Pakistani flag painted on the road, removed by police: রাত তখন গভীর, শহর ঘুমিয়ে, গ্রামের রাস্তাঘাট শুনশান। এমন সময়ই ঘটে গেল এমন এক ঘটনা, যা উত্তর ২৪ পরগনার বসিরহাট মহকুমার কালিতলা গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় চরম আতঙ্ক এবং চাঞ্চল্য সৃষ্টি করে। হঠাৎই সকালবেলা উঠে দেখা গেল, সরকারি পি ডব্লিউ ডি রোডের ওপর আঁকা হয়েছে পাকিস্তানের জাতীয় পতাকা! ভারতের বুকে, তাও আবার জনবহুল এলাকার ঠিক মাঝখানে এমন ঘটনা কী করে ঘটল? কে বা কারা এই সাহস দেখাল? প্রশ্নে প্রশ্নে উত্তাল হয়ে ওঠে গোটা কালিতলা বাজার এবং আশপাশের গ্রামাঞ্চল।ঘটনাটি ঘটে গত বুধবার গভীর রাতে, আনুমানিক রাত তিনটে নাগাদ। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, কালিতলা বাজারের কাছে ২৪৮ নম্বর বুথের সামনে পাকা রাস্তায় পাকিস্তানি পতাকার নকশা দেখতে পান এক স্থানীয় বাসিন্দা, যিনি ভোরে বাজারে যাচ্ছিলেন। তিনি দ্রুত খবর দেন স্থানীয়দের এবং তারপরেই খবর পৌঁছয় হেমনগর থানায়। কোনওরকম দেরি না করে বিশাল পুলিশবাহিনী ঘটনাস্থলে পৌঁছে সেই পতাকার চিহ্ন মুছে দেয় এবং পুরো এলাকা ঘিরে ফেলে তল্লাশি শুরু করে।পুলিশের তরফে জানানো হয়েছে, এখনো পর্যন্ত কোনও ব্যক্তি বা গোষ্ঠীকে চিহ্নিত করা সম্ভব হয়নি, তবে ঘটনাটি গুরুত্ব সহকারে খতিয়ে দেখা হচ্ছে এবং সিসিটিভি ফুটেজ, স্থানীয়দের জবানবন্দি, এবং গোপন সূত্রে খবর নিয়ে তদন্ত চলছে। হেমনগর থানার এক সিনিয়র অফিসার জানিয়েছেন, “এটি অত্যন্ত স্পর্শকাতর বিষয়। আমরা ঘটনার প্রেক্ষাপট, উদ্দেশ্য এবং পিছনের পরিকল্পনা সব কিছু নিয়েই তদন্ত করছি। প্রয়োজনে সাইবার ক্রাইম শাখার সাহায্যও নেওয়া হবে।”স্থানীয় মানুষজনের মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। অনেকে ভয়ে রয়েছেন, আবার অনেকে ক্ষোভে ফেটে পড়েছেন। কালিতলারই এক বাসিন্দা গৌরহরি মণ্ডল বলেন, “এটা নিছক দুষ্টামি নয়, এটা দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র। পাকিস্তানের পতাকা আঁকা মানে ভারতের সার্বভৌমত্বের প্রতি চ্যালেঞ্জ। আমরা চাই, পুলিশ এই অপরাধীদের খুঁজে বের করুক।”
ঘটনার সঙ্গে সঙ্গে রাজনৈতিক মহলেও আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে। বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর বক্তব্য, এই ধরণের ঘটনা রাজ্যের আইনশৃঙ্খলার পরিপূর্ণ ব্যর্থতা। বিজেপি-র স্থানীয় নেতা বলেন, “কোনও দোষীকে এখনো গ্রেপ্তার করা যায়নি। এটা কি নিছক কাকতালীয়? না কি রাজনৈতিক মদতে কেউ এ ধরনের দেশবিরোধী কাজ করছে?” অন্যদিকে, তৃণমূলের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, “আমরা এই ঘটনার তীব্র নিন্দা করছি। যারা দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে, তারা যেই হোক, কড়া শাস্তি পেতে হবে। প্রশাসন তাদের দায়িত্বে রয়েছে।”