**Mysterious** death of medical student in medical hostel in Cooch Behar: কোচবিহারের এমজেএন মেডিকেল কলেজ হোস্টেলে আবারও এক মর্মান্তিক ঘটনা ঘটেছে। বুধবার গভীর রাতে কলেজ হোস্টেলের ৩০৪ নম্বর ঘর থেকে উদ্ধার হয়েছে ২৮ বছর বয়সী ইন্টার্ন ডাক্তারি পড়ুয়া কিষাণ কুমারের ঝুলন্ত দেহ। মৃত ছাত্র বিহারের বারুনি এলাকার বাসিন্দা ছিলেন। এই ঘটনার পর গোটা মেডিক্যাল কলেজ চত্বরে চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়ে। সহপাঠী থেকে অধ্যাপক, সকলেই হতভম্ব। কয়েক মাস আগেই এই একই কলেজের হোস্টেলে এক ছাত্রী আত্মহত্যা করেছিলেন, তার রেশ কাটতে না কাটতেই ফের ঘটল এমন রহস্যমৃত্যু। প্রশ্ন উঠছে, মেডিক্যাল পড়ুয়াদের মধ্যে কেন এই হতাশার ছায়া? শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নিরাপত্তা নিয়েও উঠছে নানা প্রশ্ন
সূত্রের খবর অনুযায়ী, বুধবার রাতে হোস্টেলের কয়েকজন আবাসিক ৩০৪ নম্বর ঘরের দরজা বন্ধ দেখে সন্দেহ করেন। দীর্ঘক্ষণ দরজা বন্ধ থাকায় ডাকাডাকি করেও কোনো সাড়া না পেয়ে তারা বিষয়টি মেডিক্যাল কলেজ কর্তৃপক্ষকে জানান। পরে পুলিশ এসে দরজা ভেঙে কিষাণ কুমারের ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার করে। তবে ঘর থেকে কোনো সুইসাইড নোট পাওয়া যায়নি। ফলে এটি আত্মহত্যা নাকি এর পেছনে অন্য কোনো রহস্য লুকিয়ে আছে, তা খতিয়ে দেখছে পুলিশ।কোচবিহার পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, প্রাথমিকভাবে দেহে কোনো আঘাতের চিহ্ন মেলেনি। ময়নাতদন্তের রিপোর্ট না পাওয়া পর্যন্ত মৃত্যুর কারণ সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া সম্ভব নয়। যদিও পুলিশ জানিয়েছে, কিষাণ কুমার দীর্ঘদিন ধরে মানসিক চাপে ছিলেন। প্রেমঘটিত সমস্যার কারণে তিনি বিষণ্নতায় ভুগছিলেন বলে পুলিশকে জানিয়েছেন তাঁর ঘনিষ্ঠ বন্ধুরা।
এক পুলিশ আধিকারিক বলেন, “এই মুহূর্তে কিছু বলা সম্ভব নয়, তবে ব্যক্তিগত সম্পর্কের টানাপোড়েনের কারণে সে মানসিক অবসাদে ছিল বলে জানা গেছে। দেহটি ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হয়েছে, সম্পূর্ণ প্রক্রিয়া ভিডিও রেকর্ডিং-এর মাধ্যমে করা হয়েছে।”এমজেএন মেডিক্যাল কলেজ হোস্টেলে এটি প্রথম ঘটনা নয়। গত বছর, ২০২৩ সালের ১১ জুন, একই হোস্টেলের একটি ঘর থেকে উদ্ধার হয়েছিল ২৪ বছর বয়সী প্রথম বর্ষের ছাত্রী স্নিগ্ধা কুন্ডুর দেহ। পূর্ব বর্ধমানের বাসিন্দা স্নিগ্ধার মৃত্যুর ঘটনাও ঘিরে ব্যাপক চাঞ্চল্য ছড়িয়েছিল।একজন সিনিয়র ডাক্তারি ছাত্র জানান, “গত বছরও আমাদের কলেজে এমন একটি ঘটনা ঘটেছিল। মেডিক্যাল পড়াশোনা অনেক চাপের, মানসিক শক্তি না থাকলে অনেকেই ভেঙে পড়ে। কিন্তু পরপর একই হোস্টেলে এমন ঘটনা ঘটতে থাকলে প্রশ্ন উঠবেই।”মেডিক্যাল পড়াশোনার চাপ যে প্রচণ্ড, তা অস্বীকার করার উপায় নেই। প্রতিদিন কঠোর পড়াশোনা, দীর্ঘ ওভারটাইম, রোগীদের চাপ, সামাজিক জীবন থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়া—সব মিলিয়ে ডাক্তারি ছাত্রদের মধ্যে মানসিক অবসাদ খুবই সাধারণ একটি ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু এর সঙ্গে যদি ব্যক্তিগত সমস্যা যোগ হয়, তাহলে অনেকেই মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন।
কোনো হোস্টেলে একাধিক আত্মহত্যার ঘটনা ঘটলে তার পিছনে প্রাতিষ্ঠানিক কোনো সমস্যাও থাকতে পারে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। হয়তো পড়ুয়াদের জন্য মানসিক স্বাস্থ্য পরামর্শদাতা বা কাউন্সেলিংয়ের ব্যবস্থা পর্যাপ্ত নয়।একজন মনোবিদ জানিয়েছেন, “এমন ঘটনা প্রমাণ করে যে ডাক্তারি পড়ুয়ারা প্রচণ্ড চাপের মধ্যে থাকেন। কিন্তু আমাদের দেশে মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে কথা বলা এখনো অনেকটা ট্যাবু। মানসিক চাপ কাটাতে কাউন্সেলিং ও সাপোর্ট সিস্টেম থাকা জরুরি।”
এই ঘটনার পর প্রশাসনের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। বারবার কেন মেডিক্যাল কলেজের হোস্টেলে এমন ঘটনা ঘটছে? পড়ুয়াদের মানসিক স্বাস্থ্যের দিকে কি কর্তৃপক্ষ যথেষ্ট নজর দিচ্ছে না? হোস্টেলের নিরাপত্তা ও মনিটরিং ব্যবস্থা কি যথেষ্ট শক্তিশালী? এসব প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে সাধারণ মানুষের মনে।একজন চিকিৎসক ও কলেজের সিনিয়র অধ্যাপক বলেন, “আমাদের উচিত ছাত্রদের মানসিক স্বাস্থ্যের দিকে বিশেষ নজর দেওয়া। মেডিক্যাল পড়াশোনার চাপে অনেকেই হতাশায় ভোগেন, তাদের জন্য আলাদা কাউন্সেলিং ব্যবস্থা থাকা দরকার।”কোচবিহার জেলা প্রশাসন ইতিমধ্যেই কলেজ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনায় বসেছে। পুলিশও আশ্বাস দিয়েছে, ঘটনাটির পূর্ণাঙ্গ তদন্ত হবে এবং ভবিষ্যতে যাতে এমন ঘটনা না ঘটে, তার জন্য হোস্টেলে বিশেষ নজরদারি চালানো হবে।