MP Partha Bhowmik is determined to fulfill Bhatpara’s promise: ভাটপাড়া – উত্তর ২৪ পরগনার এই শিল্পাঞ্চল, রাজনৈতিক উত্তাপের পাশাপাশি একাধিক নাগরিক সমস্যার কারণে বারবার শিরোনামে উঠে এসেছে। আর ঠিক সেই কারণেই তৃণমূল কংগ্রেসের অন্যতম মুখ ও ব্যারাকপুর লোকসভার সাংসদ পার্থ ভৌমিক এই এলাকাকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে তাঁর প্রতিশ্রুতি পালনের প্রক্রিয়ায় নেমেছেন। ভাটপাড়া বিধানসভা বর্তমানে বিজেপির দখলে – অর্জুন সিংয়ের পুত্র পবন সিং এখানে বিধায়ক হলেও, এলাকায় তৃণমূল কংগ্রেস ফের শক্তি ফেরাতে কোমর বেঁধে মাঠে নামছেন পার্থ ভৌমিক। কারণ ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে ভাটপাড়া থেকে কাঙ্ক্ষিত ফল আসেনি। তবে রাজনীতিতে হার মানেই থেমে যাওয়া নয় – সেই ভাবনাতেই বিশ্বাসী পার্থ ভৌমিক জনতার অভিযোগের ভিত্তিতে দ্রুত কাজের নির্দেশ দিচ্ছেন, নিয়মিত জনতার দরবার করছেন এবং প্রশাসনিক তৎপরতায় গতি আনার চেষ্টা চালাচ্ছেন।সাম্প্রতিক সময়ে ভাটপাড়া পুরসভায় এক জরুরি বৈঠকে পুরসভার চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান, C.I.C (পূর্ত দপ্তর) এবং পৌর আধিকারিকদের সঙ্গে বসেন সাংসদ পার্থ ভৌমিক। সভায় একাধিক সমস্যার খতিয়ান পেশ হয়, যার মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ছিল – পুর এলাকার বেহাল রাস্তাঘাট, নিকাশি ব্যবস্থার দুর্দশা, পানীয় জলের সংকট এবং কিছু ওয়ার্ডে অন্ধকারাচ্ছন্ন এলাকা। পার্থ ভৌমিক স্পষ্টভাবে বলেন, “আমি রাজনীতি করতে আসিনি, কাজ করতে এসেছি। মানুষের সমস্যার সমাধান করাই আমার অগ্রাধিকার।” তিনি আরও জানান, “জনতার দরবারে আসা অভিযোগ শুধু শোনা নয়, সেই অভিযোগের বাস্তব রূপান্তরই হবে আমাদের দলের লক্ষ্য।”
সভা সূত্রে জানা গেছে, সাংসদ পূর্ত দপ্তরের C.I.C-কে নির্দেশ দিয়েছেন, ভাটপাড়া পৌরসভার অন্তর্গত প্রতিটি বেহাল রাস্তার তালিকা তৈরি করে দ্রুত সংস্কারের পরিকল্পনা হাতে নিতে হবে। সেই কাজের অগ্রগতির রিপোর্ট ১৫ দিনের মধ্যে জমা দিতে হবে। শুধু তাই নয়, বিভিন্ন ওয়ার্ডে আলো সংক্রান্ত সমস্যা, পয়ঃপ্রণালির খারাপ দশা এবং কিছু সরকারি পরিকাঠামো মেরামতের বিষয়ে বিশেষ নজর দিতে বলা হয়েছে। এদিনের বৈঠকে উপস্থিত এক পৌর আধিকারিক জানিয়েছেন, “সাংসদ মহাশয়ের নেতৃত্বে যেভাবে সমন্বয় করে কাজ এগোচ্ছে, তাতে আমরা আশাবাদী, আগামী দিনে অনেক সমস্যা কাটিয়ে উঠতে পারব।”ভাটপাড়া এলাকায় জনতার দরবার কার্যক্রমে সাধারণ মানুষ নিজেদের সমস্যা সরাসরি সাংসদের কাছে তুলে ধরছেন। কারও রাস্তা নেই, কারও বাড়ির পাশে ড্রেনজ সমস্যা, কেউ বলছেন পানীয় জল নেই, আবার কেউ বলছেন চিকিৎসা পরিষেবার অভাব। এই ধরনের প্রত্যক্ষ অভিযোগের ভিত্তিতেই সাংসদের দপ্তর প্রতিটি বিষয় ধরে ধরে ব্যবস্থা নিচ্ছে। স্থানীয় বাসিন্দা রিঙ্কু চক্রবর্তী বললেন, “এই প্রথম দেখছি একজন সাংসদ রোজ মানুষের দরজায় এসে কথা বলছেন, শুনছেন এবং কাজের আশ্বাস দিচ্ছেন।” আবার এক প্রবীণ নাগরিক অজিত সাহা বলেন, “রাজনীতি অনেক দেখেছি, কিন্তু পার্থবাবুর মতো করে এত নিবিড়ভাবে কাউকে এলাকায় কাজ করতে দেখিনি।”পার্থ ভৌমিকের এই ধরনের সক্রিয়তা রাজনৈতিক কৌশলের অংশ কি না, তা নিয়ে বিতর্ক থাকলেও, সাধারণ মানুষের মধ্যে ইতিবাচক প্রভাব পড়ছে তা স্পষ্ট। বিশ্লেষক অরুণাভ সেন বলেন, “ভাটপাড়া তৃণমূলের জন্য কঠিন এলাকা। বিজেপি এখানে সংগঠন শক্তিশালী করেছে আগেই। কিন্তু যদি সাংসদের এই উদ্যোগগুলো বাস্তব রূপ পায়, তাহলে নিঃসন্দেহে তৃণমূলের জন্য নতুন দরজা খুলতে পারে।” রাজনৈতিকভাবে দেখতে গেলে, আগামী বিধানসভা নির্বাচনের দিক থেকে পার্থ ভৌমিক ভাটপাড়াকে গুরুত্ব দিচ্ছেন — এর পেছনে শুধু সাংসদ হিসেবেই নয়, সংগঠনের মুখ হিসেবেও তাঁর ভূমিকা তৈরি হচ্ছে।
উল্লেখ্য, ভাটপাড়া এলাকাটি অতীতে বহুবার রাজনৈতিক সংঘর্ষ, শিল্পপতি বনাম শ্রমিক সংঘাত এবং প্রশাসনিক অব্যবস্থার কারণে আলোচনায় এসেছে। এই জায়গাতেই এখন তৃণমূলের সাংসদ নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন, একাধিক সরকারি দফতরের সঙ্গে সমন্বয় রেখে জনসেবা পৌঁছে দেওয়ার চেষ্টা করছেন – এটিই তাঁর নেতৃত্বের অন্য রূপ তুলে ধরছে। পার্থ ভৌমিক বলেছেন, “আমাদের রাজনীতি মানুষের ঘরের ঘরে পৌঁছনোর রাজনীতি। কাজই এখন আমাদের সবচেয়ে বড় অস্ত্র।” সবমিলিয়ে পার্থ ভৌমিকের এই পদক্ষেপ প্রমাণ করছে, রাজনীতিতে বিশ্বাসযোগ্যতা ফেরানোর জন্য আর কথার ফুলঝুরি নয়, দরকার কাজের নিরিখে মানুষের আস্থা অর্জন করা। ভাটপাড়ার মানুষ এখন সেই পরিবর্তনের প্রত্যাশাতেই চোখ রেখেছে তাঁদের সাংসদের দিকে।