Tuesday, October 7, 2025
Google search engine
Homeটপ 10 নিউসঘুমন্ত কন্ট্রোলারের কারণে করসিকার আকাশে উড়োজাহাজের চক্কর

ঘুমন্ত কন্ট্রোলারের কারণে করসিকার আকাশে উড়োজাহাজের চক্কর

Planes circle Corsica skies due to sleeping controller: ফ্রান্সের করসিকার আকাশে ঘটে যাওয়া ঘটনাটি যেনো সত্যিই এক সিনেমার দৃশ্য, যেটা অনেক যাত্রীর হৃদয় কাঁপিয়ে দিয়েছে, আবার নিরাপদ অবতরণের মাধ্যমে শেষ পর্যন্ত স্বস্তি ফিরিয়েছে। গত মঙ্গলবার রাতে প্যারিস থেকে ছেড়ে আসা এয়ার করসিকার একটি এয়ারবাস A320 মডেলের যাত্রীবাহী উড়োজাহাজ আজাক্সিওর নেপোলিয়ন বোনাপার্ট বিমানবন্দরে নামতে যাচ্ছিল, কিন্তু হঠাৎ এমন এক অপ্রত্যাশিত পরিস্থিতির সৃষ্টি হয় যা যাত্রী ও পাইলট সবার মনে আতঙ্ক সৃষ্টি করে। বিমান যখন অবতরণের প্রস্তুতি নিচ্ছিল তখন কন্ট্রোল টাওয়ারের সঙ্গে বারবার যোগাযোগ করা হলেও কোনো সাড়া মিলছিল না, যার ফলে বিমানটি বাধ্য হয়ে দীর্ঘ ১৮ মিনিট আকাশে চক্কর দিতে থাকে।

পাইলটের চোখে তখন আতঙ্ক, যাত্রীদের চোখে অনিশ্চয়তা, আর সবাই ভাবছিল—“কী হচ্ছে, কেন নামতে দিচ্ছে না বিমানকে?” পরে জানা যায়, বিমানবন্দরের একমাত্র দায়িত্বপ্রাপ্ত এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোলার নিজের ডেস্কেই গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন হয়ে পড়েছিলেন। অবস্থা এমন দাঁড়ায় যে গ্রাউন্ড স্টাফরা নিজে চেষ্টা করেও যোগাযোগ করতে পারেননি, অবশেষে অগ্নিনির্বাপণ বাহিনী ও পুলিশ গিয়ে কন্ট্রোল টাওয়ারে ঢুকে দেখেন কন্ট্রোলার গভীর ঘুমে। এই সময়ের মধ্যে বিমানের ভেতরে উপস্থিত শতাধিক যাত্রীর মনে একমাত্র প্রশ্ন ছিল—আমরা কি নিরাপদে নামতে পারব? ভাগ্য ভালো যে শেষ পর্যন্ত কোনো বড় দুর্ঘটনা হয়নি, কন্ট্রোলারকে জাগানো হয়, রানওয়ে লাইট জ্বালানো হয়, এবং বিমানটি নিরাপদে অবতরণ করে।

Z

ঘটনাটি শোনার পর স্থানীয় সংবাদমাধ্যমে পাইলট বলেছেন, “আমার কর্মজীবনে এমন ঘটনা আগে কখনো দেখিনি।” যাত্রীদের অনেকেই পরে জানায়, অবতরণের পরও তাদের মনে শঙ্কা ও অস্বস্তি থেকে গেছে, কারণ যে দেশে বিমান নিরাপত্তা এত গুরুত্ব পায়, সেখানে একজন দায়িত্বশীল কন্ট্রোলার কীভাবে এমন গাফিলতি করতে পারেন তা তাদের বোধগম্য নয়। এই ঘটনার প্রেক্ষিতে ফ্রান্সের বেসামরিক বিমান পরিবহন কর্তৃপক্ষ অবিলম্বে তদন্ত শুরু করেছে। তারা বলছে, কন্ট্রোলার কেন দায়িত্বে থেকে ঘুমিয়ে পড়লেন, এর পেছনে মানসিক চাপ, কাজের দীর্ঘ সময়, বা অন্য কোনো কারণ রয়েছে কি না তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। উল্লেখ্য, ফ্রান্সের এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোলাররা আগে থেকেই অভিযোগ করে আসছেন যে, দীর্ঘক্ষণ ডিউটি, পর্যাপ্ত বিশ্রামের অভাব এবং মজুরির অসামঞ্জস্যতার কারণে তারা ভীষণ মানসিক চাপের মধ্যে থাকেন। অনেক কন্ট্রোলারই জানিয়েছেন, অতিরিক্ত কাজের চাপে ক্লান্তি এতটাই বাড়ে যে দায়িত্বের সময় সজাগ থাকা কঠিন হয়ে পড়ে। এই ঘটনার মাধ্যমে তাদের সেই অভিযোগ নতুন করে সামনে এসেছে।

images?q=tbn:ANd9GcSq79Q3edei1aePUfJ5rdTlTEMwmr2ljsWEUoY09EdqqkMfkBeXBSJUCJaFiM2YnYR6ak8&usqp=CAU

