Pashkura Multi Dacoit : রবিবার গভীর রাতে পূর্ব মেদিনীপুরের পাঁশকুড়া থানার পুলিশ এক বড় সফলতা পেল। মেছোগ্রামের অদূরে বাঁশতলার কাছে গোপন সূত্রে খবর পেয়ে তারা গ্রেপ্তার করল পাঁচজন ডাকাতকে, যারা ওই এলাকায় বড়সড় ডাকাতির পরিকল্পনা করছিল। এই ঘটনায় গোটা এলাকায় চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়েছে। পুলিশ সূত্রের খবর অনুযায়ী, ধৃত ডাকাতদের মধ্যে দু’জন ঝাড়খণ্ডের বোকারো এলাকার বাসিন্দা, দু’জন পুরুলিয়ার রঘুবাথপুরের এবং একজন উত্তর ২৪ পরগনার জগদ্দলের বাসিন্দা। ধৃতরা হল – দিলীপ সিং, মোহন গোরাই, বিজয় রাম, মহম্মদ ফিরাজ খান এবং মহম্মদ ফুর খাঁন।
ডাকাতির ছক: কীভাবে ধরা পড়ল এই দল?
পাঁশকুড়া থানার পুলিশ আগে থেকেই খবর পেয়ে নজরদারি চালাচ্ছিল। রবিবার রাতে গোপনসূত্রে খবর আসে যে, বাঁশতলার কাছে ডাকাতির উদ্দেশ্যে কিছু লোক জড়ো হয়েছে। সঙ্গে সঙ্গেই পুলিশের একটি বিশেষ টিম অভিযান চালিয়ে পাঁচজনকে হাতেনাতে ধরে ফেলে। ধৃতদের কাছ থেকে উদ্ধার হয় একটি ওয়ান শাটার পাইপগান, দুই রাউন্ড কার্তুজ, একটি ধারালো ভোজালি, একটি লোহার রড, দু’টি বেসবল স্টিক, তিনটি গাড়ির নম্বর প্লেট এবং একটি টাটা মাঞ্জা গাড়ি। ওই গাড়িতেই তারা ডাকাতি করতে যাচ্ছিল বলে জানা গেছে। পুলিশ জানায়, গাড়িটিতে সরকারি দপ্তরের লোগো লাগানো প্লেট ছিল, যাতে কাউকে সন্দেহ না হয়।
ডাকাত দলের পরিকল্পনা
পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে জানা গেছে, এই ডাকাত দলটি পশ্চিম মেদিনীপুরের দাসপুর এবং পূর্ব মেদিনীপুরের পাঁশকুড়া এলাকায় একাধিক জায়গায় ডাকাতির পরিকল্পনা করেছিল। তারা রাতের অন্ধকারে নির্জন এলাকায় পথচলতি গাড়ি এবং বাড়িতে হামলা চালানোর ছক কষেছিল। এর আগে তারা অন্য জেলাতেও এ ধরনের অপারেশন চালিয়েছে বলে সন্দেহ করছে পুলিশ। পুলিশের মতে, এরা অত্যন্ত পেশাদার এবং সংগঠিত ডাকাত দল, যারা বেশ কিছুদিন ধরেই এলাকায় সক্রিয় ছিল।
গ্রামে আতঙ্ক এবং পুলিশের ভূমিকায় প্রশংসা
এই ঘটনার পর পাঁশকুড়া এবং আশপাশের এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। স্থানীয় বাসিন্দারা পুলিশের এই সফল অভিযানের ভূয়সী প্রশংসা করছেন। মেছোগ্রামের বাসিন্দা শ্যামল চক্রবর্তী বলেন, ‘‘গত কয়েকদিন ধরেই এলাকায় কিছু সন্দেহজনক মুখ দেখছিলাম। রাতের বেলা বেশ অস্বস্তি হতো। পুলিশের তৎপরতায় আমরা অনেকটাই নিশ্চিন্ত।’’
পাঁশকুড়া থানার ওসি জানান, ‘‘গোপন সূত্র থেকে খবর পেয়ে আমরা পুরো দল নিয়ে পরিকল্পনা করে এই অভিযান চালাই। ধৃতদের জিজ্ঞাসাবাদ করে আরও অনেক তথ্য পাওয়া যাবে বলে আমাদের ধারণা।’’
ডাকাত দলের সদস্যদের পরিচয় এবং অতীত ইতিহাস
ধৃতদের মধ্যে দিলীপ সিং এবং মোহন গোরাই ঝাড়খণ্ডের বোকারো এলাকার বাসিন্দা। তারা এর আগেও একাধিক জায়গায় ডাকাতি এবং লুটের ঘটনায় যুক্ত ছিল বলে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে। পুরুলিয়ার বিজয় রাম এবং মহম্মদ ফিরাজ খানও বিভিন্ন জেলায় অপরাধমূলক কাজে জড়িত ছিল বলে পুলিশের ধারণা। উত্তর ২৪ পরগনার জগদ্দল এলাকার মহম্মদ ফুর খাঁন মূলত গাড়ি চালানোর কাজ করত এবং দলকে বিভিন্ন জায়গায় গাড়ি নিয়ে সাহায্য করত।
আদালতে পেশ এবং পুলিশি রিমান্ড
রবিবার রাতে ধৃতদের গ্রেপ্তারের পর সোমবার তমলুক জেলা আদালতে পেশ করা হয়। পাঁশকুড়া থানার পক্ষ থেকে সাত দিনের পুলিশি হেফাজতের আবেদন জানানো হয়েছে, যাতে ধৃতদের থেকে আরও তথ্য বের করা যায়। পুলিশের অনুমান, এই ডাকাত দলের সঙ্গে আরও কয়েকজন জড়িত রয়েছে, যাদের খোঁজ চলছে।
স্থানীয়দের দাবি: এলাকায় আরও কড়া নজরদারি দরকার
এলাকার সাধারণ মানুষ মনে করছেন, এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঠেকাতে পুলিশের আরও কড়া নজরদারি প্রয়োজন। স্থানীয় ব্যবসায়ী প্রবাল দাস বলেন, ‘‘আমাদের এখানে রাতের বেলা অনেক ট্রাক এবং গাড়ি যাতায়াত করে। তাই পুলিশের টহলদারি বাড়ানো খুব জরুরি। না হলে ডাকাতির ঝুঁকি থেকে যাবে।’’
ডাকাতি রুখতে পুলিশের পদক্ষেপ
এই ঘটনার পর পাঁশকুড়া থানার পক্ষ থেকে এলাকাবাসীদের সতর্ক থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কোনও সন্দেহজনক ব্যক্তি বা গাড়ি দেখলেই পুলিশকে খবর দিতে বলা হয়েছে। পাশাপাশি, রাতের বেলা আরও কড়া নজরদারি চালানো হবে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
উপসংহার
পাঁশকুড়ায় ৫ ডাকাত গ্রেপ্তার হওয়ার ঘটনায় পুলিশের সাফল্য যেমন প্রশংসনীয়, তেমনই এটি এক বড় সতর্কবার্তাও বটে। অপরাধীরা ক্রমশ নতুন নতুন কৌশল নিয়ে মাঠে নামছে। সরকারি প্লেট লাগানো গাড়ি ব্যবহার থেকে শুরু করে অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে সজ্জিত হয়ে ঘুরে বেড়ানো – সবই প্রমাণ করে, সাধারণ মানুষের সুরক্ষায় আরও তৎপর হতে হবে পুলিশকে। তবে স্থানীয়দের সচেতনতা এবং পুলিশের তৎপরতার মিলিত প্রয়াসেই অপরাধকে ঠেকানো সম্ভব।