Monsoon rains across the state, disaster in North Bengal!: বর্ষাকাল ভারতের আবহাওয়ার একটি গুরুত্বপূর্ণ ও প্রাকৃতিকভাবে সক্রিয় সময়। প্রতিবারের মতোই এবারও রাজ্যে বর্ষা প্রবেশের পর থেকেই ধীরে ধীরে বাড়ছে বৃষ্টির দাপট। তবে এবারের পরিস্থিতি কিছুটা আলাদা। একদিকে অসম ও বাংলাদেশের উপর তৈরি হয়েছে জোড়া ঘূর্ণাবর্ত, অন্যদিকে মৌসুমী অক্ষরেখা বিস্তৃত হয়েছে কোচবিহারের উপর দিয়ে উত্তর-পূর্ব ভারতের অরুণাচল পর্যন্ত। এই দুই সিস্টেমের যুগলপ্রভাবে রাজ্যের বেশ কিছু অংশে শুরু হয়েছে বৃষ্টি, যার মাত্রা উত্তরবঙ্গে পৌঁছেছে দুর্যোগের পর্যায়ে।উত্তরবঙ্গে মঙ্গলবার থেকেই শুরু হয়েছে টানা ভারী বৃষ্টি। দার্জিলিং, কালিম্পং, আলিপুরদুয়ার, কোচবিহার ও জলপাইগুড়ির মতো পার্বত্য ও নিচু এলাকাগুলিতে ইতিমধ্যেই দেখা যাচ্ছে বৃষ্টির তীব্রতা। আবহাওয়া দফতরের পূর্বাভাস অনুযায়ী, এই বৃষ্টি আরও বাড়বে, যার ফলে বাড়তে পারে নদীর জলস্তর। বিশেষত তিস্তা, তোর্সা, জলঢাকা এবং অন্য পাহাড়ি নদীগুলিতে জলস্তর বাড়লে নিচু অঞ্চলে বন্যার আশঙ্কা প্রবল।পাশাপাশি, পার্বত্য এলাকায় যেভাবে বৃষ্টি হচ্ছে, তাতে ধস নামার সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। দার্জিলিং ও কালিম্পং জেলার বিভিন্ন রাস্তায় ইতিমধ্যেই ছোটখাটো ধসের খবর আসতে শুরু করেছে। একাধিক এলাকায় জল ঢুকে পড়েছে লোকালয়ে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে রাজ্য বিপর্যয় মোকাবিলা দফতরকে সতর্ক অবস্থানে রাখা হয়েছে।
আবহাওয়া দফতর ও রাজ্য বিপর্যয় মোকাবিলা দফতরের তরফে উত্তরবঙ্গের জন্য জারি করা হয়েছে ‘অরেঞ্জ অ্যালার্ট’। বিশেষ করে পাহাড়ি ও নদী তীরবর্তী এলাকাগুলিতে প্রশাসনকে প্রস্তুত থাকতে বলা হয়েছে।পাশাপাশি, বন ও পরিবেশ দফতরও পাহাড়ি এলাকা ও জঙ্গল সংলগ্ন অঞ্চলে নজরদারি বাড়িয়েছে, কারণ বৃষ্টির ফলে বন্যপ্রাণীর চলাচল বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।উত্তরবঙ্গের সাধারণ মানুষের মনে এখন আতঙ্কের ছায়া। দার্জিলিংয়ের এক চা-বাগানের কর্মী বলেন, “প্রতিদিন পাহাড়ি রাস্তা দিয়ে কাজে যাই। এখন ওই রাস্তায় ধস নামলে আমরা আটকে পড়ব। এমনিতেই রাস্তা খারাপ, তার উপর এত বৃষ্টি… খুব ভয় লাগছে।”স্কুল-কলেজের পড়ুয়া ও অভিভাবকরাও চিন্তিত। এমন অবস্থায় যদি ধস নামে বা রাস্তা বন্ধ হয়ে যায়, ছাত্রছাত্রীদের যাতায়াত দুষ্কর হয়ে পড়বে।বর্ষার শুরুতে এমন জোড়া ঘূর্ণাবর্ত ও অক্ষরেখার সংমিশ্রণ অতীতে বিরল ছিল না। তবে এবারের তীব্রতা এবং অঞ্চলভিত্তিক প্রভাব বিশেষ চিন্তার বিষয় হয়ে উঠছে। একদিকে উত্তরবঙ্গে দুর্যোগ পরিস্থিতি, অন্যদিকে দক্ষিণবঙ্গে মেঘলা আকাশ ও দমকা হাওয়ার সঙ্গে হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টিপাত— পুরো রাজ্যজুড়েই এক ধরনের সতর্ক অবস্থান তৈরি হয়েছে।দক্ষিণবঙ্গের পূর্ব ও পশ্চিম বর্ধমান, বীরভূম, মুর্শিদাবাদ, নদীয়া এবং দুই ২৪ পরগনাতেও ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনার কথা বলা হয়েছে। সঙ্গে ঘণ্টায় ৩০ থেকে ৪০ কিমি বেগে দমকা হাওয়া বইবে বলেও পূর্বাভাস রয়েছে। কৃষি ও ঘরোয়া নির্মাণকাজে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে।

আগামী কয়েকদিন এই বৃষ্টির ধারা অব্যাহত থাকলে উত্তরবঙ্গে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা মারাত্মকভাবে ব্যাহত হতে পারে। ধস, বন্যা, যোগাযোগ বিচ্ছিন্নতা— এসব মোকাবিলায় সরকারকে আরও সক্রিয় হতে হবে।দক্ষিণবঙ্গেও যদি মৌসুমী অক্ষরেখার অবস্থান দীর্ঘস্থায়ী হয়, তাহলে একাধিক জেলায় জল জমে যাওয়া, কৃষিক্ষেত্রে ক্ষতি এবং শহরে জনজীবন ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। কলকাতায় এখনই মেঘলা আকাশ এবং বাতাসে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ ৮১ থেকে ৯৮ শতাংশের মধ্যে ঘোরাফেরা করছে। আগামী ২৪ ঘণ্টায় শহরের তাপমাত্রা ২৭-৩২ ডিগ্রির মধ্যে থাকবে বলেও জানানো হয়েছে।বর্ষা যেমন কৃষির জন্য আশীর্বাদ, তেমনি অতিবৃষ্টি হয়ে উঠতে পারে অভিশাপ। এবারের বর্ষার শুরুতেই উত্তরবঙ্গ দুর্যোগের মুখে পড়েছে। প্রশাসন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে তৎপর হলেও প্রকৃতির উপর কোনও নিয়ন্ত্রণ নেই। তাই জনসচেতনতা ও আগাম প্রস্তুতি এখন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।