On the eve of the Gangesagar Mela, the holy monks are gathering: পৌষ মাস বাঙালিদের কাছে শুধু পিঠে-পুলির মাস নয়, বরং গঙ্গাসাগরে পুণ্যস্নানের সময়। আর এই পুণ্যস্নান উপলক্ষে প্রতিবছর গঙ্গাসাগর মেলার আগে বাবুঘাটে সাধু-সন্ন্যাসীদের ভিড় জমে ওঠে। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। কয়েকদিন আগে থেকেই বাবুঘাটে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে সাধু-সন্ন্যাসীরা এসে উপস্থিত হয়েছেন। তাঁরা গঙ্গাসাগরের উদ্দেশ্যে রওনা হওয়ার আগে এখানে তাঁদের আখড়া তৈরি করেছেন, যা বাবুঘাটের পরিবেশকে সম্পূর্ণ অন্য রূপ দিয়েছে।গঙ্গাসাগর মেলা শুরু হওয়ার বেশ কিছুদিন আগে থেকেই কলকাতার বাবুঘাটে সাধু-সন্ন্যাসীদের দেখা মিলতে শুরু করে। এবছরও প্রায় হাজারখানেক সাধু-সন্ন্যাসী ইতিমধ্যেই সেখানে এসে পৌঁছেছেন। সন্ধ্যা নামলেই তাঁদের আখড়াগুলো আলোয় ভরে ওঠে এবং সাধারণ মানুষের ভিড় জমে যায়।
সাধারণত শীতকালে বাবুঘাটের এই অংশ ফাঁকা পড়ে থাকে। কিন্তু গঙ্গাসাগর মেলার প্রাক্কালে সাধু-সন্ন্যাসীদের উপস্থিতি এলাকায় এক উৎসবের আমেজ নিয়ে এসেছে।সাধু-সন্ন্যাসীরা তাঁদের আখড়ায় সারা দিন ধরে সাধনা, ধুনির আগুনে পুজো এবং ভক্তদের সঙ্গে আলাপচারিতায় ব্যস্ত থাকেন। তাঁদের কাছাকাছি সময় কাটানোর জন্য শহরের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মানুষ এসে ভিড় করেন। সাধারণ মানুষদের জন্য এটি এক আকর্ষণীয় অভিজ্ঞতা। বাবুঘাটে পৌঁছে স্থানীয় বাসিন্দা সুজাতা সেন বলেন, “এখানে এসে মনে হচ্ছে, এক অন্য জগতে চলে এসেছি। সাধুদের সঙ্গে কথা বলে মনে শান্তি পাই।”গঙ্গাসাগর মেলা উপলক্ষে রাজ্য প্রশাসন ইতিমধ্যেই প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছে। বাবুঘাট থেকে সাগর পর্যন্ত পথের নিরাপত্তা এবং যাত্রী পরিষেবার দায়িত্বে একাধিক টিম কাজ করছে। কলকাতার বাবুঘাট এলাকায় সিসি ক্যামেরার সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে এবং অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
দক্ষিণ ২৪ পরগনার জেলা প্রশাসন জানিয়েছে, গঙ্গাসাগর মেলায় আগত মানুষের ভিড় সামলাতে বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। বিভিন্ন পয়েন্টে নাকা চেকিং এবং পর্যাপ্ত স্বেচ্ছাসেবী দল মোতায়েন করা হয়েছে।গঙ্গাসাগর মেলা শুধু মেলা নয়; এটি একটি ধর্মীয় এবং সামাজিক মিলনক্ষেত্র। সাধু-সন্ন্যাসীদের উপস্থিতি এই মেলার অন্যতম মূল আকর্ষণ। উত্তরপ্রদেশ থেকে আগত এক সন্ন্যাসী, মহাদেবানন্দ বলেন, “গঙ্গাসাগর আমাদের কাছে পবিত্র স্থান। এখানে এসে স্নান করলে জীবন পরিশুদ্ধ হয়। আমরা এখানে এসে সবার জন্য আশীর্বাদ করি।”
কলকাতার বাসিন্দা রজত দাস বলেন, “সাধুদের কাছাকাছি এসে তাঁদের জীবনযাত্রা সম্পর্কে জানা যায়। এটি আমাদের জন্য একটি বিরল অভিজ্ঞতা। এরা আমাদের ঐতিহ্যের প্রতীক।”গঙ্গাসাগর মেলা শুধুমাত্র একটি ধর্মীয় উৎসব নয়, বরং স্থানীয় অর্থনীতির জন্য এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্রতিবছর লাখো মানুষ এই মেলায় যোগ দিতে আসেন। তাঁদের আনাগোনা স্থানীয় ব্যবসায়ীদের আয়ের সুযোগ করে দেয়।গঙ্গাসাগর মেলা কমিটির সদস্য কৌশিক মণ্ডল বলেন, “মেলা শুধু পুণ্যস্নান নয়, এটি আমাদের স্থানীয় অর্থনীতির একটি বড় অংশ। ভ্রমণ, খাবার এবং হস্তশিল্পের বিক্রির মাধ্যমে স্থানীয় মানুষ উপকৃত হন।”গঙ্গাসাগর মেলা এবং তার সঙ্গে জড়িত আয়োজনগুলি বাংলার ঐতিহ্য এবং সংস্কৃতির এক অনন্য দৃষ্টান্ত। এটি শুধু দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ভক্তদের আকর্ষণ করে না, বরং বিদেশি পর্যটকদেরও কাছে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।রাজ্যের পর্যটন দফতর গঙ্গাসাগর মেলাকে আন্তর্জাতিক পর্যটন মানচিত্রে তুলে ধরার জন্য বিশেষ পরিকল্পনা করছে। যদি সঠিকভাবে পরিচালিত হয়, তবে এই মেলা ভবিষ্যতে বাংলার অর্থনীতি এবং পর্যটন শিল্পে আরও বড় অবদান রাখতে পারে।