‘Nabanna Chalo’ again, many lost their postal offices:-পশ্চিমবঙ্গের রাজপথ আবারও উত্তাল হতে চলেছে। বিক্ষোভ, ব্যথা, বঞ্চনার দীর্ঘ সময় পেরিয়ে আবারও একজোট হয়ে রাজ্যের চাকরিহারা, চাকরিপ্রার্থী ও বঞ্চিত চাকরিজীবীরা ডাক দিলেন ‘নবান্ন চলো’ অভিযানের। রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে দীর্ঘদিনের অভিযোগ—নিয়োগে দুর্নীতি, স্বচ্ছতার অভাব, প্রশাসনিক উদাসীনতা এবং দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ থাকা চাকরির ইন্টারভিউ ও ফলাফল ঘোষণা—এই সমস্ত কিছুর প্রতিবাদেই এবার ২৮ জুলাই ফের নবান্ন অভিযান ঘিরে জোরদার প্রস্তুতি নিচ্ছে ‘পশ্চিমবঙ্গ বঞ্চিত চাকরিপ্রার্থী, চাকরিজীবী ও চাকরিহারা ঐক্য মঞ্চ’।২৫ জুলাই কলকাতার এক সাংবাদিক বৈঠকে তারা জানান, “আর অপেক্ষা নয়। বহু বছর ধরে আমরা অপেক্ষা করছি চাকরির। আদালতের রায় বারবার আমাদের পক্ষে যাচ্ছে। তবু সরকার কোনও সুরাহা করছে না। আমরা মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গেই সরাসরি দেখা করতে চাই। আমাদের হাতে আর সময় নেই, আর ধৈর্যও নেই।” এই বক্তব্য রাখেন সংগঠনের অন্যতম মুখপাত্র অনির্বাণ সাহা, যিনি গত ২০১৭ সালের প্রাথমিক নিয়োগে পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েও এখনও চাকরি পাননি।

চাকরি প্রার্থীদের দাবি, শুধু প্রাথমিক নয়—মাধ্যমিক, উচ্চমাধ্যমিক, গ্রুপ ডি, গ্রুপ সি, কলেজ সার্ভিস কমিশন, পুলিশ নিয়োগ, স্বাস্থ্যবিভাগ—সব ক্ষেত্রেই নিয়োগ প্রক্রিয়া থমকে রয়েছে। কেউ ইন্টারভিউ দিয়েও ফল পাননি, কেউ লিখিত পরীক্ষায় পাশ করেও তালিকায় নাম পাননি। আবার যাঁরা ইতিমধ্যেই চাকরিতে নিযুক্ত, তাঁদের একাংশও প্রশাসনিক গাফিলতিতে চাকরি হারিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।‘ঐক্য মঞ্চ’-এর তরফে জানানো হয়েছে, এই বিক্ষোভে এবার রেকর্ড সংখ্যক বঞ্চিত মানুষ অংশ নিতে চলেছেন। তাঁদের মধ্যে রয়েছেন স্কুল সার্ভিস কমিশন আন্দোলনের পুরনো মুখরাও, যাঁরা মহাজোড়া টেন্ট বসিয়ে দিনের পর দিন কলকাতার রাজপথে অবস্থান বিক্ষোভ চালিয়েছিলেন। এবার নতুন মোড়—সরাসরি নবান্ন অভিযানের ডাক।আন্দোলনকারীরা জানিয়েছেন, তাদের দাবি একটাই—একটি নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে সমস্ত বিচারাধীন ও থমকে থাকা নিয়োগ প্রক্রিয়া পুনরায় শুরু হোক। যদি কোনও পরীক্ষায় কারচুপি হয়ে থাকে, তা হলে স্বচ্ছ তদন্তের মাধ্যমে দোষীদের শাস্তি হোক, কিন্তু যাঁরা যোগ্য এবং নিরপরাধ, তাঁদের যেন আর বঞ্চিত না করা হয়।
এই আন্দোলনের পেছনে রাজনৈতিক প্রভাব আছে কি না—এই প্রশ্ন বারবার উঠলেও, আন্দোলনকারীরা সাফ জানিয়েছেন, “আমরা রাজনীতি করি না। আমরা শুধু চাকরি চাই। ভোট চাওয়া হলে, চাকরিও দিতে হবে। আমরা রাজ্যের নাগরিক, আমাদের জীবনের নিরাপত্তা, ভবিষ্যৎ নিশ্চয়তা চাই। মুখ্যমন্ত্রীর কাছেই সব কথা স্পষ্ট করে বলতে চাই।”সরকারের তরফে যদিও এই বিষয়ে এখনো কোনও আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া মেলেনি, তবে প্রশাসনিক মহলে এই অভিযানের প্রস্তুতির খবর পৌঁছেছে। ভবিষ্যতের দিকে তাকিয়ে অনেকেই বলছেন, এই আন্দোলন আরও বৃহত্তর রূপ নিতে পারে। ২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচন যত এগিয়ে আসবে, রাজ্যে বেকারত্ব ও চাকরি-সংকটের মতো ইস্যুগুলি যে আবার রাজনীতির কেন্দ্রবিন্দুতে উঠে আসবে, তা নিশ্চিত।নবান্ন অভিযানের আগের অভিজ্ঞতাও খুব মধুর নয়। আগেও চাকরি প্রার্থীদের নবান্ন অভিযানে বাধা দিয়েছে পুলিশ। লাঠিচার্জ, জলকামান, আটক, এমনকি জেল—সবই দেখা গেছে। এবার আন্দোলনকারীরা শান্তিপূর্ণ পদযাত্রার প্রস্তুতি নিলেও, পরিস্থিতি আবার উত্তপ্ত হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

সাংবাদিক বৈঠকে চাকরিহারাদের সঙ্গে সঙ্গে ছিলেন রাজ্যের বিভিন্ন জেলা থেকে আসা প্রতিবাদকারীরাও। পূর্ব মেদিনীপুরের এক প্রার্থী জানালেন, “ছ’ বছর ধরে বাড়িতে বসে আছি। সংসার চালাতে পারছি না। মা-বাবার মুখ দেখতে লজ্জা লাগে। এখন আর মরে যাওয়ার আগেও যেন মরার মতো অবস্থায় আমরা। একটা ন্যায্য চাকরির জন্য এত লড়াই করতে হবে, তা ভাবিনি।”আরও একজন, হাওড়ার বাসিন্দা সায়নী সেন, যিনি ২০১৯ সালে উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েও এখনও চাকরি পাননি, বললেন, “একটা মেয়ে হিসেবে সমাজের কাছে নিজেকে বারবার প্রমাণ করতে হচ্ছে। অথচ সরকারের তরফে বারবার শুধু আশ্বাস, কাজের কাজ কিছু নেই। আমরা এবার মুখ্যমন্ত্রীর মুখোমুখি হবই।”বিশ্লেষকদের মতে, আন্দোলনের এই ঢেউ যদি ক্রমশ বেড়ে চলে, তবে তা রাজ্য সরকারের উপর চাপ বাড়াবে। যেহেতু এই আন্দোলনের সঙ্গে আবেগ, ভবিষ্যৎ, আত্মসম্মান জড়িয়ে আছে—তাই প্রশাসনিক হস্তক্ষেপে দমন করা হলেও সমস্যার সমাধান হবে না।এদিকে ‘ঐক্য মঞ্চ’-এর তরফে জানানো হয়েছে, নবান্ন অভিযানের আগে কলকাতা শহরের একাধিক জায়গায় সচেতনতা প্রচার চালানো হবে। লিফলেট বিলি, সোশ্যাল মিডিয়া ক্যাম্পেইন, মিছিল ও পথসভা চলবে আগামী ২৭ জুলাই পর্যন্ত। এরপর ২৮ জুলাই সকাল ১১টায় ধর্মতলার লেনিন মূর্তির পাদদেশ থেকে শুরু হবে পদযাত্রা—লক্ষ্য, নবান্ন।চাকরিপ্রার্থীদের এই প্রতিবাদ যাত্রা শুধুই চাকরির দাবিতে নয়, এটা হয়ে উঠছে একটি সামাজিক ও নৈতিক প্রতিবাদ। সময়ই বলবে—এই হাঁকডাক কানে পৌঁছবে কি না রাজ্যের শাসকের। তবে এই একটুও সন্দেহ নেই, যে চাকরি হারানোর যন্ত্রণা আর বঞ্চনার ক্ষোভ এবার রাজপথে আগুন হয়ে জ্বলবে।