Minister meets families of missing pilgrims:গঙ্গাসাগর মানেই হাজার হাজার মানুষের ধর্মীয় ভক্তির কেন্দ্র, যেখানে প্রতি বছর বহু পুণ্যার্থী তাঁদের বিশ্বাস আর ভক্তি নিয়ে সাগরের জলে ডুব দেন। পুণ্য অর্জনের আশায় বহু দূর থেকে মানুষ ছুটে আসেন কপিল মুনির আশ্রমে। এবছরও তার ব্যতিক্রম হয়নি। কিন্তু এবারের যাত্রা যেন কারও কারও জন্য বয়ে আনল দুঃস্বপ্ন। গঙ্গাসাগরের উত্তাল সাগর থেকে এখনও পর্যন্ত উদ্ধার করা যায়নি উত্তরপ্রদেশ থেকে আগত এক পুণ্যার্থী সন্দীপ গৌড়কে। স্নানের সময় ঢেউয়ে তলিয়ে যাওয়ার এই ঘটনায় পরিবারে নেমে এসেছে কান্নার রোল, আর সেই মুহূর্তে পাশে দাঁড়ালেন রাজ্যের সুন্দরবন উন্নয়ন মন্ত্রী বঙ্কিমচন্দ্র হাজরা।উত্তরপ্রদেশের বাসিন্দা সন্দীপ গৌড় ও তাঁর পরিবারের কয়েকজন সদস্য কপিল মুনির আশ্রমে পুজো দেওয়ার উদ্দেশ্যে গঙ্গাসাগরে আসেন।পুজোর আগে, পরিবারের কিছু সদস্য প্রশাসনিক অনুমতি না নিয়েই স্নানের জন্য সমুদ্রের জলে নেমে পড়েন। সে সময় সাগরের জল ছিল খুবই উত্তাল, যা আগেই বারবার প্রশাসনের তরফে সতর্কবার্তা হিসেবে জানানো হয়েছিল।
কিন্তু সেই সতর্কতা উপেক্ষা করেই স্নানে নামেন সন্দীপ। প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে, স্নানের কিছুক্ষণ পরেই হঠাৎ একটা প্রবল ঢেউ এসে পড়ে এবং তাতেই তলিয়ে যান সন্দীপ গৌড়। পরিবারের চিৎকার-চেঁচামেচিতে মুহূর্তে ঘটনাস্থলে ছুটে আসে পুলিশ এবং কোস্টাল থানার কর্মীরা। শুরু হয় তল্লাশি অভিযান, তবে রাত পেরিয়ে গেলেও এখনো পর্যন্ত নিখোঁজ যুবকের কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি।এই মর্মান্তিক ঘটনার খবর পেয়েই আজ সকালে গঙ্গাসাগর কোস্টাল থানায় পৌঁছান সুন্দরবন উন্নয়ন মন্ত্রী বঙ্কিমচন্দ্র হাজরা। সেখানে তিনি নিখোঁজ যুবকের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে দীর্ঘক্ষণ কথা বলেন, তাঁদের মনোবল বাড়ানোর চেষ্টা করেন এবং জানান, “এই দুঃখের সময়ে সরকার আপনাদের পাশে রয়েছে। আমরা সবরকমভাবে সাহায্য করব এবং তল্লাশি যতক্ষণ না ফলপ্রসূ হচ্ছে, অভিযান বন্ধ হবে না।” সঙ্গে ছিলেন গঙ্গাসাগর কোস্টাল থানার ওসি-ও, যিনি জানান, “দ্রুত উদ্ধারকারী দল পাঠানো হয়েছে এবং ডুবুরিদের সাহায্যে নিরবচ্ছিন্ন তল্লাশি চলছে। নিখোঁজ যুবককে খুঁজে পাওয়ার সর্বোচ্চ চেষ্টা চালানো হচ্ছে।স্থানীয় মানুষজন ও পর্যটকদের একাংশ জানাচ্ছেন, প্রতি বছর এই সময়ে প্রশাসনের তরফে অনেক সচেতনতা থাকা সত্ত্বেও কিছু পুণ্যার্থী নিয়ম না মেনে সাগরে স্নানে নামেন। পাড়ার এক বাসিন্দা বলেন, “প্রতি বছর এই ধরনের ঘটনা ঘটে, অথচ কেউ শিক্ষা নেন না। যেখানে বাঁশ, দড়ি দিয়ে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া থাকে, সেখানে ঢুকে যাওয়াই দুঃসাহস।” অন্যদিকে পর্যটকদের অনেকেই বলছেন, সাগরের ঢেউয়ের প্রকোপ বোঝা সাধারণ মানুষের পক্ষে সম্ভব নয়।

পর্যাপ্ত লাইফগার্ড বা নজরদারির ব্যবস্থা থাকলে এমন দুর্ঘটনা এড়ানো যেত।গঙ্গাসাগরের মত ভক্তিমূলক ধর্মীয় স্থানে প্রতি বছর লক্ষ লক্ষ পুণ্যার্থী আসেন। প্রশাসন থেকেও বিপুল প্রস্তুতি নেওয়া হয় এই মেলা উপলক্ষে। কিন্তু তার পরেও বারবার এমন প্রাণহানির ঘটনা চোখে আঙুল দিয়ে দেখায়—মানুষের সচেতনতার অভাবই সবথেকে বড় বিপদ। প্রতিবছর নদী বা সাগরের তীরে এই ধরনের মৃত্যুর খবর শোনা যায়, বিশেষ করে যে পুণ্যার্থীরা বয়স্ক বা সাঁতার না জানা। সেক্ষেত্রে প্রশাসনের ভূমিকাও প্রশ্নের মুখে পড়ে—পর্যাপ্ত নজরদারি, ব্যারিকেডিং বা সতর্কতা কি যথেষ্ট? আবার অনেক সময় দেখা যায়, মানুষ নিজের ইচ্ছায় নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে, যার ফল এমন মর্মান্তিক বিপর্যয়।এই ঘটনার পর প্রশাসন আর কতটা কড়া হতে পারে? অনেকেই বলছেন, এবার থেকে স্নানস্থলে আরো কড়া নজরদারি, পুলিশি টহল এবং নিয়মভঙ্গকারীদের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি। পাশাপাশি, পুণ্যার্থীদের সচেতন করাও অত্যন্ত প্রয়োজন। কিছু ধর্মীয় আচার এমনভাবে গাঁথা আছে যেখানে মানুষ ভাবেন, ‘জলে নামলেই পুণ্য হয়’। এই মানসিকতা বদলানো ছাড়া উপায় নেই। একইসঙ্গে, এই ঘটনায় নিখোঁজ সন্দীপ গৌড়ের উদ্ধারকাজ সফল হলে একটি পরিবার কিছুটা স্বস্তি পাবে, আর না হলে আরও একটি মৃত্যু যোগ হবে গঙ্গাসাগরের ইতিহাসে।