Tuesday, July 15, 2025
Google search engine
Homeপশ্চিমবঙ্গআসানসোলবারাবনি থানার উদ্যোগে গ্রামের ছেলেদের হাতে ফুটবল বিতরণ

বারাবনি থানার উদ্যোগে গ্রামের ছেলেদের হাতে ফুটবল বিতরণ

Owner of rights of members in the group in Barabani allegations : একটা ছোট্ট গ্রামে মাঠে যখন সন্ধ্যার আলো পড়ে, তখনও যদি দেখা যায় মাটি ঘেঁষে দৌড়চ্ছে একদল ছেলে, হাতে ফুটবল, মুখে হাসি, আর মনে নতুন স্বপ্ন—তবে ধরে নিতে হবে সেখানেই সমাজ বদলের বীজ রোপিত হচ্ছে। ঠিক এমনই এক হৃদয়ছোঁয়া দৃশ্যের সাক্ষী থাকল পশ্চিম বর্ধমান জেলার বারাবনি থানা এবং তার অন্তর্গত কয়েকটি গ্রাম, যেখানে সম্প্রতি বারাবনি থানার বিশেষ উদ্যোগে প্রায় ১০০টি ফুটবল গ্রামের ছেলেদের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। শুধু একটি খেলার উপকরণ নয়, এই ফুটবলগুলির প্রতিটিতে লুকিয়ে আছে অনেকগুলো ছোট ছোট ছেলেমেয়ের ভবিষ্যতের সম্ভাবনা, তাদের জীবনের আশার আলো, আর সমাজের প্রতি পুলিশের এক নতুন মানবিক বার্তা। বারাবনি থানার ভারপ্রাপ্ত অফিসার দিব্যেন্দু মুখার্জি, সাব-ইন্সপেক্টর সঞ্জয় ঘোষ ও ইন্সপেক্টর শামসুল জোহা এই পুরো উদ্যোগটির নেতৃত্ব দেন, যেখানে তাঁরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে গ্রামের কচিকাঁচাদের হাতে ফুটবল তুলে দেন এবং বলেন, “এই গ্রামের ছেলেমেয়েরা যাতে খেলার মাধ্যমে নিজেকে গড়ে তুলতে পারে, সেই দিকেই আমাদের এই ছোট্ট প্রয়াস।

আগামীদিনে আরও প্রায় ২০টি ফুটবল বিভিন্ন গ্রামের দলকে দেওয়া হবে। ফুটবল শুধু খেলা নয়, এটা একধরনের সামাজিক দায়িত্ব।” এই উদ্যোগকে কেন্দ্র করে গোটা এলাকায় এক অভাবনীয় উৎসবমুখর পরিবেশ তৈরি হয়। গ্রামের মানুষ, বিশেষ করে অভিভাবকরা, পুলিশের এমন সামাজিক ভূমিকায় আপ্লুত। অজয় নদী সংলগ্ন এই বারাবনি থানা বরাবরই কিছুটা সীমান্তবর্তী এলাকা হিসেবে পরিচিত, যেখানে কর্মসংস্থানের অভাব, খেলার অভাবে যুব সমাজ বিপথে যাওয়ার আশঙ্কা ইদানীং কিছুটা বেড়েই চলেছে। ঠিক এই পরিস্থিতিতে থানা প্রশাসনের এমন পদক্ষেপ নিঃসন্দেহে নজিরবিহীন। এক অভিভাবক বলছিলেন, “আমার ছেলে আগে শুধু মোবাইল নিয়েই থাকত, এখন ফুটবল হাতে পাওয়ার পর মাঠেই ছুটছে… এটা যে কী শান্তির, বুঝিয়ে বলা যাবে না।” বারাবনির খুদে খেলোয়াড়েরা এখন রোজ মাঠে যাচ্ছে, জুতো থাক বা না থাক, মনটা কিন্তু আগের থেকে অনেক বেশি আশাবাদী। এলাকার সমাজকর্মী মধুসূদন পাল বলেন, “এই অঞ্চলে ছেলেমেয়েদের শারীরিক এবং মানসিক বিকাশের জন্য খেলাধুলার কোনোরকম ব্যবস্থা নেই বললেই চলে। থানা থেকে এই উদ্যোগ নেওয়া নিঃসন্দেহে এক যুগান্তকারী পদক্ষেপ।

” উল্লেখ্য, বারাবনি থানা আগেও নানা সমাজকল্যাণমূলক কাজের জন্য পরিচিত হয়েছে, তবে এভাবে প্রত্যক্ষভাবে গ্রামের যুব সমাজের মাঝে খেলার জিনিস পৌঁছে দেওয়া এই প্রথম। ছোট ছোট গ্রামের দলগুলোর মধ্যে এখন একটা নিরব প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে—কে কত ভালো খেলবে, কারা আরও ফুটবল পাবে, আর কাদেরকে ভবিষ্যতে জেলার প্রতিনিধিত্ব করার সুযোগ দেওয়া হবে। যারা আগে স্রেফ গ্যালারিতে দাঁড়িয়ে অন্যদের খেলা দেখত, তারাও এখন বল হাতে মাঠে নামছে। স্থানীয় স্কুলগুলিও এই পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়েছে। হেডমাস্টার প্রবীর সরকার জানান, “আমরা চেষ্টা করছি স্কুলস্তরেও খেলাধুলাকে আরও গুরুত্ব দিতে। থানার এই সাহায্যে বাচ্চারা অনেক বেশি উৎসাহ পাচ্ছে।” বারাবনি থানা সূত্রে জানা গেছে, আগামী দিনে স্কুল পর্যায়ে একটি আন্তঃগ্রামীণ ফুটবল প্রতিযোগিতার পরিকল্পনা রয়েছে, যেখানে এই বিতরণ করা ফুটবলই হয়ে উঠবে যুব শক্তির প্রতীক। শুধুমাত্র ক্রীড়া নয়, সামাজিক সম্প্রীতির ক্ষেত্রেও এটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। থানার অফিসাররা জানান, গ্রামের যুব সম্প্রদায়ের সঙ্গে পুলিশের সম্পর্ক আরও দৃঢ় করতে তারা ভবিষ্যতে এমন আরও উদ্যোগ নেবেন।

অনেক ছেলেই জানিয়েছে তারা পুলিশকেও এখন এক ‘বন্ধু’র মতো ভাবছে। পশ্চিমবঙ্গ পুলিশের এই মানবিক মুখ, যা এতদিন হয়তো শুধু বড় শহরের সোশ্যাল মিডিয়াতেই দেখা যেত, এবার সেটা বাস্তব হয়ে উঠল বারাবনির মতো গ্রামাঞ্চলেও। ফুটবল হাতে পাওয়া কয়েকজন ছাত্র যেমন শুভম, রঞ্জিত, মুন্না, কিশোরের মুখে একটাই কথা— “আমরা একদিন বড় খেলোয়াড় হবো, আমাদের গ্রামের নাম উঠবে খবর কাগজে!” শোনা যায়, কিছু স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাও বারাবনির এই উদ্যোগে সামিল হতে চায় এবং তারা খেলোয়াড়দের জার্সি ও জুতো দেওয়ার কথা ভাবছে। ফুটবল বিতরণ কর্মসূচিটি শেষ হয়েছিল জাতীয় সংগীতের মাধ্যমে, যেটি যেন প্রতীক হয়ে দাঁড়াল এই নতুন সূচনার, যেখানে খেলাধুলা হবে সমাজ গঠনের হাতিয়ার। সমাজ যদি এগিয়ে আসে, প্রশাসন যদি পাশে থাকে, তাহলে এমন হাজারো শুভমদের জীবনে সত্যিই আলো ফোটে। বারাবনি থানার এই উদ্যোগ যেন পশ্চিম বর্ধমান জেলার একটা দৃষ্টান্ত হয়ে রইল। এটাকে শুধু বল দেওয়া নয়, বলা যেতে পারে—‘স্বপ্ন’ দেওয়া, বিশ্বাস দেওয়া, আর সমাজের কাছে পুলিশের একটি সুন্দর বার্তা: “আমরা আছি, শুধু নিরাপত্তা দিতে নয়, আশাও জাগাতে।”

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments