Pakistan was shaken, Brazil has its eyes on India’s ‘Akash’ missile!: যুদ্ধের ময়দানে যখন কথায় নয়, কার্যেই প্রমাণ দিতে হয় শক্তি, তখন ভারতীয় প্রযুক্তি বারবার দেখিয়েছে তার প্রতিভা আর প্রতিপত্তি। ১৯৯৯ সালের অপারেশন সিঁদুরের সময় পাকিস্তান সীমান্তে ভারত যে ভয়ঙ্কর প্রতিরক্ষা শক্তি দেখিয়েছিল, তার অন্যতম ছিল ‘আকাশ’ মিসাইল। এই ক্ষেপণাস্ত্র মাঝ আকাশেই ধ্বংস করেছিল পাকিস্তানের একের পর এক যুদ্ধবিমান ও ক্ষেপণাস্ত্র, যার ফলে গোটা পাকিস্তান সামরিক দিক থেকে একপ্রকার কেঁপে উঠেছিল। সেই আকাশ মিসাইল এখন কেবল ভারত নয়, বিশ্বেরও গর্বের বস্তু হয়ে উঠেছে। এবার সেই আকাশের দিকেই আগ্রহ প্রকাশ করেছে লাতিন আমেরিকার অন্যতম বড় দেশ ব্রাজিল। ভারত-ব্রাজিলের কূটনৈতিক সম্পর্কের এক ঐতিহাসিক মুহূর্তে দাঁড়িয়ে, যখন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ২ জুন ব্রিকস সম্মেলনে যোগ দিতে ব্রাজিল সফরে যাচ্ছেন, ঠিক তার আগেই এই খবর সামনে এসেছে যে ব্রাজিল সরকার ভারতের তৈরি আকাশ মিসাইল কেনার আগ্রহ প্রকাশ করেছে।

কেন্দ্রীয় সরকার সূত্রে খবর, প্রধানমন্ত্রীর এই সফর শুধুই রাজনৈতিক নয়, এটি হতে চলেছে ভারতের প্রতিরক্ষা শিল্পের জন্য এক যুগান্তকারী পদক্ষেপ। ৭৫০ কেজি ওজনের এই স্বল্পপাল্লার মাটি-থেকে-আকাশ ক্ষেপণাস্ত্র ২৫ কিলোমিটার দূরত্বে থাকা যে কোনও শত্রুপক্ষের যুদ্ধবিমান, ড্রোন কিংবা মিসাইলকে এক মুহূর্তে ধ্বংস করতে সক্ষম। সম্পূর্ণ দেশীয় প্রযুক্তিতে তৈরি এই আকাশ ক্ষেপণাস্ত্রকে ইতিমধ্যেই প্রশংসা জানিয়েছে একাধিক দেশ — যার মধ্যে আর্মেনিয়া অন্যতম, যারা ইতিমধ্যেই ভারতের কাছ থেকে প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম কিনেছে। শুধু তাই নয়, ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’ প্রকল্পের আওতায় এই রপ্তানির ফলে ভারতের প্রতিরক্ষা শিল্পে কর্মসংস্থান যেমন বাড়ছে, তেমনই আন্তর্জাতিক স্তরে দেশের মর্যাদাও বৃদ্ধি পাচ্ছে। সামরিক বিশেষজ্ঞ কর্নেল (অবসরপ্রাপ্ত) আর কে সিং এই প্রসঙ্গে বলেন, “যদি ব্রাজিলের সঙ্গে এই চুক্তি হয়, তাহলে এটি হবে ভারতের ইতিহাসে অন্যতম বড় প্রতিরক্ষা রপ্তানি। এটি শুধু অর্থনৈতিক লাভ নয়, কৌশলগত দিক থেকেও বিশাল অগ্রগতি।” বর্তমানে ব্রাজিল নিজস্ব প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা উন্নত করতে আগ্রহী, বিশেষত ড্রোন ও আকাশ প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে। সেক্ষেত্রে ভারতের আকাশ মিসাইল তাদের সেই লক্ষ্য পূরণে সহায়ক হতে পারে। আর এই চুক্তির সফলতা একদিকে যেমন ভারত-ব্রাজিল দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে মজবুত করবে, অন্যদিকে ব্রাজিলের বাজারে ভারতীয় প্রযুক্তির জন্য এক সুবিশাল দরজা খুলে দেবে। স্থানীয় প্রতিক্রিয়ার কথা বললে, এই খবরে ভারতীয় প্রতিরক্ষা মহলে যেমন উল্লাসের সুর, তেমনি সাধারণ মানুষও গর্বিত।
কলকাতার একটি ডিফেন্স ব্লগার অনীক মুখোপাধ্যায় বলছেন, “এই ধরনের খবর আমাদের আত্মবিশ্বাস বাড়ায়। আমরা গর্বের সঙ্গে বলতে পারি, আমাদের দেশ এখন শুধু আত্মনির্ভর নয়, বিশ্বে রপ্তানিকারকও।” প্রসঙ্গত, আকাশ মিসাইল তৈরিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছে ডিফেন্স রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন (DRDO)। তাদের নেতৃত্বেই এই প্রকল্প এতদূর সফলভাবে এগিয়েছে। ভারতের এই প্রতিরক্ষা রপ্তানির তালিকায় এর আগে ভিয়েতনাম, ফিলিপিন্স, মরিশাস, আর্মেনিয়া-সহ একাধিক দেশ এসেছে, কিন্তু ব্রাজিলের মতো বড় অর্থনীতির দেশের সঙ্গে চুক্তি হলে তা নিঃসন্দেহে ভারতের আন্তর্জাতিক ভাবমূর্তিকে আরও শক্তিশালী করবে। আন্তর্জাতিক সামরিক বাজারে ভারতের প্রবেশ যেমন কঠিন ছিল, তেমনি তার প্রতিযোগিতাও প্রবল — চীন, রাশিয়া, আমেরিকার মতো শক্তিধর দেশগুলি যেখানে অস্ত্র রপ্তানিতে অনেক দিন ধরেই রাজত্ব করছে, সেখানে ভারত এই স্থানটি ছিনিয়ে নিচ্ছে ধীরে ধীরে, সেটিই সত্যিই আশাব্যঞ্জক। এই প্রেক্ষিতে রাজনৈতিক মহলেও আলোড়ন তৈরি হয়েছে। প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং বলেন, “এই জয় শুধু প্রতিরক্ষা নয়, আমাদের প্রযুক্তির জয়, আমাদের নীতি আর নেতৃত্বের জয়। বিশ্বের মানচিত্রে ভারত এখন এক শক্তিশালী অস্তিত্ব।” এইরকম এক সময়ে, যখন বিশ্বজুড়ে নিরাপত্তার প্রশ্ন বড় হয়ে উঠছে, তখন ভারতের এই প্রতিরক্ষা রপ্তানি শুধু দেশীয় শিল্প নয়, আন্তর্জাতিক কৌশলগত রাজনীতিতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। এমনকি ভূরাজনীতির দিক থেকেও ব্রাজিলের সঙ্গে সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ হওয়া দক্ষিণ গোলার্ধে ভারতের প্রভাব বিস্তারের এক সুযোগ এনে দিচ্ছে। সব মিলিয়ে ভারতীয় মাটিতে তৈরি ‘আকাশ’ এখন শুধু শত্রুর ভয় নয়, বন্ধু দেশের ভরসাও হয়ে উঠছে। যুদ্ধের গল্প থেকে রপ্তানির গল্প — ভারতীয় প্রযুক্তির এই যাত্রাপথ নিঃসন্দেহে গর্বের। এখন দেখার, ২ জুনের ব্রিকস সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী মোদির সফর কীভাবে এই সম্ভাবনাকে বাস্তব করে তোলে। তবে এটুকু বলা যায়, আকাশ এখন শুধু ভারতের গর্ব নয় — এটি হতে চলেছে ভারতের এক্সপোর্ট ব্র্যান্ড, এক প্রতীক যেটি বলছে, ‘আমরাও পারি, আমরাও গড়ি’।