MLA at the inauguration of the Ganjer Bazar Dhamaka Football Cup:-শনিবার, ২১শে মার্চ দক্ষিণ ২৪ পরগনার পাথর প্রতিমা ব্লকের গঞ্জের বাজার ময়দান পরিণত হয়েছিল উৎসবের মঞ্চে। নব প্রয়াসের উদ্যোগে আয়োজিত দিবারাত্রি ফুটবল প্রতিযোগিতা দেখতে সকাল থেকেই উপচে পড়ে মানুষের ভিড়। এলাকাবাসীর দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান ঘটিয়ে জমকালো আয়োজনের মাধ্যমে শুরু হয় এই ফুটবল প্রতিযোগিতা। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন পাথর প্রতিমার বিধায়ক সমীর কুমার জানা এবং পাথর প্রতিমা থানার ভারপ্রাপ্ত আধিকারিক পার্থ সরকার। তাঁদের সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন আরও বহু বিশিষ্ট ব্যক্তি এবং স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা।ফুটবল প্রতিযোগিতার উদ্বোধনের আগে অনুষ্ঠিত হয় এক বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা, যা এলাকাবাসীর মনে বিশেষ ছাপ ফেলে। রামগঙ্গা থেকে হসপিটাল মোড় পর্যন্ত প্রায় ১২ কিলোমিটার জুড়ে এই শোভাযাত্রা বের হয়। শোভাযাত্রায় স্থানীয় স্কুল-কলেজের ছাত্রছাত্রী, যুব সম্প্রদায়, এবং এলাকার সাধারণ মানুষ উৎসাহের সঙ্গে অংশ নেন। ৫০০০ মানুষের আনন্দ-উল্লাসে মেতে ওঠা এই শোভাযাত্রায় আরও আকর্ষণ যোগ করেন জনপ্রিয় অভিনেতা-অভিনেত্রীদের উপস্থিতি। তাঁরা এলাকাবাসীর সঙ্গে কুশল বিনিময় করে মুহূর্তটিকে আরও স্মরণীয় করে তোলেন।
ফুটবল প্রতিযোগিতা শুরুর আগে আয়োজক নব প্রয়াস এক মানবিক উদ্যোগের সাক্ষী হয়। স্থানীয় দরিদ্র, অসহায় মানুষদের হাতে নতুন পোশাক তুলে দেওয়া হয়। এছাড়া মেধাবী ছাত্রছাত্রীদের সংবর্ধনা জানানো হয়। এমন মানবিক উদ্যোগে এলাকার মানুষ অত্যন্ত খুশি এবং আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েন। এই ধরনের উদ্যোগ যে আরও বেশি মানুষকে সামাজিক দায়িত্ব পালন করতে অনুপ্রাণিত করবে, তা বলার অপেক্ষা রাখে না।দিবারাত্রির এই ফুটবল প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছিল মোট আটটি দল। তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতার মধ্যে দিয়ে একের পর এক ম্যাচ পেরিয়ে ফাইনালে পৌঁছায় নামখানার দুই শক্তিশালী দল—“মা শিতলা ফিট সেন্টার” এবং “মা সারদা সবজি ভান্ডার”। চূড়ান্ত পর্যায়ের ম্যাচটি ছিল একেবারে রুদ্ধশ্বাস। হাজার হাজার দর্শক গঞ্জের বাজার ময়দানে উপস্থিত থেকে ফাইনাল ম্যাচ উপভোগ করেন। টানটান উত্তেজনার মধ্যে শেষ পর্যন্ত নামখানা মা শিতলা ফিট সেন্টার দল প্রতিপক্ষকে হারিয়ে বিজয়মুকুট পরে।বিজয়ী দল নামখানা মা শিতলা ফিট সেন্টারের হাতে তুলে দেওয়া হয় ৬০ হাজার টাকা নগদ অর্থ এবং একটি সুদৃশ্য ট্রফি। অন্যদিকে, রানার্স-আপ দল মা সারদা সবজি ভান্ডার পায় ৪০ হাজার টাকা নগদ এবং একটি ট্রফি। খেলোয়াড়রা পুরস্কার পেয়ে উচ্ছ্বসিত, এবং দর্শকদের উল্লাস মুহূর্তটিকে আরও স্মরণীয় করে তোলে। বিজয়ী দলের ক্যাপ্টেন বলেন, “এটা আমাদের জন্য এক বিশাল সাফল্য। এত দর্শকের সামনে খেলতে পেরে আমরা ভীষণ গর্বিত।’’
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে পাথর প্রতিমার বিধায়ক সমীর কুমার জানা খেলার আয়োজকদের ভূয়সী প্রশংসা করেন। তিনি বলেন, “খেলাধুলার মাধ্যমে যুবসমাজকে মাদক এবং সমাজবিরোধী কার্যকলাপ থেকে দূরে রাখা সম্ভব। ফুটবল শুধু একটি খেলা নয়, এটি আমাদের এলাকার ঐতিহ্য এবং সংস্কৃতির প্রতীক।” পাশাপাশি তিনি জানান, ভবিষ্যতে পাথর প্রতিমার ক্রীড়া পরিকাঠামো উন্নয়নের জন্য আরও পদক্ষেপ নেওয়া হবে।পাথর প্রতিমা থানার ওসি পার্থ সরকারও খেলার আয়োজনের প্রশংসা করেন এবং এলাকার শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষায় সকলের সহযোগিতা চান। তিনি বলেন, ‘‘এই ধরনের প্রতিযোগিতা যুবসমাজকে সুস্থ মানসিকতা গড়ে তুলতে সাহায্য করে। এলাকাবাসীর সহযোগিতায় খেলা শান্তিপূর্ণভাবে অনুষ্ঠিত হয়েছে।”দক্ষিণ ২৪ পরগনার পাথর প্রতিমা ব্লক বরাবরই ফুটবলপ্রেমী অঞ্চল হিসেবে পরিচিত। এদিনের প্রতিযোগিতায় সমর্থকদের উচ্ছ্বাস ছিল চোখে পড়ার মতো। মাঠে উপস্থিত থাকা এক প্রবীণ দর্শক রামলাল মণ্ডল বলেন, “আমাদের সময়েও ফুটবল নিয়ে এত উন্মাদনা ছিল। এখন নতুন প্রজন্মকেও খেলাধুলায় আগ্রহী হতে দেখে খুব ভালো লাগছে।”
অন্যদিকে, যুব সমাজ এবং ক্রীড়াপ্রেমীরা আশা করছেন, ভবিষ্যতে এমন আরও প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হবে। তারা জানিয়েছেন, এই ধরনের টুর্নামেন্টে অংশ নেওয়ার জন্য আরও বেশি দলকে আমন্ত্রণ জানানো উচিত এবং পুরস্কারের পরিমাণও আরও বাড়ানো হলে প্রতিযোগিতা আরও আকর্ষণীয় হবে।“গঞ্জের বাজার ধামাকা ফুটবল কাপ” শুধু একটি খেলা নয়, এটি পাথর প্রতিমা ব্লকের মানুষের আবেগ এবং ঐতিহ্যের প্রতিফলন। এমন আয়োজন এলাকার মানুষের মনকে যেমন জয় করেছে, তেমনি নতুন প্রজন্মের খেলোয়াড়দের জন্য একটি বড় মঞ্চ তৈরি করেছে। আগামী বছর আরও বড় পরিসরে এই প্রতিযোগিতা আয়োজনের জন্য ইতিমধ্যেই আলোচনা শুরু হয়েছে। সব মিলিয়ে, ফুটবল এবং উৎসবের মেলবন্ধনে জমজমাট হয়ে উঠল গঞ্জের বাজার ময়দান।