Patuli supporters in KKR group :পশ্চিমবঙ্গের ক্রীড়া সংস্কৃতির অন্যতম রঙিন দিক হল সমর্থনের আবেগ—আর সেই আবেগ যেন আবারও চোখে পড়ল কলকাতার পাটুলিতে, যেখানে আইপিএল ২০২৫-এ কলকাতা নাইট রাইডার্স দলের পাশে দাঁড়াতে রাস্তায় নেমে এলেন শতাধিক সমর্থক। চলতি মরশুমে KKR দল যদিও তেমন ভাল ছন্দে নেই, দশটি ম্যাচে মাত্র চারটি জয় পেয়ে সপ্তম স্থানে অবস্থান করছে, তবুও তাঁদের প্রতি ভালোবাসা ও বিশ্বাস একটুও কমেনি এই অনুগামীদের। পাটুলির একাংশের রাস্তাজুড়ে হঠাৎ করেই দেখা গেল শাহরুখ খান ও KKR-এর খেলোয়াড়দের কাগজের কাট-আউট, রঙিন ফেস্টুন, হাতে প্ল্যাকার্ড, মুখে চিৎকার—”Korbo Lorbo Jeetbo Re”, “এগিয়ে চলো KKR”, এমন দৃশ্য মনে করিয়ে দিল যেন রাজনৈতিক মিছিল নয়, বরং শহরের এক নিজস্ব ক্রিকেট উৎসব। মূলত কেকেআর দলের মালিক ও বলিউড বাদশা শাহরুখ খানের প্রতি ভালোবাসা, তার সঙ্গে দলে থাকা আন্দ্রে রাসেল, রিঙ্কু সিং, সুনীল নারিনের প্রতি অগাধ ভক্তি থেকেই গিভলি বানিয়ে এই অভিনব উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে জানালেন স্থানীয় বাসিন্দা ও কেকেআর সমর্থক রাহুল দাস, যিনি বললেন, “শাহরুখ খান আমাদের হৃদয়। ওনার দল খেলুক ভালো হোক খারাপ, আমরা পাশে থাকব। ওর জন্যই তো কেকেআরকে প্রথম ভালোবাসা।” সঙ্গে ছিলেন স্থানীয় কলেজের ছাত্রী অনন্যা ভৌমিক, যিনি বললেন, “এই দল আমাদের গর্ব, যারা খারাপ সময়ে পাশে থাকে, তারাই তো আসল সমর্থক।”
)
এই অভিনব রাস্তাঘাটে সমর্থনের চিত্র ভাইরাল হয়েছে সোশ্যাল মিডিয়াতেও। ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম ও টুইটারে ছড়িয়ে পড়েছে ছবি ও ভিডিও, যেখানে দেখা যাচ্ছে, পাটুলির একাংশে ব্যানার টাঙিয়ে, কেকেআর জার্সি পরে ছেলেমেয়েরা রাস্তার মোড়ে দাঁড়িয়ে গলা ফাটাচ্ছে। একাধিক বাচ্চা হাতে বেলুন ও ব্যাট হাতে দাঁড়িয়ে রিঙ্কু সিং-এর নাম ধরে চেঁচাচ্ছে, কেউ আবার বলছে, “রসেল বাবু মাঠে নামলেই সব ঠিক হয়ে যাবে।” স্থানীয় দোকানিরা বলছেন, আগে কোনও ক্রিকেট দল নিয়ে এতটা উত্তেজনা পাড়ায় দেখা যায়নি। পাড়ার এক পকোড়ার দোকানদার বিজয় ঘোষ জানালেন, “এই কদিন তো আমার দোকানে বিক্রি দ্বিগুণ হয়েছে, সবাই খেতে খেতে খেলোয়াড়দের নিয়ে আলোচনা করছে। একটা উৎসবের আমেজ তৈরি হয়েছে।”
KKR দলের বর্তমান পারফরম্যান্স নিয়ে শহরের নানা কোণায় বিশ্লেষণ চলছে। ক্রিকেট বিশ্লেষক সৌম্যকান্তি বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতে, “দল কিছুটা ব্যাটিং অর্ডারে তালগোল পাকিয়ে ফেলেছে। তবে যেভাবে ভক্তরা পাশে দাঁড়াচ্ছেন, এটা দলের মনোবল বাড়াবে।” শাহরুখ খান যদিও এখন পর্যন্ত এই সমর্থনের ব্যাপারে সরাসরি কিছু বলেননি, তবে KKR-এর অফিসিয়াল পেজ থেকে পাটুলির এই উদ্যোগের ভিডিও শেয়ার করে লেখা হয়েছে, “সিটিতে হ্যাজ রকড। এগিয়ে চলুন নাইটরা!”
এই ঘটনার ভবিষ্যৎ প্রভাব খুবই ইতিবাচক হতে পারে। প্রথমত, এমন এক সময় যখন ক্রিকেট ধীরে ধীরে শুধুই মাঠের খেলা হয়ে যাচ্ছে, তখন এই ধরনের জনসমর্থনের মেলবন্ধন আবার স্মরণ করিয়ে দেয় যে ক্রিকেট এখনও আবেগের খেলা। দ্বিতীয়ত, শহরের যুবসমাজ এইভাবে গঠনমূলক ও উৎসাহব্যঞ্জক কর্মকাণ্ডে যুক্ত হলে সমাজে ইতিবাচকতার বার্তা পৌঁছায়। তৃতীয়ত, অন্যান্য এলাকাও এই উদ্যোগকে দেখে অনুপ্রাণিত হতে পারে, যা ভবিষ্যতে আইপিএল বা অন্য কোনও টুর্নামেন্টে দলের পাশে দাঁড়ানোর নতুন সংস্কৃতি তৈরি করতে পারে।
তবে, পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে সতর্ক বার্তা দেওয়া হয়েছে যে রাস্তায় এমনভাবে জনসমাগম করলে যান চলাচলে সমস্যা হতে পারে। স্থানীয় থানার ওসি জানিয়েছেন, “আবেগ থাকুক, কিন্তু নিয়মের মধ্যে। ফুটপাত বা মাঠে এমন আয়োজন করলে প্রশাসনেরও সুবিধা হয়।”
অন্যদিকে পাটুলির স্কুলের শিক্ষক অরিন্দম চট্টোপাধ্যায় বলেন, “ছেলেমেয়েরা ক্রিকেটের মাধ্যমে আনন্দ পাচ্ছে, একতা গড়ে তুলছে, এটা ভালো দিক। তবে পড়াশোনার দিকেও নজর দিতে হবে।”
শেষমেশ, একটা বিষয় পরিষ্কার—দল জিতুক বা হারুক, KKR-এর প্রতি এই শহরের ভালোবাসা অটুট। শাহরুখ খানের নাম শুধু সিনেমায় নয়, ক্রিকেটেও এক অনুভূতির নাম হয়ে উঠেছে। পাটুলির এই গিভলি উৎসব হয়তো চলতি আইপিএল মরশুমে KKR-এর জয় এনে দেবে না, তবে যে আবেগ এবং সমর্থনের গল্প তৈরি করল, তা দীর্ঘদিন মনে থেকে যাবে এই শহরের বুকজুড়ে।