Wednesday, September 3, 2025
Google search engine
Homeবিনোদনপবন কল্যাণের 'ওজি' নিয়ে উন্মাদনা, ইমরান হাশমির তেলুগু ডেবিউতে চমক

পবন কল্যাণের ‘ওজি’ নিয়ে উন্মাদনা, ইমরান হাশমির তেলুগু ডেবিউতে চমক

Pawan Kalyan’s ‘OG’ creates a stir, Emraan Hashmi’s Telugu debut surprises : দক্ষিণ ভারতের রূপালি পর্দা বরাবরই আমাদের চমকে দেয় নানা ধরণের সিনেমা দিয়ে—কখনও মহাকাব্যিক ফ্যান্টাসি, কখনও বা রাজনৈতিক থ্রিলার কিংবা একেবারে খাঁটি অ্যাকশন-ড্রামা। সেই ধারাবাহিকতাতেই এবার হাজির হতে চলেছে সুজিত পরিচালিত বহুল প্রতীক্ষিত তেলুগু চলচ্চিত্র ‘ওজি: (They Call Him OG)’, যেখানে মুখ্য চরিত্রে রয়েছেন দক্ষিণ ভারতের সুপারস্টার পবন কল্যাণ। তাঁর নাম শুনলেই অগণিত ভক্তদের চোখে উজ্জ্বল হয়ে ওঠে প্রত্যাশার আলো। কিন্তু এই ছবির বিশেষ আকর্ষণ আরও একটি—বলিউডের জনপ্রিয় রোম্যান্স হিরো ইমরান হাশমির প্রথমবারের মতো তেলুগু সিনেমায় অভিষেক। আর তিনি হাজির হচ্ছেন একেবারে খলনায়কের ভূমিকায়। সিনেমার দুনিয়ায় এটা এক ঐতিহাসিক মুহূর্ত বললে অত্যুক্তি হবে না। কারণ এতদিন যাঁকে আমরা চিনি পর্দায় নায়কোচিত প্রেমিক হিসেবে, তাঁকে এবার দেখা যাবে রক্ত গরম করা এক ভিলেন রূপে।

২০২২ সালের ডিসেম্বরে আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণার পর থেকেই ‘ওজি’-কে ঘিরে উত্তেজনা তৈরি হয়েছে। ছবির শুটিং শুরু হয় ২০২৩ সালের এপ্রিলে মুম্বাই শহরে, আর প্রতিদিনই শুটিং ফ্লোর থেকে বেরোতে থাকে নানা আপডেট। ভক্তরা চোখ রেখেছেন সামাজিক মাধ্যমে ফাঁস হওয়া ভিডিও, গান কিংবা পোস্টারের দিকে। ডিভিভি এন্টারটেইনমেন্ট প্রযোজিত এই ছবির ভিজ্যুয়াল নন্দনকান্তিক করার জন্য সিনেমাটোগ্রাফিতে আছেন দুই বরেণ্য শিল্পী রবি কে. চন্দ্রন ও মনোজ পরমহংস। সম্পাদনার দায়িত্ব সামলাচ্ছেন নবীন নুলি। আর সঙ্গীতে থাকছেন থামান এস, যার সুর দক্ষিণী সিনেমার ভক্তদের কাছে আগুনের মতো কাজ করে।

ছবিতে পবন কল্যাণের চরিত্রকে ঘিরে রহস্য তৈরি করা হয়েছে। বলা হচ্ছে তিনি থাকবেন এক প্রাক্তন গ্যাংস্টারের ভূমিকায়, যিনি সমাজের অন্ধকার দিকের সঙ্গে লড়াই করে আবারো নিজের জায়গা ফিরে পাওয়ার চেষ্টা করবেন। তাঁর বিপরীতে থাকবেন ইমরান হাশমি, আর সেই সংঘাতই তৈরি করবে ছবির মূল উত্তেজনা। প্রিয়াঙ্কা মোহন অভিনয় করছেন মুখ্য নারী চরিত্রে, যিনি কাহিনিতে এক নতুন মাত্রা যোগ করবেন। পাশাপাশি অর্জুন দাস, শ্রিয়া রেড্ডি, হরিশ উথামান ও প্রকাশ রাজের মতো শক্তিশালী অভিনেতাদের উপস্থিতি সিনেমাকে আরও বেশি সমৃদ্ধ করেছে।

