NIA raids in Panihati on suspicion of Maoists: মঙ্গলবার ভোরবেলা, পানিহাটির পল্লীশ্রী এলাকায় হঠাৎই শুরু হয় কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা এনআইএর (NIA) অভিযান। মাওবাদী সংগঠনের সঙ্গে জড়িত থাকার সন্দেহে শিপ্রা চক্রবর্তী নামে এক মহিলার বাড়িতে হানা দেন এনআইএর আধিকারিকরা। এলাকাবাসীর কাছে বিষয়টি আকস্মিক ও অপ্রত্যাশিত ছিল, যার ফলে এলাকায় তীব্র চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়ে।ভোররাতে একাধিক গাড়ি এসে পৌঁছায় শিপ্রা চক্রবর্তীর বাড়ির সামনে। এনআইএর আধিকারিকরা প্রথমে বাড়ির দরজায় কড়া নাড়লেও, কোনো সাড়া না মেলায় গেট টপকে ভেতরে প্রবেশ করেন। এর মধ্যেই বাড়ির চারপাশে কৌতূহলী প্রতিবেশীদের ভিড় জমে যায়, যারা ঘটনা সম্পর্কে জানতে উদগ্রীব হয়ে পড়েন।
ঘোলা থানার পুলিশ ও কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানরা এলাকাটি ঘিরে ফেলেন। এনআইএ দল দীর্ঘ সময় ধরে বাড়ির ভিতরে তল্লাশি চালান। অভিযোগ উঠেছে, শিপ্রা চক্রবর্তী ও তাঁর স্বামী মানবেশ সরকার মাওবাদী সংগঠনের সঙ্গে জড়িত ছিলেন এবং তাঁরা পানিহাটির এই বাড়িতে বসবাস করতেন। তল্লাশির সময় কেন্দ্রীয় বাহিনীর নিরাপত্তায় পুরো এলাকা ঘিরে রাখা হয়।পানিহাটির পর, এনআইএর তদন্তকারী দল আসানসোলের কুলটি থানার অন্তর্গত ডিসেরগড় গ্রামেও তল্লাশি চালায়। সেখানে চুক্তি শ্রমিক সংগঠন ‘অধিকার’-এর নেত্রী সুদীপ্তা পালের বাড়িতেও অভিযান চালানো হয়। সুদীপ্তা পাল সেই বাড়িতে ভাড়া থাকেন বলে জানা যায়। কুলটি থানার পুলিশ বাড়িটি ঘিরে ফেলে এবং এনআইএর কর্মকর্তারা তল্লাশি চালান। এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে এলাকাবাসীর মধ্যে ব্যাপক চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়ে।সূত্রের খবর অনুযায়ী, এনআইএ ছত্তীসগড়ের বিজাপুর জেলার মাওবাদী নাশকতার সঙ্গে জড়িত ফান্ডিং ও সংগঠনের কার্যকলাপ সম্পর্কে তদন্তে নেমে এই রাজ্যের সাতটি এলাকার নাম পেয়েছে। সেই ভিত্তিতেই এনআইএ পানিহাটি ও আসানসোলের মতো জায়গায় অভিযান চালায়।শিপ্রা চক্রবর্তী এবং সুদীপ্তা পাল এই দুই মহিলা নানা সামাজিক ও শ্রমিক অধিকার রক্ষার কাজের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। তাঁরা কয়লাখনির শ্রমিকদের অধিকার রক্ষার জন্য মজদুর অধিকার নামে একটি সংগঠন চালাতেন। অভিযোগ উঠেছে, ছত্তীসগড়ের মাওবাদী সংগঠনের সঙ্গে তাঁদের যোগাযোগ ছিল এবং সেই সম্পর্কের সূত্র ধরেই এনআইএ তাঁদের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করেছে।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, শিপ্রা চক্রবর্তী আগে আসানসোলে থাকতেন এবং পরে তিনি পানিহাটির পল্লীশ্রী এলাকায় চলে আসেন। সুদীপ্তা পালও আসানসোলে থাকতেন এবং পরে ডিসেরগড় গ্রামে চলে যান। এই দুই মহিলার কাজকর্ম নিয়ে সন্দেহ থাকলেও, তাঁরা স্থানীয় সমাজকর্মী হিসেবে পরিচিত ছিলেন।পানিহাটি এবং আসানসোলের দুই এলাকায় এই এনআইএর অভিযান ব্যাপক চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেছে। এলাকাবাসীরা আতঙ্কিত এবং আশ্চর্য হয়ে গেছেন, কারণ তাঁরা এই দুই মহিলাকে সামাজিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত দেখতে অভ্যস্ত ছিলেন। এমনকি, তাঁদের মাওবাদী সংগঠনের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ শুনে অনেকেই হতবাক হয়েছেন। তবে তদন্তের স্বার্থে পুলিশ ও এনআইএর তৎপরতায় স্থানীয় মানুষেরা ঘটনাটি সম্পর্কে মিশ্র প্রতিক্রিয়া প্রকাশ করেছেন।এই অভিযানের পর থেকে এলাকাবাসীর মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে এবং মাওবাদী কার্যকলাপের প্রসার নিয়ে নতুন উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। এনআইএ তদন্তের পরিপ্রেক্ষিতে আরও কিছু নতুন তথ্য উঠে আসতে পারে, যা রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিতে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলতে পারে। মাওবাদী সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত থাকার অভিযোগে এই ধরনের অভিযানে গ্রেফতার হলে সমাজে বিভিন্ন ধরনের প্রশ্ন ও বিতর্কের সৃষ্টি হতে পারে।এনআইএর এই অভিযান দেখিয়ে দিল, মাওবাদী কার্যকলাপের শিকড় শুধু প্রত্যন্ত অঞ্চলে নয়, শহর ও মফস্বল এলাকায়ও প্রসারিত হতে পারে। পানিহাটি ও আসানসোলের এই দুটি ঘটনা রাজ্যে মাওবাদী সংগঠনের উপস্থিতি এবং তাদের অর্থ সংগ্রহ ও সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত থাকার অভিযোগকে নতুন করে সামনে এনেছে।