Partial solar eclipse at the beginning of the year, where and when will it be seen?: কয়েকদিন আগেই পৃথিবীর মানুষ সাক্ষী হয়েছিল চন্দ্রগ্রহণের এক অসাধারণ মুহূর্তের। এবার আসছে বছরের প্রথম সূর্যগ্রহণ। ২৯ মার্চ, ২০২৫-এ ঘটতে চলেছে বছরের প্রথম আংশিক সূর্যগ্রহণ, যা জ্যোতির্বিজ্ঞানের অনুরাগী থেকে সাধারণ মানুষের মধ্যেও কৌতূহল সৃষ্টি করেছে। যদিও দুঃখের বিষয়, এই সূর্যগ্রহণ ভারত থেকে দৃশ্যমান হবে না। কিন্তু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কিছু নির্দিষ্ট অঞ্চল এই মহাজাগতিক দৃশ্য উপভোগ করতে পারবে। চলুন জেনে নেওয়া যাক এই গ্রহণের সময়কাল, এর বৈজ্ঞানিক দিক এবং এর প্রভাব সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য।
সূর্যগ্রহণের সময়সূচি এবং দৃশ্যমানতার এলাকা:
জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, ২৯ মার্চ, ২০২৫ সালের শনিবার এই আংশিক সূর্যগ্রহণ ঘটবে। ভারতীয় সময় দুপুর ২:২০ মিনিটে সূর্যগ্রহণ শুরু হবে এবং বিকেল ৪:১৭ মিনিটে এই গ্রহণ শেষ হবে। তবে ভারতের মানুষকে এবার গ্রহণের দৃশ্য থেকে বঞ্চিত হতে হবে, কারণ এটি মূলত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের উত্তর-পূর্ব অঞ্চলে স্পষ্টভাবে দৃশ্যমান হবে।
নিউ ইয়র্ক, ম্যাসাচুসেটস, পেনসিলভানিয়া, নিউ জার্সি এবং ভার্জিনিয়া—এই অঞ্চলগুলিতে আকাশ পরিষ্কার থাকলে সূর্যগ্রহণের অসাধারণ মুহূর্ত প্রত্যক্ষ করতে পারবেন সেখানকার বাসিন্দারা। এছাড়াও, কানাডার কিছু অঞ্চল থেকেও গ্রহণ দেখা যাবে।
আংশিক সূর্যগ্রহণ কী এবং কেন এটি গুরুত্বপূর্ণ?
যখন চাঁদ, পৃথিবী এবং সূর্য একই সরলরেখায় আসে এবং চাঁদ আংশিকভাবে সূর্যের উপরিভাগকে ঢেকে দেয়, তখন তাকে আংশিক সূর্যগ্রহণ বলা হয়। সম্পূর্ণ সূর্যগ্রহণের সময় সূর্যের পুরো অংশ চাঁদের আড়ালে চলে যায়, কিন্তু আংশিক গ্রহণে কেবল সূর্যের একটি নির্দিষ্ট অংশ চাঁদের আড়ালে ঢেকে যায়।
আংশিক সূর্যগ্রহণ একদিকে যেমন মহাজাগতিক দৃশ্য উপভোগের সুযোগ করে দেয়, তেমনই এটি পৃথিবীর আবহাওয়ায় সামান্য পরিবর্তন আনতে পারে। অনেক সময় আংশিক গ্রহণের সময় দিনের আলো ম্লান হয়ে যায় এবং হালকা শীতল আবহ তৈরি হয়।
গ্রহণের প্রভাব এবং নিরাপত্তা:
সূর্যগ্রহণ দেখতে গেলেও নিরাপত্তা বজায় রাখা অত্যন্ত জরুরি। বিশেষজ্ঞরা সবসময়ই পরামর্শ দেন, খালি চোখে সূর্যগ্রহণ না দেখার জন্য। সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মি চোখের ক্ষতি করতে পারে, এমনকি স্থায়ী অন্ধত্বও ঘটতে পারে। তাই গ্রহণ দেখার জন্য ‘সোলার ভিউয়িং গ্লাসেস’ ব্যবহার করতে হবে।
সোশ্যাল মিডিয়া ও বিজ্ঞানপ্রেমীদের প্রতিক্রিয়া:
এই গ্রহণ নিয়ে ইতিমধ্যেই সোশ্যাল মিডিয়ায় উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে। বিজ্ঞানপ্রেমী এবং জ্যোতির্বিজ্ঞানের অনুরাগীরা গ্রহণের সময়ের ছবি শেয়ার করার পরিকল্পনা করছেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসকারী ভারতীয়রাও এই মহাজাগতিক দৃশ্য উপভোগ করতে প্রস্তুত।
আগামীর গ্রহণ ও জ্যোতির্বিজ্ঞান গবেষণার গুরুত্ব:
এই বছরে আরও একটি সূর্যগ্রহণ ঘটবে। ২১ সেপ্টেম্বর, ২০২৫-এ হবে দ্বিতীয় এবং শেষ সূর্যগ্রহণ। তবে তা পূর্ণ সূর্যগ্রহণ হবে কি না, সেই বিষয়ে বিজ্ঞানীরা এখনও বিস্তারিত তথ্য দিচ্ছেন।
সাধারণ মানুষের ধারণা ও গ্রহণ সংক্রান্ত বিশ্বাস:
অনেক সংস্কৃতিতেই সূর্যগ্রহণ নিয়ে নানা ধরনের কুসংস্কার প্রচলিত রয়েছে। কেউ কেউ মনে করেন, গ্রহণের সময় খাবার খাওয়া উচিত নয় বা গর্ভবতী মহিলাদের বাইরে যাওয়া উচিত নয়। যদিও বৈজ্ঞানিকভাবে এই ধরনের কুসংস্কারের কোনও ভিত্তি নেই। বরং সূর্যগ্রহণ একটি স্বাভাবিক মহাজাগতিক ঘটনা, যা শুধুমাত্র পৃথিবী, সূর্য এবং চাঁদের নির্দিষ্ট অবস্থানের ফলাফল।
জ্যোতির্বিদদের মতামত:
জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা বলছেন, সূর্যগ্রহণ মহাজাগতিক গবেষণার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ সুযোগ। এই সময় সূর্যের করোনার (Corona) অর্থাৎ বহিরাবরণের উপর গবেষণা করা হয়। এছাড়া পৃথিবীর আবহাওয়ায় গ্রহণের সাময়িক প্রভাব সম্পর্কেও গবেষণা চালানো হয়।
ভারতের গ্রহণ-উৎসব ও জ্যোতির্বিদ্যার ভূমিকা:
ভারতে সূর্যগ্রহণ নিয়ে মানুষের মধ্যে বরাবরই উৎসাহ থাকে। যদিও এই গ্রহণ ভারত থেকে দেখা যাবে না, তবুও অনেক মানুষ অনলাইনে লাইভ স্ট্রিমিংয়ের মাধ্যমে এই মহাজাগতিক দৃশ্য উপভোগ করবেন। ভারতের বিভিন্ন বিজ্ঞান কেন্দ্র এবং স্কুল-কলেজেও এই গ্রহণ নিয়ে আলোচনা, সেমিনার এবং ওয়ার্কশপের আয়োজন করা হয়।
পরিবেশবিদদের মতামত:
পরিবেশবিদরা মনে করেন, সূর্যগ্রহণ আমাদের আরও একবার প্রকৃতির প্রতি সংবেদনশীল হওয়ার বার্তা দেয়। এই ধরনের ঘটনা আমাদের বুঝিয়ে দেয়, মহাবিশ্ব কতটা বিস্ময়কর এবং আমরা কত ছোট একটি অংশ।
শেষ কথা:
বছরের প্রথম সূর্যগ্রহণ নিয়ে উত্তেজনা যেমন রয়েছে, তেমনই এই ঘটনাটি আমাদের অনেক কিছু শেখায়। বিজ্ঞান ও জ্যোতির্বিজ্ঞান আমাদের গ্রহণ সম্পর্কে সঠিক ধারণা দেয় এবং কুসংস্কার থেকে দূরে থাকতে সাহায্য করে। তাই আগামী ২৯ মার্চের গ্রহণকে উপভোগ করুন, তবে অবশ্যই নিরাপদ উপায়ে এবং বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে।