Monsoon axis active again in Bengal, heavy rains forecast in the state:বর্ষা মানেই বাংলার প্রাণ। তবে সেই বর্ষা কখনো আনন্দের বার্তা নিয়ে আসে, আবার কখনো উদ্বেগ বাড়িয়ে তোলে। এই বছরও ব্যতিক্রম ঘটল না। সেপ্টেম্বরের শুরুতেই মৌসুমি অক্ষরেখা ফের বাংলায় সক্রিয় হয়েছে। দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমী বায়ুর স্বাভাবিক প্রবাহে ফের জোয়ার এসেছে। ফলে রাজ্যের বিস্তীর্ণ অংশ জুড়ে বৃষ্টির সম্ভাবনা প্রবল হয়েছে। বিশেষ করে সমুদ্রের ঘূর্ণাবর্ত ও সম্ভাব্য নিম্নচাপের কারণে আবহাওয়া বিভাগ সতর্কতা জারি করেছে।আবহাওয়া দফতরের তথ্য অনুযায়ী, বাংলা-উড়িষ্যা উপকূলে বর্তমানে একটি ঘূর্ণাবর্ত সক্রিয় রয়েছে। আগামী ২৪ থেকে ৪৮ ঘন্টার মধ্যে সেটি নিম্নচাপে পরিণত হওয়ার প্রবল সম্ভাবনা। এর ফলে সমুদ্র উত্তাল থাকবে এবং প্রবল ঢেউয়ের সৃষ্টি হতে পারে।মৎস্যজীবীদের নিরাপত্তার কথা ভেবে ইতিমধ্যেই ৪ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সমুদ্রে মাছ ধরতে যাওয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি হয়েছে। দক্ষিণবঙ্গের বেশ কয়েকটি জেলায় আংশিক মেঘলা আকাশের পাশাপাশি বজ্রবিদ্যুৎসহ বিক্ষিপ্ত বৃষ্টি চলবে। বিশেষ করে কলকাতা ও আশপাশের জেলাগুলিতে অতি ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে।উত্তরবঙ্গের জেলাগুলিও এবার বাদ যাচ্ছে না। সোমবার থেকে আলিপুরদুয়ার, কোচবিহার, জলপাইগুড়ি, দুই দিনাজপুর এবং মালদহ জেলায় ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে।
পাশাপাশি দমকা হাওয়া বইবে, যার গতিবেগ ঘণ্টায় ৩০ থেকে ৪০ কিলোমিটার পর্যন্ত পৌঁছতে পারে।আবহাওয়া দফতরের পক্ষ থেকে ইতিমধ্যেই সতর্কতা জারি হয়েছে। বিপদ এড়াতে উপকূলীয় জেলাগুলির প্রশাসনকে প্রস্তুত থাকতে বলা হয়েছে। মৎস্যজীবীদের ফেরার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে এবং সমুদ্রে কোনো নৌকা যাতে না যায়, তার ওপর কড়া নজরদারি চলছে। কলকাতা পৌরসভা ও দক্ষিণবঙ্গের বিভিন্ন পুরসভাকেও সম্ভাব্য জলজটের জন্য আগে থেকেই প্রস্তুতি নেওয়ার বার্তা দেওয়া হয়েছে।দক্ষিণ ২৪ পরগনার একাধিক মৎস্যজীবী জানিয়েছেন, টানা কয়েকদিন সমুদ্রে মাছ ধরতে না গেলে জীবিকার বড় ক্ষতি হবে। তবে নিরাপত্তার স্বার্থে তাঁরা সরকারের নির্দেশ মেনে চলতে বাধ্য। অন্যদিকে কলকাতার সাধারণ মানুষ বলছেন, ভারী বৃষ্টি হলে শহরের রাস্তায় জল জমা, যানজট ও বিদ্যুৎ বিভ্রাটের আশঙ্কা থাকে। ফলে অনেকেই আতঙ্কিত।উত্তরবঙ্গের চাষিরাও চিন্তিত। টানা ভারী বৃষ্টি হলে জমিতে জল দাঁড়িয়ে ফসলের ক্ষতি হতে পারে।
তবে কেউ কেউ আশাবাদীও বটে, কারণ প্রয়োজনীয় বৃষ্টির জেরে খরিফ চাষের অনেকটা সুবিধা হবে।আবহাওয়া বিশেষজ্ঞদের মতে, সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহ থেকেই মৌসুমি অক্ষরেখা সক্রিয় হয়ে পড়ায় রাজ্যে বৃষ্টির সম্ভাবনা স্বাভাবিকভাবেই বেড়েছে। এবার বাংলার পাশাপাশি ওড়িশা এবং ঝাড়খণ্ডেও এর প্রভাব পড়বে।কলকাতার তাপমাত্রার দিক থেকে দেখা যাচ্ছে, সোমবার শহরের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ২৮.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস, আর সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩২ ডিগ্রির কাছাকাছি ঘোরাফেরা করবে। বাতাসে আর্দ্রতার পরিমাণ ৬৩ থেকে ৯৪ শতাংশের মধ্যে। ফলে বৃষ্টির সঙ্গে সঙ্গে ভ্যাপসা গরমও কিছুটা অনুভূত হবে।আগামী এক সপ্তাহ বাংলার আবহাওয়া বেশ পরিবর্তনশীল থাকবে বলে মনে করছেন আবহাওয়াবিদরা। নিম্নচাপ গভীর হলে ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা আরও বাড়বে। এর ফলে নদী ও খাল-বিল উপচে পড়তে পারে, তৈরি হতে পারে বন্যার পরিস্থিতিও।তবে ইতিবাচক দিক হলো, খরিফ চাষের জন্য এই বৃষ্টি কিছুটা স্বস্তি বয়ে আনবে। পাশাপাশি ভূগর্ভস্থ জলের স্তর পুনরায় ভরে ওঠায় দীর্ঘমেয়াদে কৃষি এবং পানীয় জল সরবরাহে উপকার মিলতে পারে।