Pilot killed in fighter jet crash, wife-to-be cries as she holds coffin:২ এপ্রিল রাতে গুজরাতের জামনগরের আকাশে যে মর্মান্তিক মুহূর্তটি ঘটেছিল, তা যেন একটা পুরো জাতির হৃদয়ে চিরস্থায়ী দাগ কেটে দিয়ে গেল। ভারতীয় বায়ুসেনার একটি জাগুয়ার যুদ্ধবিমান নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ভেঙে পড়ে, আর সেই দুর্ঘটনায় প্রাণ হারান তরুণ ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট সিদ্ধার্থ যাদব। হরিয়ানার রেওয়াড়ি জেলার বাসিন্দা সিদ্ধার্থ ছিলেন একজন সাহসী, কর্তব্যপরায়ণ অফিসার। মাত্র ২০১৭ সালে তিনি বায়ুসেনায় যোগ দিয়েছিলেন, আর খুব অল্প সময়ের মধ্যেই সহকর্মীদের ভরসা ও প্রিয়জন হয়ে উঠেছিলেন। সিদ্ধার্থের বাবাও ছিলেন বায়ুসেনার কর্মী, সুশীল যাদব। একদিকে পিতার দেশের প্রতি নিবেদিত জীবন, অন্যদিকে পুত্রের শহিদ হওয়া—এই দুই প্রজন্মের ত্যাগ যেন আজ পুরো জাতিকে নাড়া দিয়ে গেল। দুর্ঘটনার ঠিক আগে, ৩১ মার্চ ছুটি কাটিয়ে তিনি ডিউটিতে যোগ দিয়েছিলেন। আর তারও আগে, ২৩ মার্চ, সদ্যই তাঁর বাগদান হয়েছিল গ্রামের মেয়ে সোনিয়ার সঙ্গে। নভেম্বরে বিয়ে হওয়ার কথা ছিল—সবাই খুশিতে ডুবে ছিলেন, নতুন জীবন, নতুন স্বপ্ন নিয়ে প্রস্তুতি চলছিল। কিন্তু বিধাতার অন্য পরিকল্পনা ছিল। ওই রাতে জাগুয়ার বিমানটি উড়ানোর সময় তাতে যান্ত্রিক ত্রুটি দেখা দেয়। বিমানটি আচমকা নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে নিচে পড়তে শুরু করে। তখন যদি তিনি চেতনা হারাতেন বা নিজের জীবন বাঁচানোর চিন্তায় প্যারাসুটে লাফ দিতেন, তবে হয়তো প্রাণে বাঁচতেন। কিন্তু না, সিদ্ধার্থ শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত চেষ্টা করেছিলেন যেন বিমানটি জনবসতিতে না পড়ে, যেন বিমানবন্দর বা সাধারণ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত না হয়।
এই মহান কর্তব্যবোধের দরুন, তিনি নিজের প্রাণ বিসর্জন দেন, আর বাঁচিয়ে দেন শত শত নিরপরাধ মানুষকে। এমন আত্মত্যাগের নজির আমাদের খুব কমই দেখতে হয়। তাঁর সহপাইলটও আহত হন, তবে বর্তমানে তিনি স্থিতিশীল অবস্থায় রয়েছেন বলে জানা গেছে। কিন্তু যিনি ফিরলেন না, তিনি ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট সিদ্ধার্থ—একজন সন্তান, একজন হবু বর, একজন দেশভক্ত সেনা। ৪ এপ্রিল তাঁর মরদেহ যখন কফিনবন্দী হয়ে রেওয়াড়ির গ্রামে এসে পৌঁছায়, তখন যেন পুরো গ্রাম স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিল। চোখে জল নিয়ে সবাই অপেক্ষা করছিলেন শেষ দেখা দেখার জন্য। চারদিক থেকে মানুষ এসে ভিড় জমিয়েছিল, কেউ চুপচাপ, কেউ চোখ মুছছে, কেউ নিঃশব্দে কাঁদছে। গ্রামের মানুষের চোখে জল আর গলায় কান্না যেন বলে দিচ্ছিল, তারা কেবল একজন বীর সেনা হারায়নি, একজন ছেলে, ভাই, বন্ধু, স্বপ্ন দেখানো মানুষকেও হারিয়েছে। কিন্তু এই সব কিছুর মধ্যে সবচেয়ে হৃদয়বিদারক মুহূর্তটি ছিল যখন সিদ্ধার্থের হবু স্ত্রী সোনিয়া কফিন আঁকড়ে ধরে কান্নায় ভেঙে পড়েন। তাঁর কথাগুলো যেন সবার বুকের ভেতরে বাজছিল—”তুমি বলেছিলে আমাকে নিতে আসবে, কিন্তু তুমি নিতে এলে না।” এই একটা লাইনেই যেন হাজারো বেদনার কথা লুকিয়ে ছিল। সেই দৃশ্য দেখে গোটা এলাকা কেঁদে উঠেছিল।

পরিবারের সদস্যরা, বিশেষত সিদ্ধার্থের বাবা সুশীল যাদব, যখন নিজের কাঁধে ছেলের কফিন তোলেন, তখন তিনি আর বাবা নন, তখন তিনি একজন ভাঙা হৃদয়ের মানুষ, যিনি জানেন, ছেলের মৃত্যু দেশের জন্য হলেও, শোকটা ব্যক্তিগত, হৃদয়বিদারক। স্থানীয় প্রশাসন ও বায়ুসেনার পক্ষ থেকেও এই শহিদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানো হয়, বীরের মর্যাদায় তাঁর দাহ সম্পন্ন হয়। কিন্তু প্রশ্ন থেকেই যায়—এই ধরনের দুর্ঘটনা বারবার কেন ঘটছে? যুদ্ধবিমান চালানো অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ কাজ হলেও, আধুনিক প্রযুক্তি থাকার পরেও কেন এতগুলো দুর্ঘটনা? তথ্য অনুযায়ী, গত ৫ বছরে ৫০টির বেশি যুদ্ধবিমান দুর্ঘটনার শিকার হয়েছে। এর মধ্যে অনেক পাইলট প্রাণ হারিয়েছেন। এইসব দুর্ঘটনা কেবল প্রযুক্তিগত ব্যর্থতা নয়, অনেক সময় বাজে রক্ষণাবেক্ষণ, পুরোনো যন্ত্রাংশ বা প্রয়োজনীয় ট্রেনিংয়ের অভাবও একটি বড় কারণ হয়ে দাঁড়ায়। এই দিকটিতে প্রতিরক্ষা মন্ত্রককে আরও গুরুত্ব দেওয়া উচিত, যাতে আমাদের সাহসী সেনারা আর এভাবে অকালে প্রাণ না হারান। শুধু তাই নয়, স্থানীয় এলাকায়ও এর প্রভাব পড়ে। গ্রামের মানুষ এখনো সেই দুঃস্বপ্ন থেকে বেরিয়ে আসতে পারছেন না। স্কুল-কলেজে শোক পালন করা হয়েছে, বন্ধুরা সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করে সিদ্ধার্থের স্মৃতিচারণা করছেন। সোনিয়ার পরিবার একেবারে ভেঙে পড়েছে। তাঁরা শুধু বলছেন, “আমাদের মেয়েটার সব স্বপ্ন ভেঙে গেল।” এই ধরনের ঘটনা আমাদের আবার মনে করিয়ে দেয়, প্রতিদিন যারা আকাশে উড়ে যাচ্ছে, সীমান্ত পাহারা দিচ্ছে, তাঁরা শুধু পেশাদার নন, তাঁরা হলেন আমাদের রক্ষক, আমাদের জন্য জীবন উৎসর্গ করা এক একটি প্রাণ। তাঁদের প্রতি আমাদের কৃতজ্ঞতা, সম্মান আর ভালোবাসা থাকা উচিত প্রতিদিনের জীবনে।