অভিনেতা এগিয়ে আসবেন এই ধরণের গল্প নিয়ে কাজ করতে। বাংলার লোকসংস্কৃতি, গ্রামীণ জীবন আর আধুনিক গল্প বলার কৌশল – সব মিলিয়ে যদি একটা নতুন ধারা তৈরি হয়, তাহলে বাংলা সিনেমার আগামী দিন যে আরও সমৃদ্ধ হবে, তাতে কোনও সন্দেহ নেই।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments