New initiative in Barrackpore, no helmet, no petrol : সড়ক দুর্ঘটনা আজ দেশের অন্যতম বড় উদ্বেগ। প্রতিদিনই খবরের কাগজে ভরে থাকে বাইক দুর্ঘটনায় অকালপ্রয়াত তরুণ-তরুণীর খবর। বিশেষজ্ঞরা বারবার বলে আসছেন—হেলমেটই পারে প্রাণ বাঁচাতে। কিন্তু তবুও অনেক বাইকচালক এখনও হেলমেট পরতে অনীহা দেখান। নিয়ম ভাঙলে জরিমানা হওয়ার পরও তাঁদের আচরণে তেমন পরিবর্তন আসে না। ঠিক এই প্রেক্ষাপটেই ব্যারাকপুর পুলিশ কমিশনারেট চালু করেছে এক অভিনব ও কঠোর উদ্যোগ— “নো হেলমেট, নো পেট্রোল”। অর্থাৎ, হেলমেট ছাড়া আর কোনও বাইকচালক পেট্রোল পাম্প থেকে তেল পাবেন না। এই উদ্যোগের লক্ষ্য একটাই—নিয়ম মানতে মানুষকে বাধ্য করা এবং সড়কে মৃত্যুহার কমানো। দুর্ঘটনা যখন শহর থেকে গ্রাম, সর্বত্র বাড়ছে, তখন হেলমেট ব্যবহারে কঠোরতা জরুরি হয়ে উঠেছে। ব্যারাকপুর-কল্যাণী এক্সপ্রেসওয়ে সহ আশপাশের রাস্তায় প্রতিদিন বিশাল যানবাহন চলাচলের ফলে দুর্ঘটনার আশঙ্কা আরও বেশি। তাই এই নিয়ম কার্যকর হওয়ার সিদ্ধান্তকে অনেকেই সময়োপযোগী বলে মনে করছেন।
সোমবার রাত থেকেই ব্যারাকপুর পুলিশ কমিশনারেটের অধীন আতপুর ট্রাফিক গার্ডের উদ্যোগে নতুন নিয়ম চালু হয়েছে। ব্যারাকপুর-কল্যাণী এক্সপ্রেসওয়ের ধারের পেট্রোল পাম্পগুলিতে বড় বড় ব্যানার লাগানো হয়েছে— “No Helmet, No Petrol”। ব্যানারের পাশে স্পষ্ট ভাষায় লেখা, হেলমেট ছাড়া কোনও বাইকচালককে তেল দেবেন না পাম্পকর্মীরা। উদ্যোগের সূচনায় উপস্থিত ছিলেন ব্যারাকপুর পুলিশ কমিশনারেটের অতিরিক্ত উপনগর পাল (উত্তর ট্রাফিক) রাজশ্রী শংকর বনিক এবং আতপুর ট্রাফিক গার্ডের আধিকারিক সুরেশ্বর মণ্ডল। তাঁদের উপস্থিতিতে নিয়ম ঘোষণা হওয়ার পর থেকেই পুলিশ নজরদারি বাড়িয়েছে এসিপি রাজশ্রী শংকর বনিক বলেন—“এটা শুধু নিয়ম চাপিয়ে দেওয়া নয়। মানুষের প্রাণ বাঁচানোই আমাদের লক্ষ্য। অনেকেই জানেন হেলমেট প্রাণ বাঁচায়, কিন্তু অভ্যাস তৈরি হয় না। তাই এবার কঠোরভাবে নজরদারি করা হবে। কোনও বাইকচালক হেলমেট ছাড়া তেল পাবেন না। পেট্রোল পাম্পগুলিকে আমরা স্পষ্ট নির্দেশ দিয়েছি।”উদ্যোগের প্রাথমিক প্রভাব ইতিমধ্যেই দেখা যাচ্ছে। সোমবার রাত থেকেই বেশ কিছু বাইকচালক হেলমেট না থাকায় তেল না পেয়ে ফিরে যেতে বাধ্য হন। এতে পাম্পগুলিতে বাড়তি সতর্কতা যেমন দেখা যাচ্ছে, তেমনই বাইকচালকদের মুখেও সতর্কতার ছাপ পড়তে শুরু করেছে।

সরকারি স্তরে এই উদ্যোগকে ইতিবাচক বলেই দেখা হচ্ছে। যদিও এটি পুলিশের নিজস্ব পদক্ষেপ, তবে রাজ্যের সড়ক নিরাপত্তা মিশনের সঙ্গে এর ভাবনা মিল রয়েছে। পুলিশের শীর্ষ আধিকারিকরা জানিয়েছেন, ভবিষ্যতে জেলার অন্যান্য ট্রাফিক গার্ডে এই নিয়ম চালুর সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। এসিপি রাজশ্রী শংকর বনিকের কথায়— “আমরা চাই এই উদ্যোগ শুধু ব্যারাকপুরেই সীমাবদ্ধ না থাকুক। মানুষের সচেতনতা বাড়লে জেলার প্রতিটি রাস্তাই নিরাপদ হবে। পেট্রোল পাম্পগুলি পুলিশের সঙ্গে হাত মিলিয়ে কাজ করলে নিয়ম লাগু করা অনেক সহজ।” নতুন এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন অধিকাংশ সাধারণ মানুষ। তাঁদের মতে, জরিমানার দণ্ডে কিছু বাইকচালক হয়তো নিয়ম মানতেন, কিন্তু বেশিরভাগই আবার হেলমেট খুলে ফেলতেন। পেট্রোল বন্ধের মতো কঠোর পদক্ষেপে পরিস্থিতি বদলাবে। স্থানীয় বাসিন্দা দেবাশিস ঘোষ বলেন—
“হেলমেট না পরে বাইক চালানো মানে নিজের জীবন নিয়ে খেলা। তাই পুলিশের এই সিদ্ধান্ত খুবই ভালো। যারা আজও নিয়ম মানতে চায় না, তারা অন্তত এখন বাধ্য হবে।”

কল্যাণী এক্সপ্রেসওয়ের ধারের এক পেট্রোল পাম্পকর্মীর বক্তব্য—
“অনেকেই হেলমেট হাতে নিয়ে আসে, পরে না। এখন আমরা স্পষ্টভাবে বলে দিচ্ছি—হেলমেট মাথায় না পরলে তেল নেই। প্রথমদিকে কিছু তর্ক-বিতর্ক হলেও বেশিরভাগই বুঝে নিচ্ছেন।” এক বাইক চালক বলেন—
“অভ্যাসটা থাকলে ভালো। আসলে তেল না দিলে হেলমেট পরতেই হবে। সুরক্ষার জন্য এটা ভালোই।”সব মিলিয়ে ব্যারাকপুরে জনমত বেশ ইতিবাচক।বাংলায় সড়ক দুর্ঘটনার চিত্র উদ্বেগজনক। প্রতিবছর হাজার হাজার মানুষ বাইক দুর্ঘটনায় মারা যান, যার মধ্যে অধিকাংশের মাথায় হেলমেট থাকে না। গবেষণায় দেখা গিয়েছে, হেলমেট পরলে দুর্ঘটনায় মৃত্যুর সম্ভাবনা কমে যায় ৬০ শতাংশ পর্যন্ত। ব্যারাকপুর-কল্যাণী এক্সপ্রেসওয়ে ব্যস্ততম রাস্তাগুলোর একটি। দ্রুতগতির বাইক, ট্রাক, ছোট গাড়ি—সব মিলিয়ে দুর্ঘটনার ঝুঁকি এখানে সব সময়ই বেশি। তাই এখানকার ট্রাফিক গার্ডের পক্ষ থেকে এমন উদ্যোগ নেওয়া বাস্তবসম্মতই নয়, অত্যন্ত প্রয়োজনীয় বলেও মনে করছেন ট্রাফিক বিশেষজ্ঞরা।



