Police give chocolates to drivers who wear helmets:সেফ ড্রাইভ সেভ লাইফ কর্মসূচির আওতায় কাকদ্বীপ থানার পুলিস চালু করেছে এক অভিনব উদ্যোগ। মাথায় হেলমেট পরে নিরাপদে বাইক চালানোর অভ্যাস গড়ে তুলতে এবং সচেতনতা বাড়াতে শনিবার সকাল থেকে কাকদ্বীপের চৌরাস্তার মোড়ে বাইক চালকদের জন্য বিশেষ প্রচার চালানো হয়। তবে এই প্রচারের ধরণ একটু অন্যরকম। যারা হেলমেট পরে বাইক চালাচ্ছেন, তাদের ধন্যবাদ জানিয়ে পুলিস কর্মীরা হাতে তুলে দিচ্ছেন একটি করে চকলেট। এই ছোট কিন্তু অনন্য উদ্যোগ শুধু বাইক চালকদের মধ্যে উচ্ছ্বাসই বাড়ায়নি, বরং হেলমেট পরার গুরুত্ব নিয়েও একটা নতুন বার্তা ছড়িয়ে দিয়েছে।
কেন এই উদ্যোগ?
সড়ক দুর্ঘটনা রোধে হেলমেটের গুরুত্ব যে অপরিসীম, তা বারবার বললেও অনেক মানুষ এখনও বিষয়টিকে গুরুত্ব দেন না। কাকদ্বীপ থানার তরফে সেফ ড্রাইভ সেভ লাইফ কর্মসূচির অধীনে চালু হওয়া এই চকলেট বিতরণ কর্মসূচি মূলত সেই মানুষদের সচেতন করতেই নেওয়া হয়েছে। পুলিসের আশা, প্রশংসা এবং চকলেটের মাধ্যমে বাইক চালকদের মধ্যে হেলমেট পরার প্রতি ইতিবাচক মনোভাব তৈরি হবে।
কাকদ্বীপ থানার ওসি অনিরুদ্ধ ঘোষ বলেন, “প্রচলিত শাস্তিমূলক ব্যবস্থার বাইরে গিয়ে আমরা এই উদ্যোগ নিয়েছি। আমরা চাই মানুষ হেলমেট পরার গুরুত্ব নিজেরাই বুঝুক এবং আনন্দের সঙ্গে তা অনুসরণ করুক। প্রতিদিন প্রচুর দুর্ঘটনা ঘটে, এবং তার মধ্যে অনেক প্রাণ হারায় শুধুমাত্র হেলমেট না পরার কারণে। আমাদের লক্ষ্য হল সেই সংখ্যা কমানো।”
বাইক চালকদের প্রতিক্রিয়া
এদিন চৌরাস্তার মোড় দিয়ে যারা বাইক চালিয়ে যাচ্ছিলেন এবং মাথায় হেলমেট ছিল, তারা পুলিসের এই অভিনব উদ্যোগ দেখে বেশ অবাক এবং খুশি হন। বাইক চালক রাজীব দাস বলেন, “এমন উদ্যোগ খুব ভালো। আমরা সাধারণত পুলিসকে শাস্তি দিতে দেখি। কিন্তু এখানে প্রশংসা করার এই পদ্ধতি সত্যিই অন্যরকম। আশা করি, এতে হেলমেট না পরা মানুষেরাও সচেতন হবে।”
অন্য এক বাইক চালক অরিন্দম পাল বলেন, “আমি প্রতিদিন হেলমেট পরে বাইক চালাই। আজ যখন পুলিস চকলেট দিল এবং ধন্যবাদ জানাল, তখন ভালো লাগল। মনে হলো, নিয়ম মেনে চলার একটা প্রাপ্তি রয়েছে।”
যারা হেলমেট পরেননি, তাদের জন্যও বার্তা
এই উদ্যোগ শুধুমাত্র হেলমেট পরা বাইক চালকদের পুরস্কৃত করতেই নয়, বরং যারা হেলমেট পরেননি, তাদের সচেতন করতেও নেওয়া হয়েছে। যারা হেলমেট ছাড়াই বাইক চালাচ্ছিলেন, তাদের থামিয়ে পুলিস সদস্যরা নিয়ম না মানার ঝুঁকি সম্পর্কে বুঝিয়েছেন। সড়ক দুর্ঘটনায় হেলমেটের গুরুত্ব নিয়ে নানা পরিসংখ্যান তুলে ধরা হয়েছে এবং সবাইকে নিয়ম মেনে চলার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে।
পুলিস সদস্যদের হাতে ছিল বিভিন্ন ধরনের প্ল্যাকার্ড। তাতে লেখা ছিল – “হেলমেট পরুন, জীবন বাঁচান,” “আপনার পরিবার আপনার অপেক্ষায়,” “সেফ ড্রাইভ, সেভ লাইফ।” এর মাধ্যমে সাধারণ মানুষ এবং বাইক চালকদের কাছে সরাসরি বার্তা পৌঁছে দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে।
হেলমেটের গুরুত্ব ও সড়ক দুর্ঘটনার পরিসংখ্যান
ভারতে প্রতি বছর হাজার হাজার মানুষ সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারান। তাদের মধ্যে একটা বড় অংশের মৃত্যু হয় মাথায় চোট লাগার কারণে। গবেষণায় দেখা গেছে, সঠিক নিয়ম মেনে হেলমেট পরলে ৭০ শতাংশ দুর্ঘটনার ক্ষেত্রে মৃত্যু এড়ানো সম্ভব। পশ্চিমবঙ্গ সরকার সেফ ড্রাইভ সেভ লাইফ কর্মসূচি চালু করে সড়ক দুর্ঘটনা কমানোর জন্য নানা উদ্যোগ নিয়েছে। এই উদ্যোগ তারই অংশ।
উৎসবের মতো পরিবেশ
চকলেট পাওয়ার আনন্দে শুধু বাইক চালকরাই খুশি হননি, আশপাশের মানুষরাও এই উদ্যোগকে উৎসবের মতো দেখেছেন। অনেকেই মোবাইলে ছবি তুলেছেন এবং ভিডিও করেছেন। কেউ কেউ বলেছেন, “এমন উদ্যোগ আরও বেশি বেশি হলে মানুষ নিয়ম মানতে আগ্রহী হবে।”
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা
কাকদ্বীপ থানার পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, এই উদ্যোগ সাময়িক নয়। আগামী দিনেও এই ধরনের উদ্যোগ চালিয়ে যাওয়া হবে। শুধু চকলেট নয়, আরও নানা রকম পুরস্কার বিতরণ এবং সচেতনতামূলক প্রচার চালানো হবে বলে জানিয়েছেন থানার ওসি। তার মতে, ভয় দেখিয়ে নয়, বরং ভালোবাসা আর সম্মানের মাধ্যমে মানুষকে নিয়ম মানতে উদ্বুদ্ধ করাই আসল লক্ষ্য।
উপসংহার
কাকদ্বীপ থানার এই উদ্যোগ দেখিয়ে দিল, ছোট ছোট ইতিবাচক পদক্ষেপ বড় পরিবর্তন আনতে পারে। হেলমেট পরা বাধ্যতামূলক হলেও অনেকেই নিয়মটি মানেন না। কিন্তু প্রশংসা এবং উৎসাহের মাধ্যমে এই প্রবণতাও বদলানো সম্ভব। চকলেটের মতো সাধারণ একটা জিনিস দিয়ে কাকদ্বীপ থানার পুলিস যে সচেতনতার আলো ছড়াচ্ছে, তা নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয় এবং অন্য জায়গার পুলিস প্রশাসনের জন্যও দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।