এই ঘটনাকে ঘিরে এলাকা জুড়ে ছড়িয়ে পড়ে আতঙ্ক। বিশেষ করে শিশু এবং প্রবীণরা ভয়ে রয়েছেন ভবিষ্যৎ অনিশ্চয়তা নিয়ে। স্কুল পড়ুয়া শিশুদের অভিভাবকদের বক্তব্য, “এই ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি হলে কীভাবে নিরাপত্তা থাকবে আমাদের? কোথায় প্রশাসন?”পাশাপাশি এলাকার বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন ও নাগরিক সমাজের তরফ থেকেও কড়া ভাষায় এই ঘটনার প্রতিবাদ জানানো হয়েছে। বঙ্গীয় নাগরিক মঞ্চের এক সদস্য বলেন, “পাকিস্তানের পতাকা আঁকার মানে শুধু এক খারাপ রসিকতা নয়, এটা একেবারে জাতীয় নিরাপত্তা প্রশ্নে আঘাত। যদি এটা ইচ্ছাকৃত হয়, তবে এদের দ্রুত খুঁজে বের করে কঠোরতম শাস্তি দিতে হবে। না হলে এই ঘটনা দৃষ্টান্ত হয়ে দাঁড়াবে।”পুলিশ যদিও ঘটনাটিকে প্রাথমিকভাবে কোনো উগ্রপন্থী সংগঠনের সঙ্গে সংযোগ আছে কিনা তা নিয়ে খুব বেশি কিছু বলছে না, তবে কেন্দ্রের গোয়েন্দা সংস্থার সাথেও বিষয়টি ভাগ করে নেওয়া হয়েছে বলে খবর। স্থানীয় প্রশাসন এবং জেলা পুলিশের মধ্যে সমন্বয় রেখে ইতিমধ্যেই একাধিক টিম গঠন করা হয়েছে, যারা এলাকা ধরে ধরে সন্ধান চালাচ্ছে এবং স্থানীয় কিছু সন্দেহভাজনের উপর নজর রাখা হচ্ছে।

এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে আবারও সামনে এসেছে সীমান্তবর্তী জেলার নিরাপত্তা ব্যবস্থার দুর্বলতা। বসিরহাট মহকুমা বাংলাদেশের সীমানা ঘেঁষা হওয়ায় এই অঞ্চলে বারবার বিভিন্ন স্পর্শকাতর ও সন্দেহজনক ঘটনা ঘটে থাকে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সীমান্তে নজরদারি বাড়ানো ছাড়া এই ধরনের ঘটনা নিয়ন্ত্রণে রাখা কঠিন।স্থানীয় যুব সংগঠনের সভাপতি সমরেশ পাঁজা বলেন, “আমরা পুলিশকে সবরকম সাহায্য করছি। এলাকায় শান্তি বজায় রাখতে চাই, কিন্তু প্রশাসনের উচিত এখনই কড়া পদক্ষেপ নেওয়া। না হলে আগামী দিনে এর ফল ভয়ঙ্কর হতে পারে।”ঘটনার পর পুলিশের তরফ থেকে এলাকায় বাড়তি নজরদারি রাখা হচ্ছে। বসানো হয়েছে অস্থায়ী পুলিশ পিকেট, এলাকায় টহল বাড়ানো হয়েছে এবং বিভিন্ন মোড়ে মোড়ে বসানো হয়েছে সিসিটিভি। এছাড়া স্থানীয়দের সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে এবং সন্দেহজনক কিছু দেখলে সঙ্গে সঙ্গে থানায় খবর দিতে অনুরোধ করা হয়েছে।এই ঘটনাটি কেবল একটি রাস্তার ওপর আঁকা চিত্র নয়, এটি দেশের সার্বভৌমত্ব, জাতীয়তাবোধ এবং নিরাপত্তার ওপর সরাসরি চ্যালেঞ্জ। কে বা কারা এই ধরনের দেশদ্রোহী কাজ করল, তাদের উদ্দেশ্য কী ছিল, তা এখন পুলিশি তদন্তের উপরেই নির্ভর করছে। কিন্তু যা সত্যি, তা হল—এই এক ঘটনায় গোটা একটি এলাকা আতঙ্কে ভুগছে, এবং নাগরিকদের মনে প্রশ্ন উঠেছে, “আজ যদি পতাকা আঁকা যায়, কাল কী হবে?”