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোলারের কাজ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ কয়েক সেকেন্ডের ভুল সিদ্ধান্তই শত শত প্রাণকে বিপদের মুখে ঠেলে দিতে পারে। ফলে কন্ট্রোলারদের পর্যাপ্ত বিশ্রাম, কাজের পরিবেশের উন্নতি এবং দায়িত্ব পালনের জন্য প্রয়োজনীয় সহায়তা দেওয়া এখন সময়ের দাবি। স্থানীয় মানুষের প্রতিক্রিয়াও এখানে গুরুত্বপূর্ণ। যাত্রীরা জানিয়েছেন, যদিও বিমানটি নিরাপদে নামানো গেছে, কিন্তু সেই ১৮ মিনিট তাদের জীবনের সবচেয়ে বড় দুঃস্বপ্ন হয়ে থাকবে। নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভবিষ্যতে প্রতিটি বড় বিমানবন্দরে বিকল্প কন্ট্রোলার দায়িত্বে রাখা উচিত, যেন এ ধরনের পরিস্থিতি এড়ানো যায়। পাশাপাশি টাওয়ারে পর্যবেক্ষণ বাড়াতে হবে এবং প্রয়োজনে প্রযুক্তিগতভাবে এমন ব্যবস্থা নিতে হবে যাতে কন্ট্রোলার সাড়া না দিলে দ্রুত অ্যালার্ম বেজে ওঠে। এই ঘটনার সঙ্গে মিল খুঁজে পাওয়া যায় আমাদের দেশের পরিস্থিতির সঙ্গেও। যেমন এখনই ভারতীয় উপকূলে বঙ্গোপসাগর ও আরব সাগরে নিম্নচাপের কারণে ভারী বৃষ্টির সতর্কতা জারি করা হয়েছে। প্রকৃতি যেমন হঠাৎ চমকে দেয়, তেমনি মানুষও কখনো কখনো অবহেলার কারণে বিপদের মুখে ফেলে দিতে পারে।

cr 20250918 926e7b47542f19a1

যেভাবে বঙ্গোপসাগরের উপকূলবর্তী এলাকায় মানুষ এখন বন্যা, জলাবদ্ধতা ও ঝড়ের প্রস্তুতি নিচ্ছে, তেমনিভাবেই বিমান চলাচল ব্যবস্থাকেও সবসময় সজাগ থাকতে হবে, কারণ এক মুহূর্তের গাফিলতি অগণিত প্রাণের জীবনে কালো ছায়া ফেলতে পারে। আমরা দেখেছি, করসিকার সেই রাতে বিমান নিরাপদে অবতরণ করেছে, কিন্তু প্রশ্ন থেকেই যায়—যদি পাইলট শেষ পর্যন্ত অন্য শহরে যেতে বাধ্য হতেন? যদি রানওয়ের আলো না জ্বলতো সময়মতো? যদি টাওয়ারে ঢুকে কন্ট্রোলারকে খুঁজে পাওয়া যেত না? তখন কী হতো? এইসব প্রশ্নের উত্তর হয়তো আজ নেই, কিন্তু শিক্ষা আছে স্পষ্ট—মানবীয় ভুল কখনো এয়ার সেফটিতে জায়গা পেতে পারে না। এখন তদন্তের ফলাফলের দিকে সবার চোখ, আর যাত্রীরা আশা করছেন এমন গাফিলতি আর যেন না ঘটে। ফরাসি বিমান পরিবহন কর্তৃপক্ষ আশ্বাস দিয়েছে, কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে এবং ভবিষ্যতে কোনো যাত্রীকে আর এরকম আতঙ্কের মুখে পড়তে হবে না। কিন্তু সবার মনে এখনো সেই ১৮ মিনিটের ভয়াবহ স্মৃতি রয়ে গেছে, যা প্রমাণ করে নিরাপত্তা ব্যবস্থার প্রতিটি স্তরে সজাগতা আর দায়িত্ববোধ কতটা জরুরি।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments