Monday, April 14, 2025
Google search engine
HomeDurgapujaপুজো প্যান্ডেলে শুধুই রোবটিক যন্ত্র! অভিনব থিমে চমক বর্ধমানে

পুজো প্যান্ডেলে শুধুই রোবটিক যন্ত্র! অভিনব থিমে চমক বর্ধমানে

Pooja pandals only robotic devices! Amaze with innovative themes: বর্ধমানের দুর্গাপূজা মানেই চমকের ওপর চমক। প্রতিবছরই নতুন কিছু থিমের মাধ্যমে পুজো উদ্যোক্তারা দর্শনার্থীদের মন কেড়ে নেন। তবে এবারের পুজোতে বর্ধমানের তেলিপুকুর সুকান্ত স্মৃতি সংঘের থিম একেবারেই অন্যরকম। এবারের থিমের নাম করা হয়েছে ‘যন্ত্রের বন্দনা, তবে যন্ত্রেই যন্ত্রনা’। পুরো প্যান্ডেল জুড়ে সাজানো হয়েছে রোবটিক যন্ত্র এবং বিভিন্ন আধুনিক প্রযুক্তির সাহায্যে। উদ্যোক্তাদের মতে, এই থিমের মাধ্যমে বর্তমান সামাজিক পরিস্থিতির প্রতিফলন ঘটানো হয়েছে, যেখানে আজকের শিশুরা আর খেলার মাঠে যায় না, বরং ফোন, ল্যাপটপ, ইন্টারনেট নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে।

এবারের প্যান্ডেলে প্রবেশ করলেই দেখা যাবে রোবটদের বিভিন্ন কাজে ব্যস্ত থাকা। কিছু রোবট বাচ্চাদের মতো খেলার চেষ্টা করছে, আবার কিছু রোবট ঘরের কাজ করছে। পুরো থিমের মূল উদ্দেশ্যই হল, বর্তমান প্রজন্ম কিভাবে যন্ত্রনির্ভর হয়ে পড়েছে এবং এর ফলে সমাজের কি পরিবর্তন এসেছে। উদ্যোক্তাদের একজন, অরুণ পাল বলেন, “আমরা চাই দর্শনার্থীরা এই থিমের মাধ্যমে একটু চিন্তা করুক, আমরা কি সত্যিই যন্ত্রের ওপর এত বেশি নির্ভরশীল হয়ে পড়েছি?” তার মতে, বর্তমান যুগের শিশুরা আর মাঠে গিয়ে খেলা করতে চায় না, বরং তারা ফোনে গেম খেলায় বেশি আগ্রহী।

Screenshot 2024 10 04 213934

প্যান্ডেলের প্রতিটি কোণেই রোবটিক যন্ত্রের ব্যবহার চোখে পড়বে। ছোট ছোট রোবট থেকে শুরু করে বড় রোবট, যারা বাড়ির বিভিন্ন কাজ করছে, এ যেন এক আধুনিক প্রযুক্তির জগত। দর্শনার্থীরা যখন প্যান্ডেলে প্রবেশ করবেন, তারা দেখতে পাবেন কিভাবে যন্ত্রনির্ভর সমাজ তৈরি হয়েছে এবং এই পরিবর্তন আমাদের উপর কেমন প্রভাব ফেলছে। উদ্যোক্তাদের মতে, শুধু শিল্পের দিক দিয়ে নয়, পুজোর মাধ্যমে সমাজকে একটি গুরুত্বপূর্ণ বার্তা দেওয়া হচ্ছে।

