No Puja in the Village, Residents are Disheartened: এই বছর গ্রামে নেই দুর্গাপুজো। দীর্ঘ ৫০ বছরের পুরনো ঐতিহ্য এই বছর ভেঙে গেল। গ্রামটির নাম ছোট ভগীরথপুর। প্রতি বছর শারদীয়ার সময় এই গ্রামে মহা ধুমধামের সাথে দুর্গাপুজো পালিত হত। পুরো গ্রাম যেন উৎসবের রঙে রাঙিয়ে উঠত। কিন্তু এ বছর সেই ধুমধাম নেই, সেই আনন্দ নেই। গ্রামে পুজো না হওয়ার কারণ, বাসিন্দাদের প্রতিক্রিয়া এবং এই ঘটনার ভবিষ্যৎ প্রভাব নিয়ে আমরা এক গভীর আলোচনায় প্রবেশ করব।
গ্রামের বড়দের মুখ থেকে জানা গেল, এই বছর পুজোর আয়োজন করার জন্য প্রয়োজনীয় অর্থের অভাব। ছোট ভগীরথপুরের পুজোটা গ্রামের সকল বাসিন্দাদের দ্বারা পরিচালিত হয়। গ্রামের মানুষরা সামান্য চাঁদা দিয়ে পুজোর খরচ যোগাড় করেন। কিন্তু এ বছর অর্থের যোগাড় করা সম্ভব হয়নি। মূলত কয়েকজন গ্রামবাসী, যারা কর্মসূত্রে বাইরে থাকেন, তারা পুজোর জন্য বড় অঙ্কের অর্থ সাহায্য করতেন। কিন্তু তারা এ বছর আর্থিক সংকটের কারণে সাহায্য করতে পারেননি। ফলে গ্রামের পুজো স্থগিত রাখতে হয়েছে।
পুজো না হওয়ায় গ্রামের মানুষদের মধ্যে চরম হতাশা। বৃদ্ধা সন্ধ্যা রায় জানালেন, “আমরা ছোটবেলা থেকেই পুজো দেখে আসছি। এই পুজো আমাদের সংস্কৃতির অংশ। এবছর পুজো না হওয়ায় মনটা খুব খারাপ। চারপাশ যেন শূন্য লাগছে।” গ্রামের যুবক তপন মন্ডলও বলেন, “আমরা ছোট থেকে এই পুজোতে আনন্দ করে বড় হয়েছি। এবার সেই আনন্দ নেই। শুধু গ্রামের শূন্যতা দেখতে পাচ্ছি।”

অনেক বাসিন্দা আবার গ্রাম পঞ্চায়েতের দিকেও অভিযোগ তুলেছেন। তারা মনে করছেন, গ্রাম পঞ্চায়েত যদি সহযোগিতা করত, তাহলে পুজো স্থগিত করতে হত না। গ্রামের এক প্রবীণ বাসিন্দা হরিহর সাহা বললেন, “পঞ্চায়েত যদি একটু সাহায্য করত, তাহলে আমাদের পুজোটা চালিয়ে যাওয়া যেত। পুজোটা তো শুধু আমাদের না, পুরো গ্রামের ব্যাপার।”
এই পুজো শুধু ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠান নয়, এটা ছিল গ্রামের মানুষের মিলনের সময়। দুর্গাপুজোর সময় প্রতিটি পরিবার একসাথে সময় কাটাতো, মন্দিরে ভক্তি নিবেদন করত এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান উপভোগ করত। গ্রামের ছোটদের জন্য পুজো মানে ছিল নতুন জামা-কাপড়, নাচ-গান, এবং মেলার আনন্দ। এই পুজো ছিল গ্রামের ঐতিহ্য। এখন পুজো বন্ধ হওয়ায় গ্রামের ঐতিহ্যবাহী সংস্কৃতি ভাঙনের মুখে পড়েছে।
একজন গ্রামবাসী এবং স্কুল শিক্ষক সুব্রত মন্ডল জানান, “পুজো শুধু ধর্মীয় উৎসব নয়, এটা ছিল আমাদের গ্রামের এক বৃহৎ সামাজিক উৎসব। পুজোতে আমরা সবাই এক হয়ে যেতাম। এবছর সেই মিলন মেলার আয়োজন না হওয়ায় গ্রামের সংস্কৃতি একটা বড় ধাক্কা খেয়েছে।”

পুজো বন্ধ হওয়ায় গ্রামের মানুষজন এই নিয়ে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা করছেন। গ্রামবাসীদের মতে, পুজো বন্ধ হওয়ার পিছনে শুধু অর্থের অভাব নয়, বর্তমানে তরুণ প্রজন্মের মধ্যে উৎসাহের অভাবও একটা কারণ। তবুও তারা আশা করছেন, পরের বছর থেকে তারা আবার পুজো করতে পারবেন। গ্রামের যুবকরা উদ্যোগ নিচ্ছেন আগামী বছরের জন্য তহবিল গঠন করতে। তারা গ্রামবাসীদের মধ্যে নতুন উদ্যম তৈরি করতে কাজ করবেন বলে জানিয়েছেন।
গ্রামের প্রবীণ ব্যক্তি ধীরেন সাঁতরা বলেন, “আমাদের নতুন প্রজন্মকেই এগিয়ে আসতে হবে। পুজোটা শুধু ধর্মীয় নয়, এটি সামাজিক বন্ধনের প্রতীক। আমরা চাই আগামী বছর থেকে আমাদের গ্রামে আবার সেই পুজো ফিরে আসুক।”
পুজো না হওয়া মানে শুধু ধর্মীয় আনুষ্ঠানিকতার অভাব নয়, এটা গ্রামবাসীদের জন্য বড় মানসিক আঘাত। গ্রামের মানুষেরা একসাথে মিলিত হওয়ার, আনন্দ ভাগাভাগি করার এক অন্যতম সময় ছিল এই পুজো। কিন্তু এ বছর সেই উৎসবের অনুপস্থিতি তাদের জীবনে এক বিশাল শূন্যতা তৈরি করেছে। তবুও গ্রামের মানুষদের আশা, আগামী বছর থেকে আবার সেই পুজো ফিরিয়ে আনা সম্ভব হবে।

এই ঘটনার মাধ্যমে আমরা দেখতে পাচ্ছি, কিভাবে অর্থনৈতিক সংকট এবং সামাজিক উদ্যোগের অভাবে গ্রামের ঐতিহ্যবাহী অনুষ্ঠানগুলো হারিয়ে যেতে পারে। ভবিষ্যতে এই ধরনের ঘটনা রোধ করতে হলে, স্থানীয় প্রশাসন এবং গ্রামবাসীদের মধ্যে সমন্বয় অত্যন্ত প্রয়োজন।
ছোট ভগীরথপুরের দুর্গাপুজো বন্ধ হওয়া গ্রামের মানুষের জীবনে বড় প্রভাব ফেলেছে। এটি শুধু ধর্মীয় অনুষ্ঠানের অভাব নয়, বরং গ্রামের সাংস্কৃতিক এবং সামাজিক বন্ধনের উপর একটি বিরাট ধাক্কা। তবুও, গ্রামের মানুষজন আশাবাদী যে পরের বছর থেকে পুজো আবার শুরু হবে, এবং গ্রামের ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনা সম্ভব হবে। এ ঘটনাটি আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয় যে, শুধুমাত্র অর্থ নয়, সামাজিক অংশগ্রহণ এবং সম্প্রদায়ের চেতনা একটি উৎসবের মূল ভিত্তি।