Murguma in Purulia: এক সময় পুরুলিয়ার জঙ্গলমহল ছিল মাওবাদী আতঙ্কের প্রতীক। মুরগুমা জলাধার ও সংলগ্ন এলাকায় তখন ভয়ের ছায়া গ্রাস করেছিল। দিনের আলো ফুরিয়ে যাওয়ার পর এই অঞ্চল কার্যত হয়ে উঠত শ্মশানের মতো নিস্তব্ধ। তবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে পরিস্থিতি বদলেছে। শান্তি ফিরে এসেছে, আর সেই সঙ্গে ফিরেছে মানুষের কোলাহল। মুরগুমা জলাধার এখন পর্যটকদের আকর্ষণের অন্যতম কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছে।
২৫ ডিসেম্বর বড়দিন উপলক্ষে মুরগুমা জলাধারে ভিড় উপচে পড়ল। দূরদূরান্ত থেকে মানুষ এসেছেন প্রকৃতির অপার সৌন্দর্য উপভোগ করতে। কেউ এসেছেন পরিবার নিয়ে, কেউ আবার বন্ধুবান্ধবদের সঙ্গে। জলাধারের স্বচ্ছ জল, চারপাশে সবুজের ছায়া, আর দূরে পাহাড়ের সারি মিলে এক মনোরম পরিবেশ তৈরি করেছে। অনেকেই ছোট নৌকায় চেপে জলাশয়ের নীরবতা উপভোগ করেছেন। কেউ আবার জলাধারের পাড়ে পিকনিকের আয়োজন করেছেন।

স্থানীয় বাসিন্দাদের মতে, মাওবাদী সমস্যার কারণে এই অঞ্চল এক সময় পর্যটকশূন্য হয়ে গিয়েছিল। তবে গত এক দশকের মধ্যে পরিস্থিতি বদলেছে। শান্তি প্রতিষ্ঠার পরে পর্যটনের প্রসার ঘটেছে। মুরগুমা জলাধারের আশপাশে ছোট ছোট হোমস্টে, রেস্টুরেন্ট এবং অন্যান্য পর্যটন সুবিধার বিকাশ ঘটেছে। স্থানীয় ব্যবসায়ীরাও এই পরিবর্তনে বেশ খুশি। এক স্থানীয় হোমস্টে মালিক বলেন, “আগে আমরা পর্যটকের কথা কল্পনাও করতে পারতাম না। কিন্তু এখন প্রতি শীতকালে এখানে প্রচুর মানুষ আসেন। এটি আমাদের জীবিকা বদলে দিয়েছে।”
স্থানীয় প্রশাসন এবং বন দপ্তর যৌথ উদ্যোগে জলাধার এবং তার আশপাশের এলাকাগুলি পরিষ্কার এবং সুসংগঠিত রাখার কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। পর্যটকদের নিরাপত্তার জন্য জায়গাটিকে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা এবং গাইডলাইন দিয়েছে প্রশাসন। পর্যটকদের সংখ্যা বাড়তে থাকায় এখানকার অর্থনৈতিক পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। স্থানীয় মহিলারা কুটির শিল্পের মাধ্যমে পণ্য বিক্রি করছেন এবং তাদের আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী করে তুলছেন।
পর্যটকদের মধ্যে অনেকেই মুরগুমার এই শান্তি ও সৌন্দর্য দেখে মুগ্ধ। কলকাতা থেকে আসা এক পর্যটক বলেন, “আমরা মুরগুমা জলাধারের কথা শুনেছি, কিন্তু বাস্তবে এসে এটা যে এত সুন্দর হবে তা কল্পনা করতে পারিনি। প্রকৃতির এত কাছাকাছি থাকতে পারা সত্যিই একটি অন্যরকম অভিজ্ঞতা।”
মুরগুমা জলাধার শুধু পর্যটকদের আকর্ষণই নয়, পরিবেশবিদদের কাছেও একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান। এটি শুধুমাত্র প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের জন্য নয়, বরং এলাকার জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণের জন্যও বিখ্যাত।
মাওবাদী আতঙ্ক কাটিয়ে মুরগুমার পুনর্জাগরণ একটি বড় প্রেরণা। এটি দেখায় কীভাবে একটি অঞ্চল ভয়ের ছায়া কাটিয়ে নতুনভাবে ঘুরে দাঁড়াতে পারে। পর্যটকদের ভিড় এবং স্থানীয়দের জীবনযাত্রার পরিবর্তন এর উদাহরণ।