Pak Rangers captured by BSF, hope for release of Indian soldier:-রাজস্থানের সীমান্তবর্তী অঞ্চলে ঘটে যাওয়া এক নাটকীয় ঘটনার জেরে নতুন করে আলোচনায় উঠে এল ভারত-পাকিস্তান সীমান্ত সুরক্ষা ও কূটনৈতিক সম্পর্ক। গতকাল ফোর্ট আব্বাস সীমান্তে ভারতীয় সীমান্তরক্ষা বাহিনী বিএসএফ (BSF)-এর হাতে বন্দি হয়েছে এক পাকিস্তান রেঞ্জার্স জওয়ান। আর এই ঘটনাকে কেন্দ্র করেই নতুন করে আশার আলো দেখতে শুরু করেছে হুগলির রিষড়ার বাসিন্দা, পাক হেফাজতে বন্দি ভারতীয় বিএসএফ জওয়ান পূর্ণম কুমার সাউয়ের পরিবার। কারণ, ঠিক বারো দিন আগেই ফিরোজপুর সীমান্তে ডিউটিরত অবস্থায় পাক রেঞ্জার্সের হাতে ধরা পড়েন পূর্ণম। তারপর থেকেই উদ্বেগে দিন কাটছে পূর্ণমের স্ত্রী রজনী সাউ, তাঁদের ছোট সন্তান এবং পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের।যদিও এই ঘটনার পরপরই একাধিকবার ফ্ল্যাগ মিটিং-এর মাধ্যমে পূর্ণমের মুক্তির জন্য পাক সেনার সঙ্গে আলোচনা করেছে ভারতীয় কর্তৃপক্ষ, কিন্তু সেভাবে কোনো সদর্থক সাড়া মেলেনি। পাকিস্তানের তরফে বারবার নিরুৎসাহী মনোভাব ও সময়ক্ষেপণ নজরে এসেছে, যে কারণে আরও বেশি করে দুশ্চিন্তায় পড়েছিল পরিবার। তবে এবার যখন পাক রেঞ্জার্সের এক জওয়ান বিএসএফ-এর হাতে ধরা পড়েছে, তখন পরিস্থিতি ঘুরে যেতে পারে বলেই মনে করছে সংশ্লিষ্ট মহল।
পূর্ণমের স্ত্রী রজনী সাউ বলেন, “এতদিন আমরা শুধু খবরে দেখছিলাম, কিছুই হচ্ছিল না। এবার অন্তত একটা কিছু হবে বলেই মনে হচ্ছে। আমরা পাঠান কোর্ট গিয়েছিলাম, সেখানে বিএসএফ অফিসাররা আমাদের আশ্বাস দিয়েছেন। বলেছেন, পূর্ণমকে ফিরিয়ে আনার জন্য তাঁরা সবরকম চেষ্টা চালাচ্ছেন। দিল্লিতেও যাবো, উঁচু পর্যায়ের সঙ্গে কথা বলবো।”জানা গিয়েছে, আটক পাকিস্তানি রেঞ্জার্স জওয়ানকে নিয়ে ভারতীয় সেনার অভ্যন্তরীণ মহলেও চলছে চুলচেরা বিশ্লেষণ। তাঁকে হেফাজতে নেওয়ার পর জিজ্ঞাসাবাদ শুরু হয়েছে এবং তাঁর মাধ্যমে কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য উঠে আসতে পারে বলেও মনে করছে বিএসএফ। যদিও পাক রেঞ্জার্স এখনও এই ঘটনার বিষয়ে প্রকাশ্যে কোনো বিবৃতি দেয়নি, তবে অভ্যন্তরীণভাবে এই বন্দি বিনিময়ের প্রস্তাব যেতে পারে বলে কূটনৈতিক সূত্রে খবর।এই ঘটনার একটা বড় প্রভাব পড়েছে সীমান্তবর্তী গ্রামের বাসিন্দাদের মধ্যেও। পূর্ণমের নিজের এলাকা রিষড়ায় যেমন চরম উদ্বেগের পরিবেশ, তেমনই ভারত-পাক সীমান্ত লাগোয়া রাজস্থানের গ্রামগুলিতেও নজরদারি ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। বিএসএফের উচ্চপদস্থ এক আধিকারিক সংবাদমাধ্যমকে বলেন, “আমাদের এক জওয়ান এখনও পাকিস্তানে আটকে রয়েছে। আমরা আইনি ও কূটনৈতিক সব পথেই চেষ্টা চালাচ্ছি। অপরদিকে, আমাদের হাতে ধরা পড়া পাক রেঞ্জার্স সদস্যকে আন্তর্জাতিক নিয়ম মেনেই রাখা হয়েছে। আমরা আশাবাদী, শীঘ্রই একটি গ্রহণযোগ্য সমাধানে পৌঁছানো যাবে।”
এদিকে, এই ঘটনার পিছনে বড় কূটনৈতিক বার্তাও লুকিয়ে আছে। আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশেষজ্ঞ প্রফেসর রফিক আনসারি বলেন, “এই বন্দি বিনিময়ের সুযোগকে কাজে লাগিয়ে ভারত ও পাকিস্তান চাইলে একে শান্তিপূর্ণ সম্পর্ক গঠনের সূচনা করতে পারে। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে, এমন ঘটনা ঘন ঘন হলেও দুই দেশের মধ্যে বিশ্বাসের ঘাটতি এতটাই গভীর যে, তা কার্যকর নীতি হয়ে উঠতে পারে না।”পূর্ণম কুমার সাউয়ের বিষয়ে বলতে গেলে জানা যায়, তিনি প্রায় দশ বছর ধরে বিএসএফ-এ কর্মরত। নির্ভীক ও নিষ্ঠাবান এই জওয়ানকে তাঁর সহকর্মীরা খুবই শ্রদ্ধা করেন। ফিরোজপুর সেক্টরে তাঁর পোস্টিং ছিল, আর সেখান থেকেই আচমকা এক সংঘর্ষ পরিস্থিতিতে তিনি পাকিস্তান সীমান্তে চলে যান এবং ধরা পড়েন। তাঁর এক সহকর্মী জানান, “পূর্ণম স্যর খুবই সাহসী মানুষ। আমরা চাই উনি সুস্থভাবে ফিরুন। এখন আমরা সবাই মিলেই প্রার্থনা করছি।”এই মুহূর্তে দেশের প্রতিরক্ষা মহলে আলোচনার অন্যতম বিষয় হয়ে উঠেছে এই বন্দি-বিনিময়ের সম্ভাবনা। ২০০৩ সালের ‘Agreement on Consular Access’-এর আওতায় দুই দেশই পরস্পরের হেফাজতে থাকা নাগরিক ও সেনাকর্মীদের বিষয়ে তথ্য আদান-প্রদান করে এবং সুযোগ থাকলে তাঁদের মুক্তি দেওয়ার বিষয়েও কাজ করে। এবার দেখা যাক, সেই নিয়ম মেনেই কি পূর্ণমকে ফিরিয়ে আনা সম্ভব হয় কিনা।
শেষ কথা, এখন শুধু সময়ের অপেক্ষা। পূর্ণমের বাড়িতে যেন প্রতিটি মুহূর্ত দীর্ঘতর হয়ে উঠছে। প্রতীক্ষার প্রহর গুনছেন স্ত্রী রজনী, ছোট ছেলেটি বাবার ফিরে আসার অপেক্ষায়। পরিবার বলছে, “আমরা জানি আমাদের পূর্ণম ফিরে আসবেই। দেশ তাঁকে ফিরিয়ে আনবেই। এখন সেই বিশ্বাস নিয়েই আমরা অপেক্ষা করছি।”এই ঘটনায় আবারও সামনে উঠে এল সীমান্তে কর্মরত প্রতিটি জওয়ানের অনিশ্চিত বাস্তবতা, তাঁদের জীবনের ঝুঁকি এবং পরিবারগুলোর মানসিক যন্ত্রণা। শুধু কূটনৈতিক স্তরে আলোচনা নয়, মানবিকতার দিক থেকেও এই ঘটনাটি দুই দেশের সামনে এক বড় প্রশ্নচিহ্ন তুলে ধরেছে।