mother tried to kill his son: পূর্ব মেদিনীপুরের রামনগর থানা এলাকার উত্তর হলদিয়া গ্রামের খয়রান্ডা এলাকায় ঘটল এক চমকপ্রদ, লোমহর্ষক ও হৃদয়বিদারক ঘটনা, যা গোটা গ্রাম ও প্রশাসনকে স্তব্ধ করে দিয়েছে। একজন মা তার নিজের ছোট্ট শিশুকে রাতের অন্ধকারে ফেলে দিয়ে আসে মৃত্যুর মুখে, শুধুমাত্র নিজের নতুন স্বামীর সঙ্গে বাধাহীনভাবে সংসার করতে চাওয়ার কারণে! পাঁচ বছরের ছোট্ট শিশুটি পড়েছিল ফাঁকা মাঠের মধ্যে, সারারাত ঠান্ডায় কাঁপতে কাঁপতে তার গায়ে পড়েছিল পিঁপড়ের কামড়, সেই যন্ত্রনাতেই জ্ঞান ফিরে আসে তার। রক্তাক্ত অবস্থায় কোনোভাবে হামাগুড়ি দিয়ে এক গ্রামবাসীর বাড়িতে পৌঁছে শিশুটি কান্নায় ভেঙে পড়ে। খাবার ও জল চেয়ে বলেই জ্ঞান হারিয়ে ফেলে সে। শিশুটির ক্ষতবিক্ষত দেহ, ভাঙা হাত ও মাথায় রক্তাক্ত চিহ্ন দেখে শিউরে ওঠেন ওই বাড়ির লোকেরা, মুহূর্তেই খবর ছড়িয়ে পড়ে গোটা গ্রামে।
জানা গেছে, শিশুটির আসল বাবা কার্তিক গিরির মৃত্যু হয়েছিল প্রায় পাঁচ বছর আগে। তারপর থেকে মা মামনি গিরি নিজের সন্তানকে নিয়ে থাকতেন উত্তর হলদিয়া গ্রামে। কয়েক মাস আগে প্রেম করে বিয়ে করেন সুকদেব মন্ডল নামের এক যুবককে। এরপর থেকেই শুরু হয় ছোট্ট শিশুটির উপর অমানবিক অত্যাচার। তার অস্তিত্বই যেন বাড়তি বোঝা হয়ে উঠেছিল মায়ের জন্য! অভিযোগ, দ্বিতীয় স্বামী সুকদেবের সাথে নির্বিঘ্নে সংসার করতে চাইছিলেন মামনি। আর তাতে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিল তারই প্রথম পক্ষের সন্তান। তাই এক রাতে সেই কাঁটা সরানোর পরিকল্পনা করে মা ও সৎ বাবা মিলে।
গভীর রাতে শিশুটিকে বিছানা থেকে তুলে নিয়ে মুখ বেঁধে মারধর করা হয় নির্মমভাবে। প্রচণ্ড আঘাতে যখন অচৈতন্য হয়ে পড়ে, তখন মৃত ভেবে তাকে নিয়ে যাওয়া হয় গ্রামের এক ফাঁকা বাদাম খেতের ঝোপের মধ্যে। রাতের অন্ধকারে শেয়ালের খাদ্য হবে ভেবেই ছেড়ে আসে তারা। প্রচণ্ড ঠান্ডায় শিশুটি পড়ে থাকে সারারাত। কিন্তু প্রকৃতি যেন মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরিয়ে আনল তাকে! লাল পিঁপড়ের কামড়ে ব্যথায় জ্ঞান ফিরে আসে শিশুটির। কোনোভাবে কাতরাতে কাতরাতে উঠে দাঁড়িয়ে সাহায্য চাইতে চাইতে চলে আসে গ্রামের এক বাড়ির উঠোনে।
শিশুটির করুন অবস্থা দেখে ততক্ষণে গ্রামজুড়ে তীব্র ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে। এমন ঘটনা কল্পনাও করতে পারছেন না এলাকাবাসী। যে মা নয় মাস পেটে ধরেছিল, সেই মা-ই কীভাবে সন্তানকে ঠান্ডায় ফেলে মারতে পারে! খবর পেয়ে পুলিশ এসে অভিযুক্ত মা মামনি গিরি ও তার স্বামী সুকদেব মন্ডলকে গ্রেফতার করে। কাঁথি মহকুমা আদালতে তাদের হাজির করা হলে, পুলিশ হেফাজতের নির্দেশ দেওয়া হয়।
এলাকার মানুষজন চাইছেন অভিযুক্তদের কঠোর শাস্তি হোক, যাতে ভবিষ্যতে এমন পাশবিক ঘটনা আর না ঘটে। পুলিশের তরফে জানানো হয়েছে, শিশুটিকে উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য নিয়ে যাওয়া হয়েছে এবং তার শারীরিক অবস্থা পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। শিশুটির নিরাপত্তার দায়িত্বও প্রশাসন নিচ্ছে।
এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে স্থানীয় এক সমাজকর্মী জানান, “এটা শুধু একটি অপরাধ নয়, এটা মানবতাকে লজ্জায় ফেলে দেওয়া এক ঘটনা! একজন মা কীভাবে এমন কাজ করতে পারেন, সেটা ভেবে আমরা সবাই শিহরিত।”
গোটা পূর্ব মেদিনীপুর জেলাজুড়ে এই ঘটনার তীব্র প্রতিক্রিয়া পড়েছে। শিশুটির ভবিষ্যৎ কী হবে, সেটাই এখন বড় প্রশ্ন। প্রশাসনের কাছে এলাকাবাসীর দাবি, এমন নৃশংস অপরাধের কঠোর সাজা দিতে হবে, যাতে আর কোনো মা তার সন্তানকে এভাবে মৃত্যুর দিকে ঠেলে না দেয়।
পূর্ব মেদিনীপুরের এই ঘটনা আমাদের সমাজের এক অন্ধকার দিককেই তুলে ধরেছে, যেখানে ব্যক্তিগত চাহিদার জন্য এক মা নিজের সন্তানের জীবন নিতেও পিছপা হচ্ছে না। সমাজ কি এতটাই নিষ্ঠুর হয়ে গেছে? আমরা কি দিন দিন মানবিকতা হারিয়ে ফেলছি? এই ঘটনার পর সেই প্রশ্নই ঘুরপাক খাচ্ছে মানুষের মনে।