...
Thursday, April 3, 2025
Google search engine
Homeরাজনীতিঅন্যানো রাজনীতিজামালপুরে ইফতার পার্টিতে উপস্থিত পঞ্চায়েত মন্ত্রী

জামালপুরে ইফতার পার্টিতে উপস্থিত পঞ্চায়েত মন্ত্রী

Panchayat Minister present at Iftar party in Jamalpur:জামালপুরের ফুটবল ময়দান শুক্রবার এক অন্যরকম আবেগ আর উৎসবমুখর পরিবেশের সাক্ষী থাকল। প্রতি বছরের মতো এ বছরও জামালপুর নাগরিক জনকল্যাণ সোসাইটির উদ্যোগে আয়োজিত হলো দাওয়াত-ই-ইফতার মাহফিল। পবিত্র রমজান মাসের এই বিশেষ ইফতার অনুষ্ঠানে প্রায় পাঁচ হাজার রোজদারের জন্য ইফতারের ব্যবস্থা করা হয়। এই মহা আয়োজনের মূল পরিচালনায় ছিলেন জামালপুর পঞ্চায়েত সমিতির পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ এবং নাগরিক জনকল্যাণ সোসাইটির সভাপতি মেহেবুদ খান।

WhatsApp Image 2025 03 22 at 3.57.44 PM

ইফতার অনুষ্ঠানে উপস্থিতি ও আয়োজনে রাজনৈতিক এবং প্রশাসনিক স্তরের একাধিক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্বের যোগদানে বিশেষ মাত্রা যুক্ত হয়। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন রাজ্যের পঞ্চায়েত মন্ত্রী প্রদীপ মজুমদার। তার সঙ্গে ছিলেন পূর্ব বর্ধমান জেলার জেলাশাসক আয়েশা রানী, জেলা পুলিশ সুপার শায়ক দাস, এসডিও বুদ্ধদেব পান, জামালপুর বিধানসভার বিধায়ক অলক কুমার মাঝি, বিডিও পার্থসারথি দে, পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি পূর্ণিমা মালিক এবং সহ-সভাপতি ভূতনাথ মালিক। এছাড়াও জামালপুরের বিভিন্ন বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব এবং সাধারণ মানুষ ইফতার পার্টিতে অংশ নেন।

উৎসবমুখর পরিবেশ এবং সম্প্রীতির বার্তা

পবিত্র রমজান মাস শুধু রোজা রাখার মাস নয়, বরং ভ্রাতৃত্ব, সম্প্রীতি, দানের মানসিকতা এবং মানবিক মূল্যবোধের প্রসারেরও এক বিশেষ সময়। জামালপুরের এই ইফতার মাহফিলেও সেই বার্তা আরও স্পষ্ট হলো। পাঁচ হাজারেরও বেশি রোজদার ও অতিথির জন্য বিশেষ ইফতারের আয়োজন করা হয়েছিল। তালিকায় ছিল খেজুর, ছোলা, ফল, শরবত, এবং নানা ধরনের খাবার। সন্ধ্যার সময় আযানের ধ্বনি শোনা মাত্রই সবাই একসঙ্গে ইফতার শুরু করেন।

ইফতার শেষে বক্তব্য রাখতে উঠে পঞ্চায়েত মন্ত্রী প্রদীপ মজুমদার বলেন, “ইফতারের মতো পবিত্র অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করে আমি অত্যন্ত আনন্দিত। এই ধরনের অনুষ্ঠানে মানুষ মানুষের পাশে দাঁড়ানোর বার্তা পায়, যা আমাদের রাজ্যের ঐক্য এবং সম্প্রীতির ঐতিহ্যকে আরও মজবুত করে।” তিনি আরও বলেন, “সরকার গ্রামের উন্নয়নের জন্য নিরলস কাজ করে চলেছে, এবং মানুষের পাশে থেকে উন্নয়নমূলক কাজ করাই আমাদের লক্ষ্য।”

সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির উদাহরণ

জামালপুরে দীর্ঘদিন ধরেই হিন্দু-মুসলিম ঐক্য এবং সম্প্রীতির এক মেলবন্ধন রয়েছে। প্রতিটি উৎসবে ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সকলের অংশগ্রহণই এই এলাকার অন্যতম বৈশিষ্ট্য। এই ইফতার অনুষ্ঠানেও হিন্দু ও মুসলিম দুই সম্প্রদায়ের মানুষের মিলন দেখা গেল। স্থানীয় বাসিন্দা রমেশ ঘোষ বলেন, “আমরা এখানে প্রত্যেক বছর ইফতারে আসি। এটি শুধু একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠান নয়, এখানে বন্ধুত্বের বন্ধন আরও দৃঢ় হয়।”

জামালপুরে ইফতার পার্টিতে উপস্থিত পঞ্চায়েত মন্ত্রী

একই সুর শোনা গেল স্থানীয় সমাজকর্মী এবং নাগরিক জনকল্যাণ সোসাইটির অন্যতম সদস্য মহম্মদ আসিফের গলায়। তিনি বলেন, “রমজান মাস শুধু রোজা রাখার বিষয় নয়, এটি এমন একটি সময়, যখন দরিদ্রদের সাহায্য করা, পরস্পরের পাশে দাঁড়ানোর শিক্ষা আমরা পাই। এই ইফতার অনুষ্ঠানে ৫০০০ মানুষের একসঙ্গে বসে ইফতার করা সেই মানবিক বার্তাই দেয়।”

রাজনৈতিক গুরুত্ব এবং স্থানীয় উন্নয়ন

এই ধরনের বড় আয়োজনে রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বদের উপস্থিতি সবসময়েই বিশেষ তাৎপর্য বহন করে। পঞ্চায়েত মন্ত্রীর উপস্থিতি নিয়ে স্থানীয় মানুষের মধ্যে বেশ উচ্ছ্বাস দেখা যায়। স্থানীয় পঞ্চায়েত ও ব্লকের উন্নয়ন নিয়ে তিনি এদিন আলোচনা করেন। ইফতার পার্টির মঞ্চ থেকেই তিনি ঘোষণা করেন, “জামালপুরের রাস্তাঘাট এবং পানীয় জলের সমস্যা দূর করতে নতুন প্রকল্প হাতে নেওয়া হচ্ছে। খুব শিগগিরই গ্রামীণ এলাকায় পরিকাঠামো উন্নয়নে বড় পদক্ষেপ করা হবে।”

মানবিক উদ্যোগ এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা

এদিনের অনুষ্ঠানে দারিদ্র্যসীমার নিচে থাকা মানুষদের জন্য বিশেষ সাহায্য ঘোষণা করা হয়। জামালপুর নাগরিক জনকল্যাণ সোসাইটির পক্ষ থেকে ২০০টি পরিবারের হাতে খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করা হয়। এছাড়াও শিশুদের মধ্যে নতুন জামাকাপড় এবং শিক্ষা সামগ্রী দেওয়া হয়।

অনুষ্ঠান শেষে জামালপুর পঞ্চায়েত সমিতির পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ মেহেবুদ খান বলেন, “আমরা এই ইফতার পার্টি শুধু ধর্মীয় অনুষ্ঠানের জন্য করি না, এটি মূলত সম্প্রীতির বার্তা বহন করার জন্য আয়োজন করা হয়। এলাকার মানুষ যেন শান্তিতে থাকতে পারেন এবং উন্নয়নমূলক কাজ এগিয়ে নিয়ে যেতে পারেন, সেটাই আমাদের লক্ষ্য।”

উৎসবের আনন্দে সম্প্রীতির বার্তা

এই ইফতার মাহফিল যেমন রোজদারদের ধর্মীয় অনুভূতিকে ছুঁয়ে গেছে, তেমনই সামগ্রিকভাবে হিন্দু-মুসলিম ঐক্যের প্রতীক হিসেবেও তা উল্লেখযোগ্য হয়ে উঠেছে। স্থানীয় বাসিন্দা শিখা দাস বলেন, “আমরা প্রতিবছর এই ইফতারে আসি। এখানে এসে মনে হয়, ধর্ম, বর্ণের ঊর্ধ্বে আমরা সবাই এক।”

WhatsApp Image 2025 03 22 at 3.57.44 PM 1

ইফতার পার্টির গুরুত্ব এবং ভবিষ্যতের প্রত্যাশা

জামালপুরে এই ধরনের ইফতার অনুষ্ঠান ভবিষ্যতেও আরও বড় আকারে আয়োজন করা হবে বলে উদ্যোক্তারা জানিয়েছেন। এর মাধ্যমে শুধুমাত্র ধর্মীয় অনুষ্ঠান নয়, সামাজিক এবং অর্থনৈতিক উন্নয়নের কথাও বারবার উঠে আসবে। এলাকার যুবকদের জন্য কর্মসংস্থান, মহিলাদের জন্য স্বনির্ভরতার প্রশিক্ষণ, এবং গ্রামীণ পরিকাঠামো উন্নয়নের মতো বিষয়গুলি নিয়েও ভবিষ্যতে বড় উদ্যোগ নেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে।

উপসংহার

জামালপুরের এই ইফতার পার্টি শুধুমাত্র ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান নয়, এটি মানবতার এক গুরুত্বপূর্ণ উদাহরণ হয়ে রইল। ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে হাজার হাজার মানুষের অংশগ্রহণে আরও একবার প্রমাণিত হলো, সম্প্রীতির বার্তা ছড়ানোর জন্য এমন উদ্যোগ অত্যন্ত জরুরি। পঞ্চায়েত মন্ত্রী থেকে শুরু করে স্থানীয় বাসিন্দা—সবার একসঙ্গে ইফতার করার দৃশ্য যেন শান্তি আর বন্ধুত্বের বার্তা বহন করল।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments

Seraphinite AcceleratorOptimized by Seraphinite Accelerator
Turns on site high speed to be attractive for people and search engines.