এই থিমের মাধ্যমে উদ্যোক্তারা আরও একবার বুঝিয়ে দিয়েছেন, তারা শুধু আনন্দের জন্য পুজো করেন না, বরং সমাজের প্রতি তাদের একটি দায়বদ্ধতাও রয়েছে। যেমন পুজো উদ্যোক্তা সমরেশ বাগচী বললেন, “আমরা চেয়েছি এমন একটি থিম যা শুধু চোখের আরাম নয়, মনেরও খোরাক দেয়। আজকের সমাজে আমরা যন্ত্রের ওপর কতটা নির্ভরশীল, তা সবাইকে একটু ভাবতে হবে।” তার মতে, দর্শনার্থীরা এই প্যান্ডেল দেখে শুধু আনন্দ পাবেন না, বরং সমাজের পরিবর্তন সম্পর্কে একটু চিন্তা করবেন।

তবে এই প্যান্ডেলের থিমের পেছনে রয়েছে কঠিন পরিশ্রম। পুরো প্যান্ডেল তৈরি করতে সময় লেগেছে প্রায় তিন মাস, যেখানে একাধিক প্রযুক্তিবিদ এবং শিল্পী একসাথে কাজ করেছেন। উদ্যোক্তারা জানিয়েছেন, প্রযুক্তির সঙ্গে শিল্পের এই মেলবন্ধনকে সবাই সাধুবাদ জানাচ্ছেন। বর্ধমানের সুকান্ত স্মৃতি সংঘের পুজো সবসময়ই ব্যতিক্রমী কিছু করে থাকে, আর এবারের থিমও তার ব্যতিক্রম নয়। পুজো কমিটির সাধারণ সম্পাদক প্রণব সাহা বলেন, “প্রতি বছর আমরা নতুন কিছু করার চেষ্টা করি। এবারের থিম একেবারেই আলাদা, আমরা আশা করছি দর্শনার্থীরা এটি পছন্দ করবেন।”

এই প্যান্ডেলের থিম নিয়ে স্থানীয়রা বেশ উচ্ছ্বসিত। অনেকে মনে করছেন, বর্ধমানের এই পুজো আবারও জেলার সেরা পুজো হিসেবে পুরস্কৃত হবে। স্থানীয় ব্যবসায়ী রতন দাস বলেন, “প্রতিবছর এই পুজো কমিটির থিম আমাদের মুগ্ধ করে। এবারের থিমও নিশ্চয়ই অনেক পুরস্কার পাবে।” দর্শনার্থীরাও এই প্যান্ডেলের থিম দেখে মুগ্ধ হচ্ছেন। অনেকে মনে করছেন, এই ধরনের থিমগুলো শুধু আনন্দই দেয় না, বরং সমাজের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বার্তাও বহন করে।

Screenshot 2024 10 04 213947 1

দুর্গাপূজা শুধুই ধর্মীয় উৎসব নয়, এটি বাঙালির সংস্কৃতি এবং ঐতিহ্যের অন্যতম পরিচয়। প্রতিবছর দুর্গাপূজা মানেই নতুন নতুন থিম, নতুন সৃষ্টির উন্মোচন। এবারের পুজোও তার ব্যতিক্রম নয়। প্রযুক্তি আর শিল্পের মেলবন্ধন দেখতে চাইলে তেলিপুকুর সুকান্ত স্মৃতি সংঘের পুজো অবশ্যই দর্শনীয়।

এই থিমের ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা নিয়ে অনেকেই আশাবাদী। উদ্যোক্তারা মনে করছেন, প্রযুক্তির এমন ব্যবহার আগামী দিনে আরও পুজো কমিটি গ্রহণ করবে। এই পুজোর মাধ্যমে তারা সমাজকে একটি গুরুত্বপূর্ণ বার্তা দিতে পেরেছেন, আর সেটাই তাদের কাছে সবচেয়ে বড় অর্জন। উদ্যোক্তারা আরও জানিয়েছেন, ভবিষ্যতে তারা আরও নতুন নতুন থিম নিয়ে কাজ করতে চান, যেখানে সমাজের বিভিন্ন সমস্যা তুলে ধরা হবে। দর্শনার্থীরা এই প্যান্ডেল দেখে শুধু আনন্দ পাবেন না, বরং বর্তমান সমাজের বিভিন্ন দিক নিয়ে চিন্তাও করবেন।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments