New address for winter season ‘Rasikbil Mini Zoo’ : শীতের এই সময়টা ঘুরে বেড়ানোর জন্য সবার প্রিয়। প্রকৃতির সান্নিধ্য, পরিযায়ী পাখির কলরব, আর দৃষ্টিনন্দন পরিবেশের খোঁজে যারা বেরিয়ে পড়েন, তাদের জন্য কোচবিহারের রসিকবিল মিনি জু হয়ে উঠেছে এক নতুন আকর্ষণ। অসম-বাংলা সীমান্তে অবস্থিত এই পর্যটন কেন্দ্রটি শীতের মরসুমে যেন স্বর্গে পরিণত হয়েছে। রসিকবিল প্রকৃতি পর্যটনকেন্দ্রটি প্রায় ২১০০ হেক্টর এলাকা জুড়ে বিস্তৃত, যেখানে ঝকঝকে জলাশয়ের আশপাশে ছড়িয়ে রয়েছে অপরূপ দৃশ্যপট।
রসিকবিলের ঝিলের ধারে বসে আপনি দেখবেন চিতাবাঘ, চিতল হরিণ, ঘড়িয়াল, ময়ূর, এবং নানা প্রজাতির পাখির অবাধ বিচরণ। শীতের মরসুমে ঝাঁকে ঝাঁকে পরিযায়ী পাখির আগমন এই স্থানটিকে আরো জীবন্ত করে তোলে। বন দপ্তরের মতে, এ বছর পরিযায়ী পাখিদের সংখ্যা গত বছরের তুলনায় বেড়েছে। নর্দার্ন পিনটেইল, রেড ক্রেস্টেড পোচার্ড, স্মল প্র্যাটিনকোল, গ্রেট কর্মোরেন্ট প্রভৃতি পাখি এখানে এসে পরিবেশটিকে যেন আরও রঙিন করে তুলেছে। স্থানীয় বাসিন্দা অনিমেষ দত্ত বললেন, “প্রতি বছর এখানে পাখিদের দেখা পেতে আসি। এবারের ঝাঁকের সংখ্যা বেশি এবং পরিবেশও অনেক সুন্দর।”
পর্যটকদের জন্য বন দপ্তর বিশেষ নজরদারি ব্যবস্থা চালু করেছে। সিসিটিভি ক্যামেরার সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে, যাতে পরিযায়ী পাখিদের শিকার কিংবা অন্য কোনো অনৈতিক কাজ সহজেই চিহ্নিত করা যায়। গত বছর পর্যন্ত ছিল ১৫টি ক্যামেরা, এবার তার সংখ্যা দ্বিগুণ করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বন দপ্তরের ডিএফও অসিতাভ চট্টোপাধ্যায় জানালেন, “পরিযায়ী পাখিদের নিরাপত্তা আমাদের প্রথম অগ্রাধিকার। সিসিটিভি ক্যামেরাগুলি এই কাজের পক্ষে বিশেষ সহায়ক হবে।”
এখানে শুধু পাখি আর বন্যপ্রাণী নয়, পর্যটকদের বিনোদনের জন্য রয়েছে ছোট জাদুঘর ও জলবিহারের সুযোগ। স্থানীয় ব্যবসায়ী শিবু রায় বললেন, “রসিকবিলে পর্যটকদের সংখ্যা বাড়ার ফলে আশপাশের হোটেল আর রেস্টুরেন্টগুলিতে ভিড় লেগে থাকে। এটি আমাদের ব্যবসায় অনেক সাহায্য করেছে।”
রসিকবিল মিনি-জু এর উন্নয়ন পর্যটকদের জন্য একটি বিশেষ দৃষ্টান্ত তৈরি করেছে। বনকর্মী এবং পুলিশদের সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে যাতে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে। বিশেষত, যেসব পরিবার শিশুসহ এখানে আসছেন, তাদের জন্য নিরাপত্তার বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে। রসিকবিলের এই পরিবেশ দেখে পর্যটকদের মুখে একটাই কথা, “আমাদের শীতের ছুটির সেরা গন্তব্য।”

তবে এর পাশাপাশি রক্ষণাবেক্ষণের গুরুত্বও উল্লেখ করেছেন বিশেষজ্ঞরা। স্থানীয় পরিবেশবিদ সোমনাথ ঘোষ বললেন, “পর্যটকদের সংখ্যা বাড়ার ফলে প্রকৃতির ওপর যে চাপ পড়ছে, সেটি বুঝে ব্যবস্থা নিতে হবে। পরিবেশের ভারসাম্য বজায় রাখার দিকটিও গুরুত্বপূর্ণ।”
সব মিলিয়ে রসিকবিল মিনি-জু এই শীতের মরসুমে প্রকৃতি প্রেমীদের কাছে এক নতুন ঠিকানা হয়ে উঠেছে। এর সৌন্দর্য এবং সুরক্ষা ব্যবস্থা এটিকে একটি আদর্শ পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে তুলে ধরেছে। ভবিষ্যতে এই প্রকল্প আরও প্রসারিত হলে কোচবিহার জেলার অর্থনীতি এবং পরিবেশ দুটোরই উন্নতি হবে।