New political and voter parties, new policy twists in the Middle East : মধ্যপ্রাচ্যের বালুরাশিতে আবারও নতুন ইতিহাস রচিত হচ্ছে। সৌদি আরবের রাজধানী রিয়াদে সম্প্রতি একটি অভূতপূর্ব বৈঠকে মুখোমুখি হলেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং সিরিয়ার অন্তর্বর্তীকালীন প্রেসিডেন্ট আহমেদ আল-শারা। এই বৈঠক মধ্যপ্রাচ্যের রাজনীতিতে এক নতুন মোড় এনে দিয়েছে, কারণ এটি ছিল গত ২৫ বছরে সিরিয়া ও আমেরিকার রাষ্ট্রনায়কদের মধ্যে প্রথম সরাসরি বৈঠক। এর আগে যুক্তরাষ্ট্র ও সিরিয়ার সম্পর্কে অবিশ্বাস, শীতলতা এবং যুদ্ধাবস্থা বিরাজ করছিল। তবে এবার সেই জমাটবাঁধা সম্পর্ক যেন হঠাৎ করেই উষ্ণতার পথে পা বাড়াল। ট্রাম্প এই বৈঠকে সিরিয়ার ওপর আরোপিত বহু বছরের নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করার কথা ঘোষণা করেন এবং শারার প্রতি আহ্বান জানান, যাতে সিরিয়া ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করে। আশ্চর্যের বিষয়, প্রেসিডেন্ট শারাও এই প্রস্তাবে সাড়া দেন এবং ঘোষণা করেন, “আমরা ইসরায়েলের সঙ্গে শান্তি চুক্তির জন্য প্রস্তুত, এমনকি গোলান মালভূমির ওপর ইসরায়েলের নিয়ন্ত্রণকেও আমরা স্বীকার করতে রাজি।” এই কথাগুলো মধ্যপ্রাচ্যের কূটনৈতিক মানচিত্রে যেন বজ্রপাতের মতো নেমে এসেছে, কারণ গোলান মালভূমিকে কেন্দ্র করে ইসরায়েল-সিরিয়া সম্পর্ক বহু বছর ধরেই উত্তপ্ত।
এই আলাপে যিনি আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে উঠে এসেছেন, তিনি হলেন আহমেদ আল-শারা—এক সময়ের কুখ্যাত সন্ত্রাসবাদী নেতা, যার পরিচিতি ছিল আবু মুহাম্মদ আল-জোলানি নামে। তিনি ছিলেন আল-কায়েদার সিরিয় শাখা আল-নুসরা ফ্রন্টের প্রতিষ্ঠাতা, এবং পরবর্তীকালে ২০১৬ সালে আল-কায়েদার সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করে গঠন করেন “তাহরির আল-শাম”। তার এই পরিবর্তন অনেকের কাছে ছিল রাজনৈতিক আত্মরক্ষার কৌশল, আবার কেউ কেউ একে দেখে নৈতিক আত্মশুদ্ধির পদক্ষেপ হিসেবে। কিন্তু ২০২৪ সালে বাশার আল-আসাদ সরকারকে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে তিনি নিজে সিরিয়ার অন্তর্বর্তী প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেন। তারপর থেকেই আন্তর্জাতিক মহল শারার পদক্ষেপের দিকে কড়া নজর রাখছিল।

এই বৈঠকের প্রেক্ষাপটে উঠে এসেছে একটি বিশেষ সামরিক অভিযান—‘অপারেশন সিঁদুর’। এই অপারেশন ছিল ভারতের প্রতিরক্ষা বাহিনীর একটি প্রতিক্রিয়াশীল ও সজাগ অভিযানে পাকিস্তান সীমান্তে জঙ্গি ঘাঁটি লক্ষ্য করে চালানো বিমান ও সশস্ত্র অভিযান। অপারেশন সিঁদুর ছিল ভারতীয় কূটনীতির স্পষ্ট বার্তা যে, যারা সন্ত্রাসের আশ্রয়ে থাকে, তাদেরকে আর শিথিলভাবে দেখা হবে না। ঠিক সেই জায়গা থেকেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রও তার অবস্থান পুনর্বিবেচনা করছে—আগে যারা সন্ত্রাসবাদী ছিল, এখন তারা যদি শান্তির বার্তা বহন করে, তবে কি তাদের গ্রহণযোগ্যতা ফিরে আসতে পারে?
অনেক রাজনৈতিক বিশ্লেষক যেমন রামজি মেহতা বলছেন, “এই বৈঠক কেবল সিরিয়া-মার্কিন সম্পর্ক নয়, গোটা মধ্যপ্রাচ্যের কৌশলগত ভারসাম্য বদলে দেবে।” অন্যদিকে, ইরানের তরফে এই বৈঠককে নিয়ে প্রবল ক্ষোভের সুর শোনা যাচ্ছে। ইরানের বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র বলেন, “একজন সন্ত্রাসবাদী নেতাকে বৈধতা দিয়ে ট্রাম্প এক নতুন অশান্তির আগুনে ঘি ঢেলেছেন।”
অন্যদিকে ইসরায়েল এই বৈঠককে স্বাগত জানিয়েছে। প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু বলেন, “এটি এক সাহসী ও সঠিক পদক্ষেপ। আমরা আশাবাদী, সিরিয়ার নতুন নেতৃত্ব অতীত ভুলে ভবিষ্যতের দিকে এগোবে।”
সৌদি আরবও এই কূটনৈতিক আলোচনায় মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকা পালন করেছে। সৌদি বিদেশ মন্ত্রী জানিয়েছেন, “মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি ফিরিয়ে আনার ক্ষেত্রে আমাদের ভূমিকা সব সময়ই নিরপেক্ষ এবং গঠনমূলক।”
তবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন—এই পরিবর্তন কি দীর্ঘস্থায়ী হবে? অনেক বিশ্লেষক বলছেন, এই সম্পর্ক এখনো হাঁটি হাঁটি পা পা করে চলছে। ভবিষ্যতে যদি সিরিয়ার অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে আবারও কট্টরপন্থীরা মাথা চাড়া দিয়ে ওঠে, তবে এই শান্তির সম্ভাবনাও মিলিয়ে যেতে পারে।
আর সাধারণ মানুষ? যুদ্ধবিধ্বস্ত সিরিয়ার এক নাগরিক বাসেম আলী জানান, “যদি এই বৈঠক আমাদের জীবনকে একটু হলেও শান্তিপূর্ণ করে তোলে, যদি বোমার আওয়াজের বদলে আমরা আবার স্কুলের ঘণ্টা শুনি, তবে আমরা এই পরিবর্তনকে স্বাগত জানাই।”
শেষ কথা, এই বৈঠক একদিকে যেমন আন্তর্জাতিক রাজনীতির এক সাহসী অধ্যায়ের সূচনা করেছে, তেমনি অন্যদিকে এটি নিয়ে এসেছে অনিশ্চয়তা, প্রশ্ন ও বহু প্রতিক্রিয়া। ট্রাম্পের এই কূটনৈতিক পদক্ষেপ ও শারার তরফে ইসরায়েলকে স্বীকৃতি দেওয়া ভবিষ্যতে মধ্যপ্রাচ্যের ভূরাজনৈতিক চিত্র কতটা বদলাবে, তা সময়ই বলবে। তবে আজকে বলা যায়—এটি শুধুই এক বৈঠক নয়, এটি ইতিহাসের পাতায় এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা।