NITI Aayog report shows Bihar’s footprint on Bengal map : নীতি আয়োগ—দেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রীয় পরিকল্পনা সংস্থা, যার উপর রাজ্যগুলোর উন্নয়ন ও নীতি নির্ধারণে বহু দায়িত্ব বর্তায়। সেই নীতি আয়োগের একটি বার্ষিক রিপোর্টেই এবার ধরা পড়ল এক চরম বিভ্রান্তিকর ভুল। বাংলার জন্য তৈরি করা রিপোর্টের প্রচ্ছদে রাজ্যের অবস্থান ভুলভাবে বিহারের জায়গায় দেখানো হয়েছে মানচিত্রে! এমন মারাত্মক ভুল সামনে আসতেই রীতিমতো তোলপাড় শুরু হয় বাংলার প্রশাসন ও রাজনীতির অন্দরমহলে। রাজ্যজুড়ে ক্ষোভে ফেটে পড়েন সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে শাসকদলের শীর্ষ নেতৃত্ব। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এই ঘটনাকে অপমানজনক ও গুরুতর অবহেলা বলে অভিহিত করে তৎক্ষণাৎ নীতি আয়োগের ভাইস চেয়ারপার্সন সৌম্য কান্তি ঘোষকে একটি চিঠি পাঠান।
চিঠিতে তিনি সরাসরি প্রশ্ন তোলেন, “বাংলা সংক্রান্ত একটি গুরুত্বপূর্ণ রিপোর্টে যদি বাংলার মানচিত্রই ভুল হয়, তবে আমাদের রাজ্যের উন্নয়ন সম্পর্কিত পরিসংখ্যান ও বিশ্লেষণের কতটা নির্ভরযোগ্যতা আছে?” ওই চিঠির পরিপ্রেক্ষিতেই তড়িঘড়ি রিপোর্টটি ওয়েবসাইট থেকে সরিয়ে নেয় নীতি আয়োগ এবং পরে নতুনভাবে সংশোধিত সংস্করণ প্রকাশ করা হয়, যেখানে মানচিত্রটি সঠিকভাবে আপডেট করা হয়। তবে প্রশ্ন উঠেছে, এই ভুল কি নিছক অসতর্কতায় ঘটেছে, না কি এর পেছনে রয়েছে কোনো রাজনৈতিক অবজ্ঞা বা অদক্ষতা? তৃণমূল কংগ্রেসের মুখপাত্র কুণাল ঘোষ একে ‘রাজ্যকে হেয় প্রতিপন্ন করার চেষ্টা’ বলে কড়া ভাষায় সমালোচনা করেন। তিনি বলেন, “এই ভুলকে কেবল মানচিত্রের ভুল বলে উড়িয়ে দিলে চলবে না।
এটি এক ধরনের মনোভাব, যার মাধ্যমে বাংলাকে গুরুত্বহীন করে দেখানোর প্রবণতা দেখা যাচ্ছে কেন্দ্রের একাধিক দপ্তরে।” রাজ্যের তথ্য ও সংস্কৃতি দপ্তরের মন্ত্রী ইন্দ্রনীল সেন এই ঘটনাকে ‘অসম্মানজনক’ বলে মন্তব্য করেন। সাধারণ মানুষের মধ্যে এই ঘটনাকে ঘিরে তৈরি হয়েছে ব্যাপক ক্ষোভ।অনেকে লিখছেন, “যদি নীতি আয়োগ বাংলার অবস্থান না-ই জানে, তাহলে বাংলার জন্য কী নীতি বানাবে ওরা?” কেউ কেউ আবার এর পেছনে ‘রাজনৈতিক উদ্দেশ্য’ খুঁজে পাচ্ছেন। এমনকী, বিভিন্ন বিদ্বজ্জনেরাও একে প্রশাসনিক গাফিলতি বলে কটাক্ষ করছেন। বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও রাজ্য সরকারের প্রাক্তন উপদেষ্টা ড. সুভাষ দাস বলছেন, “এই ধরনের ভুল একেবারে অনভিপ্রেত এবং রাজ্য সম্পর্কে কেন্দ্রীয় প্রশাসনের অসচেতন মানসিকতার প্রতিফলন।” ঘটনাটি এমন সময় সামনে এল, যখন কেন্দ্র-রাজ্যের সম্পর্ক বেশ কিছু বিষয়ে ইতিমধ্যেই উত্তপ্ত, যেমন জিএসটি ভাগাভাগি, বকেয়া ফান্ড, কেন্দ্রীয় প্রকল্পে রাজ্যের অংশীদারিত্ব ইত্যাদি। এই মানচিত্র বিভ্রাট সেই সম্পর্ককে আরও চাপে ফেলল বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।