Natural drinks to keep kidneys healthy: মানুষের শরীরে প্রতিটি অঙ্গই গুরুত্বপূর্ণ। তবে কিডনি এমন একটি অঙ্গ, যা শরীরের ভিতরে নিরন্তর কাজ করে আমাদের সুস্থ রাখতে। প্রতিদিন শরীরে অজান্তে জমে থাকা দূষণ ও ক্ষতিকর উপাদান কিডনি ছেঁকে ফেলে দেয়। বলা হয়, কিডনি যদি সুস্থ থাকে তবে শরীরও দীর্ঘদিন সুস্থ থাকে। আধুনিক জীবনের অনিয়মিত খাদ্যাভ্যাস, অতিরিক্ত নোনতা খাবার, পানিশূন্যতা ও মানসিক চাপের কারণে কিডনির সমস্যা বেড়েছে বহু গুণ। সেই কারণেই আজকের দিনে কিডনির যত্ন নেওয়া বিশেষভাবে জরুরি।কিডনি সুস্থ রাখার জন্য নিয়মিত কিছু প্রাকৃতিক পানীয় অন্তর্ভুক্ত করা যেতে পারে দৈনন্দিন জীবনে। এগুলি যেমন সহজলভ্য, তেমনই কার্যকর।
প্রথমেই আসে আদা ও হলুদের চা। পুষ্টিবিদদের মতে, আদার মধ্যে রয়েছে প্রদাহনাশক উপাদান, যা কিডনির ফোলাভাব ও প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে। অন্যদিকে, হলুদে থাকে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, যা কিডনিকে ক্ষতিকর ফ্রি-র্যাডিক্যাল থেকে রক্ষা করে। প্রতিদিন সকালে খালি পেটে এক কাপ আদা-হলুদের চা শরীরকে ভেতর থেকে পরিষ্কার করে।

দ্বিতীয়ত, লেবু-ধনেপাতা-শসার জল। একটি কাচের বোতলে জল নিয়ে তাতে লেবুর রস, কুচি করা ধনেপাতা ও শসার টুকরো মিশিয়ে রাখা হয়। দিনে ৩-৪ বার এই জল পান করলে কিডনিকে সতেজ ও দূষণমুক্ত রাখতে বিশেষ উপকার হয়। এটি ডিটক্স ওয়াটার হিসেবে কাজ করে, যা শুধু কিডনি নয়, গোটা শরীরকে টক্সিনমুক্ত করতে সাহায্য করে।

তৃতীয়ত, থোড়ের রস। প্রতিদিন সকালে খালি পেটে ১০০ মিলিলিটার থোড়ের রস খাওয়া হলে কিডনিতে পাথর হওয়ার সম্ভাবনা অনেকটাই কমে যায়। একই সঙ্গে এটি মূত্রনালিকে পরিষ্কার রাখে এবং দূষণ জমতে বাধা দেয়।

আয়ুষ মন্ত্রক ও জনস্বাস্থ্য দফতরের পক্ষ থেকে প্রায়ই প্রাকৃতিক ভেষজ এবং দেশীয় পানীয়ের ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়। বিশেষজ্ঞদের মতে, কিডনির যত্নে ওষুধের পাশাপাশি এমন প্রাকৃতিক উপাদানও সমান কার্যকরী হতে পারে, তবে এগুলি শুরু করার আগে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি। কারণ প্রতিটি শরীরের চাহিদা ও পরিস্থিতি ভিন্ন।কলকাতার বাসিন্দা সুলেখা মিত্র বলেন, “আমার পরিবারের প্রায় সবাই সকালে খালি পেটে লেবু-শসার জল খাওয়ার অভ্যাস তৈরি করেছে। এতে শুধু শরীর হালকা লাগে না, প্রস্রাব পরিষ্কার হয় এবং সারাদিন জুড়ে সতেজতা থাকে।” অন্যদিকে, হাওড়ার বাসিন্দা প্রদীপ ঘোষ জানালেন, “আমার কিডনিতে একসময় ছোট পাথর হয়েছিল। ডাক্তার থোড়ের রস খাওয়ার পরামর্শ দেন। নিয়মিত খাওয়ার ফলে অনেকটা উপকার পেয়েছি।”

বিজ্ঞানীরা বলেছেন, কিডনিকে সুস্থ রাখতে জল সবচেয়ে বড় ওষুধ। এর পাশাপাশি ডায়েট ও প্রাকৃতিক পানীয় কিডনির কার্যক্ষমতা বাড়ায়। আদা-হলুদ চা প্রদাহ কমায়, লেবু-ধনেপাতা-শসার জল শরীরকে ডিটক্স করে, আর থোড়ের রস প্রস্রাবনালী পরিষ্কার রাখতে সাহায্য করে। তবে যেকোনও ভেষজ পানীয় অতিরিক্ত মাত্রায় খেলে উল্টোদিকেও সমস্যা হতে পারে। তাই পরিমিত পরিমাণে খাওয়া অত্যন্ত জরুরি।আধুনিক চিকিৎসার পাশাপাশি প্রাকৃতিক পানীয় এবং ভেষজ উপাদানের ব্যবহার আগামী দিনে আরও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে। শহরের মানুষের ব্যস্ত জীবনযাত্রায় অনিয়মিত খাদ্যাভ্যাস কিডনির ওপর চাপ সৃষ্টি করছে। তাই ডাক্তাররা যদি সচেতনভাবে এই ধরনের প্রাকৃতিক পানীয়কে দৈনন্দিন জীবনে অন্তর্ভুক্ত করার কথা বলেন, তবে তা কিডনি সুস্থ রাখতে বড় ভূমিকা নেবে।

কিডনি শরীরের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ। এর যত্ন নেওয়া মানেই দীর্ঘদিন সুস্থ থাকা। আদা-হলুদের চা, লেবু-ধনেপাতা-শসার জল কিংবা থোড়ের রস—সবই কিডনিকে পরিষ্কার ও সক্রিয় রাখতে সাহায্য করে। তবে সবকিছুর আগে প্রয়োজন নিয়মিত জলপান, পর্যাপ্ত বিশ্রাম এবং সুস্থ জীবনযাপন। তাই প্রাকৃতিক উপাদানগুলিকে জীবনের অংশ করুন, আর কিডনিকে রাখুন দীর্ঘদিন সুস্থ ও সক্রিয়।