North Korea built a suicide drone using AI:-বিশ্বজুড়ে যখন প্রযুক্তিগত উন্নয়ন মানুষের জীবনকে আরও সহজ আর সুরক্ষিত করার লক্ষ্যে এগিয়ে চলেছে, তখন উত্তর কোরিয়া আবারও নতুন আতঙ্কের জন্ম দিল। এআই বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (Artificial Intelligence)-কে ব্যবহার করে আত্মঘাতী ড্রোন বানিয়ে সফল পরীক্ষার দাবি করেছে দেশটি। বৃহস্পতিবার উত্তর কোরিয়ার সরকারি সংবাদমাধ্যম ‘কোরিয়ান সেন্ট্রাল নিউজ এজেন্সি’ (KCNA)-তে জানানো হয়েছে, এই ড্রোনের সফল পরীক্ষা পর্যবেক্ষণ করেছেন স্বয়ং উত্তর কোরিয়ার একনায়ক কিম জং-উন। ড্রোনের সঙ্গে কিমের একটি ছবিও প্রকাশ করেছে সংবাদমাধ্যমটি। এই খবর প্রকাশের পরই আন্তর্জাতিক মহলে চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়েছে। এই ড্রোনগুলোর বিশেষত্ব হল, এগুলো এআই প্রযুক্তির মাধ্যমে উড়ন্ত অবস্থাতেই শত্রুপক্ষের অবস্থান শনাক্ত করতে পারে এবং সেই অনুযায়ী আত্মঘাতী হামলা চালায়। অর্থাৎ, শত্রুপক্ষের কোনও অস্ত্রাগার বা গুরুত্বপূর্ণ ঘাঁটির দিকে উড়ে গিয়ে নিজেকে বিস্ফোরণ ঘটিয়ে ধ্বংস করতে পারে এই ড্রোন। KCNA-র প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, কিম জং-উন বিভিন্ন ধরনের হামলাকারী এবং গুপ্তচর ড্রোনের কার্যকারিতা খুঁটিয়ে দেখেছেন এবং ড্রোনগুলোর উন্নত ইলেকট্রনিক জ্যামিং সিস্টেমের প্রশংসা করেছেন।উত্তর কোরিয়া স্পষ্টভাবে এই ড্রোন পরীক্ষার উদ্দেশ্য প্রকাশ না করলেও বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এটির প্রধান লক্ষ্য হলো তাদের প্রতিদ্বন্দ্বী দক্ষিণ কোরিয়া এবং পশ্চিমা শক্তিগুলোকে সামরিকভাবে ভয় দেখানো। গত বছরও এই ধরনের প্রযুক্তি ব্যবহার করে দক্ষিণ কোরিয়ার আকাশসীমায় অনুপ্রবেশ করেছিল উত্তর কোরিয়ার ড্রোন। ফলে এই আত্মঘাতী ড্রোনের পরীক্ষার ঘোষণায় দক্ষিণ কোরিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা মহলে উদ্বেগ বেড়েছে।
এই ড্রোনের আসল ভয়ংকর দিক হলো এআই প্রযুক্তির ব্যবহার। সাধারণ ড্রোনের মতো এটি কেবল রিমোট কন্ট্রোলে পরিচালিত নয়, বরং নিজেই শত্রু শনাক্ত করে হামলা চালাতে পারে। এর ফলে যদি কোনও প্রযুক্তিগত ত্রুটি বা এআই ব্যবস্থায় ভুল তথ্য চলে আসে, তাহলে তা অনিচ্ছাকৃত ধ্বংসযজ্ঞের কারণ হতে পারে। এমনকি এই ড্রোন ভবিষ্যতে নিরীহ মানুষের উপরও ভুলবশত হামলা চালাতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা।পশ্চিমা প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞদের মতে, উত্তর কোরিয়ার এই ড্রোন প্রকল্পের পেছনে চিনের প্রযুক্তিগত সহায়তা রয়েছে। কয়েকদিন আগেই চিনের সরকারি সংবাদমাধ্যম ‘সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট’ জানিয়েছিল, তারা এআই প্রযুক্তি-যুক্ত একটি ড্রোনের সফল পরীক্ষা চালিয়েছে।
চিন ও উত্তর কোরিয়ার দীর্ঘদিনের সামরিক সম্পর্ক এবং প্রযুক্তিগত সহযোগিতা থাকায় মনে করা হচ্ছে, চিনের প্রযুক্তি ব্যবহার করেই কিমের দেশ এই ড্রোন তৈরি করেছে। তবে এই অভিযোগ নিয়ে উত্তর কোরিয়া বা চিন কেউই এখনও কোনও প্রতিক্রিয়া জানায়নি।উত্তর কোরিয়ার এই পদক্ষেপের পর আন্তর্জাতিক মহলে উদ্বেগ বেড়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং জাতিসংঘ ইতিমধ্যেই উত্তর কোরিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন পরীক্ষার উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করলেও কিম প্রশাসন বারবার সেই নিষেধাজ্ঞা লঙ্ঘন করে সামরিক পরীক্ষা চালিয়ে চলেছে। আত্মঘাতী ড্রোনের সফল পরীক্ষার খবর ছড়িয়ে পড়ার পর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং দক্ষিণ কোরিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রক বিষয়টি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছে বলে জানিয়েছে।
উত্তর কোরিয়ার সাধারণ জনগণের কাছে এই ধরনের ড্রোন পরীক্ষার খবর কতটা পৌঁছেছে, তা নিয়ে ধোঁয়াশা থাকলেও দক্ষিণ কোরিয়ার মানুষজন এই খবরে বেশ আতঙ্কিত। দক্ষিণ কোরিয়ার রাজধানী সিওলে বসবাসকারী এক বাসিন্দা লি চাং-হো জানালেন, ‘‘আমাদের সীমান্তের ওপারে কী হচ্ছে, তা আমরা নিয়মিত খোঁজ রাখি। আত্মঘাতী ড্রোনের খবর শুনে খুব ভয় লাগছে। আশা করি আমাদের সরকার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে।’’উত্তর কোরিয়ার এই ড্রোন প্রযুক্তি নিয়ে আন্তর্জাতিক রাজনীতি আরও জটিল হয়ে উঠতে পারে। যদি কিম জং-উন এই ধরনের আরও ড্রোন তৈরি করতে শুরু করেন, তাহলে দক্ষিণ কোরিয়া, জাপান এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকেও নিজেদের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা আরও শক্তিশালী করতে হবে। এর ফলে এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে অস্ত্র প্রতিযোগিতা বাড়বে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI)-র ব্যবহার আজ যেখানে মানবজাতির উন্নয়নের জন্য কাজে লাগানোর চেষ্টা চলছে, সেখানে উত্তর কোরিয়ার মতো দেশের এই ধরনের সামরিক পদক্ষেপ বিশ্বশান্তির জন্য বড় হুমকি হয়ে উঠতে পারে। আত্মঘাতী ড্রোনের মতো প্রযুক্তি শুধু যুদ্ধক্ষেত্রেই নয়, সন্ত্রাসবাদী গোষ্ঠীর হাতেও পড়ার আশঙ্কা রয়েছে, যা গোটা মানবজাতির জন্যই বিপজ্জনক। এখন দেখার বিষয়, আন্তর্জাতিক মহল এই পরিস্থিতি সামাল দিতে কী পদক্ষেপ নেয়।