সিনেমার মুক্তির তারিখ নির্ধারণ হয়েছে ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫। ইতিমধ্যেই টিকিট বুকিং-এর আগাম চাহিদা নিয়ে আলোচনা শুরু হয়ে গেছে। দক্ষিণ ভারতে পবন কল্যাণের জনপ্রিয়তা শুধু সিনেমাতেই সীমাবদ্ধ নয়; তিনি রাজনীতির মঞ্চেও সমান প্রভাবশালী। ফলে তাঁর ছবিকে ঘিরে মানুষের উন্মাদনা অন্য স্তরে পৌঁছে যায়। ইমরান হাশমির ভক্তরাও এক নতুন অভিজ্ঞতার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছেন।

এখানে একটা বিশেষ দিক উল্লেখযোগ্য—ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলের দর্শকরা ক্রমেই আঞ্চলিক সিনেমার দিকে ঝুঁকছেন। দক্ষিণী ছবির অ্যাকশন, গল্পকথন এবং ভিএফএক্স এখন বলিউডকেও চ্যালেঞ্জ জানাচ্ছে। ‘বাহুবলী’, ‘কেজিএফ’, ‘পুষ্পা’ বা ‘আরআরআর’-এর মতো ছবির পর এবার ‘ওজি’ নিয়ে মানুষের আশা অনেক বেশি। বিশেষত ইমরান হাশমির তেলুগু ডেবিউ এই ছবিকে জাতীয় স্তরে আলোচনায় নিয়ে এসেছে। মুম্বইয়ের চলচ্চিত্র সমালোচক অনিল শর্মা বলেছেন, “দক্ষিণী সিনেমা আজ দেশের বাণিজ্যিক ছবির মেরুদণ্ড। ইমরানের মতো বলিউড তারকারা এখানে যোগ দেওয়াটা প্রমাণ করে দিয়েছে, তেলুগু ইন্ডাস্ট্রি এখন আর শুধুই আঞ্চলিক নয়, এটি এখন জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক স্তরের সিনেমা তৈরি করছে।”

অন্যদিকে, স্থানীয় দর্শক ও থিয়েটার মালিকদের কাছে ‘ওজি’ যেন এক মহোৎসবের মতো। বিশাখাপত্তনমের এক থিয়েটার মালিক জানিয়েছেন, “আমরা আশা করছি মুক্তির সপ্তাহেই সব শো হাউসফুল হবে। পবন কল্যাণ মানেই আমাদের জন্য উৎসব। আর এবার ইমরান হাশমির মতো তারকা যোগ দেওয়ায় হিন্দি বেল্টের দর্শকরাও সমান আগ্রহী হবেন।”

এই সিনেমার প্রভাব শুধু বিনোদনে সীমাবদ্ধ নয়। দক্ষিণ ভারতের ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির অর্থনৈতিক বৃদ্ধিতেও বড় ভূমিকা রাখবে। সিনেমার শুটিং, বিপণন, টিকিট বিক্রি সব মিলিয়ে হাজার হাজার মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হবে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, একেকটি ব্লকবাস্টার সিনেমা দক্ষিণ ভারতের অর্থনীতিতে কয়েকশো কোটি টাকার ব্যবসা করে। ফলে ‘ওজি’-র সম্ভাবনা নিয়ে প্রযোজনা সংস্থা যেমন আশাবাদী, তেমনি উৎসাহী ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির অন্যান্য অংশও।

তবে সিনেমা নিয়ে উন্মাদনার মধ্যেও প্রশ্ন উঠছে—ইমরান হাশমি তাঁর খলনায়ক চরিত্রে কতটা সফল হবেন? এতদিন যিনি পর্দায় চুম্বন দৃশ্যের জন্য ‘সিরিয়াল কিসার’ নামে পরিচিত ছিলেন, তিনি কি ভয়ঙ্কর ভিলেন হিসেবে দর্শকের মন জয় করতে পারবেন? সমালোচকদের মতে, যদি তিনি এই রূপান্তর সফলভাবে করতে পারেন, তাহলে বলিউডে তাঁর দ্বিতীয় ইনিংস শুরু হবে দক্ষিণ ভারত থেকেই।

সব মিলিয়ে, পবন কল্যাণের ক্যারিশমা, ইমরান হাশমির নতুন ভূমিকায় চমক, আর সুজিতের শক্তিশালী পরিচালনা—এই ত্রয়ী মিলে ‘ওজি’-কে শুধু দক্ষিণ ভারতের নয়, গোটা দেশের অন্যতম বড় সিনেমা করে তুলতে চলেছে। সিনেমাপ্রেমীরা এখন ক্যালেন্ডারে ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫ তারিখটিকে লাল কালি দিয়ে মার্ক করে রেখেছেন। কারণ সেদিনই হয়তো ভারতীয় সিনেমা জগতে আরেকটি ইতিহাস রচিত হবে।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments