Minors will not be able to open accounts on social media.:-ভারতে ডিজিটাল নিরাপত্তা ও ব্যক্তিগত তথ্য সুরক্ষার লক্ষ্যে কেন্দ্রীয় সরকার নতুন নিয়মাবলী প্রস্তাব করেছে, যা অপ্রাপ্তবয়স্কদের জন্য সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার আরও কঠিন করে তুলতে চলেছে। শুক্রবার প্রকাশিত ডিজিটাল ডেটা প্রোটেকশন আইনের খসড়া অনুযায়ী, ১৮ বছরের নিচে কোনও শিশু সোশ্যাল মিডিয়া বা ইমেল অ্যাকাউন্ট খুলতে চাইলে অভিভাবকের অনুমতি আবশ্যক। শুধু অনুমতি নয়, অভিভাবকের পরিচয় ও বয়স যাচাই করাও বাধ্যতামূলক হবে।এই নতুন নিয়মের লক্ষ্য হল ডিজিটাল দুনিয়ায় অপ্রাপ্তবয়স্কদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মে শিশুদের জন্য বিভিন্ন বিপজ্জনক প্রবণতা, সাইবার বুলিং, এবং মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যার সংখ্যা বেড়েছে। এই প্রস্তাবিত বিধি সেই ঝুঁকি কমানোর উদ্দেশ্যে তৈরি করা হয়েছে। অভিভাবকের অনুমতি ও তথ্য যাচাই ছাড়া কোনও প্ল্যাটফর্ম অপ্রাপ্তবয়স্কদের অ্যাকাউন্ট খুলতে দেবে না।
তবে এই খসড়া বিধি কেবলমাত্র প্রস্তাবিত হয়েছে এবং ১৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত জনমত গ্রহণ করা হবে। এর পরে জনগণের মতামত এবং সুপারিশের ভিত্তিতে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।কেন্দ্রীয় সরকারের এই পদক্ষেপ ইতিবাচকভাবে গ্রহণ করেছে বিভিন্ন মহল। কলকাতার এক সমাজবিদ, ড. শর্মিলা ঘোষ বলেন, “আজকের দিনে ডিজিটাল মাধ্যম আমাদের জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে উঠেছে। তবে, শিশুরা এই মাধ্যমগুলোতে যেভাবে অসুরক্ষিত হয়ে উঠছে, এটি একটি বড় চিন্তার বিষয়। সরকারের এই পদক্ষেপ শিশুদের সুরক্ষার দিক থেকে একটি বড় পরিবর্তন আনবে।”অপরদিকে, অভিভাবকদের মধ্যে এই বিষয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গিয়েছে। বারাসাতের বাসিন্দা রমেন দত্ত জানালেন, “আমার মেয়ে ক্লাস নাইন-এ পড়ে। ওর পড়াশোনার জন্য ইমেল অ্যাকাউন্ট দরকার। এখন যদি এত কঠিন প্রক্রিয়া চলে আসে, তবে আমাদের সমস্যায় পড়তে হবে।” অন্যদিকে, এক অভিভাবক মীনাক্ষী চ্যাটার্জি বলেন, “আমি খুশি যে সরকার এমন পদক্ষেপ নিয়েছে। শিশুদের সুরক্ষার জন্য এটি প্রয়োজনীয় ছিল।”
তবে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই নিয়ম কার্যকর করতে গেলে সোশ্যাল মিডিয়া সংস্থাগুলির উপর অতিরিক্ত চাপ পড়বে। তাদের অভিভাবকের পরিচয় যাচাই এবং তথ্য সংগ্রহ করার জন্য বিশেষ প্রযুক্তি ও কর্মক্ষমতা বাড়াতে হবে। আবার, গোপনীয়তা বজায় রাখা এবং তথ্য ফাঁস রোধ করাও একটি বড় চ্যালেঞ্জ হবে।সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মগুলির তরফে এখনও এই বিষয়ে সরাসরি কোনও প্রতিক্রিয়া মেলেনি। তবে, অতীতে এই সংস্থাগুলি প্রায়ই বলেছে যে, অপ্রাপ্তবয়স্কদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা তাদের প্রধান লক্ষ্য।কিন্তু প্রশ্ন থেকে যায়, এই নিয়ম বাস্তবায়ন কতটা কার্যকর হবে? বাস্তবে দেখা যায়, অপ্রাপ্তবয়স্করা প্রায়শই ভুল বয়স ব্যবহার করে সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্ট খুলে নেয়। এমন পরিস্থিতিতে অভিভাবকদের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে। অভিভাবকদের অবশ্যই সচেতন হতে হবে এবং নিশ্চিত করতে হবে যে তাদের সন্তানরা এই নিয়ম মেনে চলেছে।
এর পাশাপাশি, ডিজিটাল শিক্ষার গুরুত্বও বেড়ে উঠছে। অভিভাবকদের ডিজিটাল নিরাপত্তা সম্পর্কে সচেতন করা এবং শিশুদের সাইবার দুনিয়ার ঝুঁকি সম্পর্কে অবহিত করা অত্যন্ত প্রয়োজনীয়।সরকারের এই পদক্ষেপের পাশাপাশি, ডিজিটাল ডেটা প্রোটেকশন আইনে উল্লেখ করা হয়েছে যে, কোনও সংস্থা যদি তথ্য ফাঁস করে, তাহলে ২৫০ কোটি টাকা পর্যন্ত জরিমানা করা হতে পারে। তবে এই জরিমানার বিধি এখনও চূড়ান্ত নয় এবং তা ভবিষ্যতে সংশোধিত হতে পারে।এই নতুন বিধি কার্যকর হলে সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মগুলিতে কেবলমাত্র অপ্রাপ্তবয়স্কদের নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে না, বরং সাইবার অপরাধ এবং ভুল তথ্য ছড়ানোর প্রবণতাও কমানো সম্ভব হবে। তবে এটি বাস্তবায়নের জন্য সরকারের পাশাপাশি অভিভাবক এবং প্ল্যাটফর্মগুলির যৌথ দায়িত্ব থাকবে।