Pakistan Railway Station Blast: পাকিস্তানের বালোচিস্তান প্রদেশের কোয়েটা রেলস্টেশনে এক ভয়াবহ বোমা বিস্ফোরণ ঘটেছে, যেখানে কমপক্ষে ২৪ জনের মৃত্যু হয়েছে এবং বহু মানুষ গুরুতর আহত হয়েছেন। বালোচিস্তান পুলিশের ইনস্পেক্টর জেনারেল মুজ্জম জাহ আনসারি জানিয়েছেন যে এই হামলা মূলত ইনফ্র্যান্ট্রি স্কুলের সেনা অফিসারদের লক্ষ্য করেই চালানো হয়েছিল। সিভিল হাসপাতালের মুখপাত্র ওয়াসিম বেগ জানিয়েছেন, আহত ৪৪ জনকে হাসপাতালে আনা হয়েছে এবং তাদের মধ্যে অনেকের অবস্থাই আশঙ্কাজনক। ঘটনাস্থলে থাকা প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, কোয়েটা স্টেশনে রাওয়ালপিন্ডির উদ্দেশ্যে ট্রেন ধরার জন্য অপেক্ষা করছিলেন প্রায় ১০০ জন যাত্রী, সেই সময়েই ঘটে এই বিস্ফোরণ।
এই হামলার দায় স্বীকার করেছে বালোচিস্তান লিবারেশন আর্মি, যা একটি বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠী হিসেবে পরিচিত। তারা জানিয়েছে, এটি একটি আত্মঘাতী হামলা, যা স্টেশনের সেনা অফিসারদের লক্ষ্য করে চালানো হয়েছে। বিস্ফোরণটি ছিল অত্যন্ত শক্তিশালী এবং এর অভিঘাতে স্টেশনের আশেপাশের বেশ কিছু এলাকা ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। পাকিস্তানের বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুসারে, বালোচিস্তান লিবারেশন আর্মি পূর্বেও এ ধরনের হামলা চালিয়েছে, বিশেষ করে পাকিস্তানি সুরক্ষা বাহিনী এবং সেইসব বিদেশি নাগরিকদের লক্ষ্য করে যারা চীনের বেল্ট অ্যান্ড রোড প্রকল্পের কাজের জন্য পাকিস্তানে এসেছেন।
.webp)
এই ঘটনায় স্থানীয় মানুষদের মধ্যে ব্যাপক আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে। কোয়েটার বাসিন্দা একজন বৃদ্ধ জানান, “এমন হামলা আমাদের জীবনের নিরাপত্তাকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে। আমাদের এখন চলাফেরা করাটাই যেন একটা আতঙ্কের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।” শহরের বাজার ও রেলস্টেশন সংলগ্ন এলাকাগুলিতে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে, তবে সাধারণ মানুষের মধ্যে নিরাপত্তা নিয়ে এখনও তীব্র শঙ্কা বিরাজ করছে।
বালোচিস্তানের এই ধরনের সহিংসতা নতুন কিছু নয়, তবে কোয়েটার মতো জনবহুল এলাকায় এমন একটি হামলা গোটা পাকিস্তানের নিরাপত্তা ব্যবস্থার ওপর প্রশ্ন তুলে দিয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পাকিস্তানের ভেতরে বিদ্রোহী ও বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠীর ক্রমবর্ধমান সক্রিয়তা দেশটির অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াচ্ছে। তারা আরও জানান যে এই ধরনের হামলাগুলি মূলত পাকিস্তানের সরকারের প্রতি অসন্তোষ প্রকাশের মাধ্যম। তাছাড়াও এই আক্রমণের পেছনে রয়েছে রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক কারণ, যেখানে চীনের বেল্ট অ্যান্ড রোড প্রকল্পের মত বড় বড় প্রকল্পের বিরোধিতা করা হচ্ছে। বালোচিস্তানের বাসিন্দারা তাদের নিজস্ব সম্পদের ওপর অধিকারের জন্য দীর্ঘদিন ধরে লড়াই চালিয়ে আসছেন এবং অনেকেই মনে করেন, সরকার তাদের এই দাবিগুলি গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করছে না।
এ ধরনের আত্মঘাতী হামলা পাকিস্তানের জন্য গুরুতর হুমকি, বিশেষ করে যখন বিদেশি প্রকল্পের সঙ্গে চীন ও অন্যান্য দেশের কর্মীরা জড়িত। চীনের সঙ্গে পাকিস্তানের সম্পর্ক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং চীনের নাগরিকদের সুরক্ষা বজায় রাখা পাকিস্তানের সরকারের জন্য এক বড় দায়িত্ব। কিন্তু এই ধরনের হামলা সেই নিরাপত্তা পরিস্থিতিকে মারাত্মক প্রভাবিত করে, এবং ভবিষ্যতে চীনা প্রকল্পগুলির অগ্রগতিতেও বাধা সৃষ্টি করতে পারে।
পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী এবং সেনাবাহিনী এই ঘটনার জন্য শোক প্রকাশ করেছেন এবং আহতদের দ্রুত চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে নির্দেশ দিয়েছেন। তারা বলেন, “এই হামলা দেশের সার্বভৌমত্বের ওপর আঘাত এবং আমরা এর বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করব। আমরা জনগণকে আশ্বস্ত করতে চাই যে, তাদের সুরক্ষার জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করা হবে।”
এই ঘটনা শুধু পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার জন্য নয়, বরং গোটা অঞ্চলের জন্য উদ্বেগের কারণ। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই ধরনের ঘটনার কারণে আন্তর্জাতিক মঞ্চে পাকিস্তানের ভাবমূর্তি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে, এবং দেশটির আর্থিক ও কৌশলগত অগ্রগতির ওপর এর প্রভাব পড়তে পারে।
সামগ্রিকভাবে, এই হামলা কোয়েটার সাধারণ মানুষের জীবনে এক গভীর প্রভাব ফেলেছে এবং তাদের মধ্যে নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগের সঞ্চার করেছে। অনেকেই এখন নিজেদের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন এবং এই ঘটনায় কীভাবে পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে তা নিয়ে সরকারের দিকে তাকিয়ে আছেন।