Saturday, July 26, 2025
Google search engine
Homeটপ 10 নিউসইউজিসি নেটে দেশের সেরা পূর্ব বর্ধমানের নিলুফা

ইউজিসি নেটে দেশের সেরা পূর্ব বর্ধমানের নিলুফা

Nilufa from Purba Burdwan is the best in the country in UGC NET : বাংলা নিয়ে পড়ে কী হবে?” — বহু ছাত্র-ছাত্রীকে, বিশেষত মফঃস্বলের মেয়েদের, এই প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হয় বারবার। কিন্তু পূর্ব বর্ধমানের কাটোয়ার মেয়ে নিলুফা ইয়াসমিন সেই প্রশ্নের জবাব দিলেন নিঃশব্দ অথচ দৃষ্টান্তমূলক সাফল্যের মাধ্যমে। বাংলা সাহিত্যের পাঠ ও গানের চর্চাকে সম্বল করে ২০২৫ সালের জুন মাসে প্রকাশিত ইউজিসি নেট পরীক্ষায় বাংলা বিষয়ে দেশসেরা হয়েছেন নিলুফা। ৩ হাজার ৬৮৪ জনের মধ্যে সর্বভারতীয় স্তরে বাংলা বিষয়ে প্রথম স্থান অধিকার করেছেন তিনি। তার প্রাপ্ত নম্বর—১০০ পার্সেন্টাইল। সেই সাফল্যে কেবল তার নিজের পরিবার নয়, গর্বিত তার গোটা জেলা, রাজ্য এবং বাংলা ভাষাপ্রেমী সমাজ।নেট পরীক্ষায় জেআরএফ এবং অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রফেসরের যোগ্যতা অর্জন করা সাধারণত কোনও সহজ কাজ নয়। হাজার হাজার প্রতিযোগীর মধ্যে নিজেকে প্রমাণ করে সর্বোচ্চ স্থানে পৌঁছানো একান্তই কঠোর অধ্যবসায়, সৃজনশীলতা, এবং একাগ্রতার ফল। নিলুফা জানিয়েছেন, “আমি সবসময় বই ও গানের মধ্যে নিজেকে খুঁজে পেয়েছি। বাংলা সাহিত্য শুধু পড়িনি, অনুভব করেছি। আমার পিএইচডি-র বিষয়টাও তাই বেছে নিয়েছি যেখানে এই দুইয়ের মেলবন্ধন রয়েছে।”

বর্তমানে বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে গবেষণারত নিলুফা মধ্যযুগের বাংলা সাহিত্যে ‘পদাবলি’ কাব্যের ওপর এবং বিভিন্ন জনগোষ্ঠীর লোকগানের প্রভাব নিয়ে গবেষণা করছেন। তার মতে, “সাহিত্যের সাথে সংগীত এক অন্তর্নিহিত যোগসূত্র গড়ে তোলে, যা ইতিহাস, সংস্কৃতি ও মানসিকতার দৃষ্টিভঙ্গি নির্মাণে সাহায্য করে।”নিলুফার এই সাফল্যে খুশি হয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও তাকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। তিনি তাঁর এক্স (পূর্বতন টুইটার) হ্যান্ডলে লেখেন— “২০২৫-এর ইউজিসি নেট জুনের ফলাফলে পূর্ব বর্ধমানের কাটোয়ার নিলুফা ইয়াসমিনকে বাংলায় ১০০ পার্সেন্টাইল পাওয়ার জন্য শুভেচ্ছা রইল। তোমাদের কৃতিত্বে রাজ্য গর্বিত। তোমাদের মা-বাবা, অভিভাবক এবং শিক্ষকদেরও অভিনন্দন।”

WhatsApp Image 2025 07 25 at 19.15.48 496a0c34

সাহিত্য জগতে নিলুফার মতো ছাত্রীর উত্থান অনেকের কাছেই অনুপ্রেরণার উৎস হয়ে উঠছে। শিক্ষকরা জানাচ্ছেন, এই ফলাফলে বাংলা সাহিত্য নিয়ে পড়তে আগ্রহী নতুন প্রজন্ম এক নতুন বার্তা পাবে— সাহিত্য কেবল পঠন নয়, বরং গবেষণারও বিশাল সম্ভাবনার দিগন্ত।নিলুফার বাবা আফতাব সাহেব ও মা সাবিনা খাতুন—দুজনেই সাদামাটা মানুষ। মেয়ের সাফল্যে আনন্দে আপ্লুত। আফতাব সাহেব বলেন, “আমাদের পরিবারে কেউ উচ্চশিক্ষা করেনি, কিন্তু মেয়ের ইচ্ছে ও জেদ ছিল আলাদা। তার পড়াশোনার জন্য আমরা অনেক কিছু ত্যাগ করেছি। কিন্তু আজ মনে হচ্ছে সব পরিশ্রম সার্থক হয়েছে।”

ugc net1718465960

স্থানীয় শিক্ষক ও প্রতিবেশীরাও জানাচ্ছেন, ছোট থেকেই নিলুফা ভীষণ পড়ুয়া। গান, কবিতা, নাটক—সবেতেই সক্রিয় ছিল সে। স্কুলে বরাবর প্রথম স্থান অধিকার করত। কলেজে বাংলা সাহিত্য নিয়ে পড়তে গিয়ে যখন অনেকে তাকে বলেছিল ‘ভবিষ্যৎ নেই’, তখনও সে নিজের বিশ্বাস হারায়নি।এই সাফল্যের প্রেক্ষিতে নিলুফা শুধু নিজেই উদাহরণ তৈরি করেননি, বরং বাংলা সাহিত্যের গুরুত্ব, পঠনপাঠনের ভবিষ্যৎ, এবং সাংস্কৃতিক চর্চার সম্ভাবনাকে নতুনভাবে আলোচনার কেন্দ্রে এনেছেন। সমাজ যখন বিজ্ঞান, ইঞ্জিনিয়ারিং বা ডাক্তারি পড়াকেই সাফল্যের পরিমাপক হিসেবে গণ্য করে, তখন এমন এক মেয়ে সাহসিকতা ও প্রতিভার সঙ্গে দেখিয়ে দিল, সাহিত্য ও সংস্কৃতি দিয়েও তৈরি করা যায় ভবিষ্যৎ।

WhatsApp Image 2025 07 25 at 19.15.47 93b931bc

বিশেষজ্ঞদের মতে, এই ধরনের কৃতিত্ব আমাদের ভাষা ও সাহিত্যের ভবিষ্যতের পক্ষে অত্যন্ত আশাব্যঞ্জক। কলকাতার এক নামী অধ্যাপক বলেন, “বাংলা সাহিত্যে দেশসেরা হওয়ার মানে শুধুই নাম নয়— এটা প্রমাণ করে, মফঃস্বলের একটি মেয়েও বিশ্বমানে প্রস্তুত। সমাজের উচিত এখন তার মতো মেয়েদের পাশে দাঁড়ানো।”অন্যদিকে, এই সাফল্যের পেছনে রাষ্ট্রীয় কাঠামোর কিছু দায় ও কর্তব্যও উঠে আসে। বাংলা সাহিত্য ও অন্যান্য মানবিক বিভাগের অবমূল্যায়নের যে চর্চা রয়েছে—সরকারি ও বেসরকারি ক্ষেত্র দুদিকেই—তা ভাঙার সময় এসেছে। এমন সাফল্যকে শুধু অভিনন্দনে থামিয়ে না রেখে প্রশাসনিক এবং শিক্ষানীতির অংশ হিসেবেও বিবেচনা করা প্রয়োজন।

WhatsApp Image 2025 07 25 at 19.15.49 64443624

এদিকে বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের প্রধান জানান, “নিলুফার সাফল্য আমাদের বিভাগের জন্য অত্যন্ত গর্বের। আমরা চাই ওর মত ছাত্র-ছাত্রীরা আরও উঠে আসুক। গবেষণায়, শিক্ষায়, সাহিত্যে তারা যেন বাংলা ভাষার মর্যাদা বহন করে বিশ্বমঞ্চে।”আগামীদিনে নিলুফার ইচ্ছা— গবেষণাকাজের পাশাপাশি বাংলার মধ্যযুগীয় সাহিত্য ও সংগীতচর্চা নিয়ে একটি বই প্রকাশ করা। তাঁর স্বপ্ন, ভবিষ্যতে দেশের নামী বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনার সুযোগ পেলে নিজের গবেষণা ও সাহিত্যচর্চা দিয়ে আরও অনেককেই উৎসাহিত করতে পারবেন।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments