Militant war on passenger bus, many indiscriminate : ভারতের পাহেলগামে জঙ্গি হামলার পর এবার আবারও সন্ত্রাসবাদ কাঁপিয়ে দিল মধ্যপ্রাচ্যকে। ইজরায়েলের পূর্ব জেরুজালেমের রামোট জংশনের ব্যস্ততম এক বাস স্টপে ঘটলো ভয়াবহ জঙ্গি হামলা। সোমবার সকাল প্রায় ১০টা নাগাদ যাত্রিবাহী বাসের অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে থাকা সাধারণ মানুষের উপর আচমকাই দুই বন্দুকধারী এলোপাথাড়ি গুলি চালাতে শুরু করে। মুহূর্তের মধ্যে আতঙ্কে কেঁপে ওঠে গোটা শহর, আর কয়েক মিনিটের মধ্যে রক্তাক্ত লাশে পরিণত হয় নিরীহ সাধারণ মানুষের শরীর। সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, অন্তত ৬ জনের মৃত্যু হয়েছে এবং প্রায় ২০–২১ জন গুরুতরভাবে আহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে কয়েকজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। আহতদের মধ্যে গর্ভবতী মহিলা থেকে শুরু করে স্কুলে যাওয়া তরুণ তরুণী পর্যন্ত ছিলেন। এ হামলার ফলে গোটা ইজরায়েল এক অদ্ভুত শোক এবং আতঙ্কে আচ্ছন্ন।
প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে, “আমরা কিছু বুঝে ওঠার আগেই গুলির শব্দে চারপাশ কেঁপে উঠলো, সবাই প্রাণ বাঁচাতে দৌড়াতে শুরু করলো, কেউ চিৎকার করছে, কেউ রক্তাক্ত হয়ে পড়ে আছে, আবার কেউ ভয়ে শিশুদের বুকে জড়িয়ে ধরে রাস্তা পার হচ্ছিল।” স্থানীয় নাগরিকদের মোবাইল ক্যামেরায় ধরা সেই দৃশ্য এখন গোটা দুনিয়ার সামনে। ভেঙে পড়া বাস স্টপ, কাঁচের টুকরো, রক্তাক্ত মেঝে—সব মিলিয়ে এক নারকীয় পরিস্থিতির জন্ম দেয়। ঘটনাস্থলে থাকা একজন সেনা এবং একজন সশস্ত্র সাধারণ নাগরিক সাহসিকতার সঙ্গে জঙ্গিদের প্রতিরোধ করেন এবং শেষ পর্যন্ত দুই হামলাকারীকে গুলি করে হত্যা করা হয়। তবে ততক্ষণে প্রাণহানি এবং আহতের সংখ্যা ভয়ঙ্কর রূপ নিয়েছিল।
এই হামলায় একজন বিদেশি নাগরিক, একজন স্প্যানিশ পর্যটকও প্রাণ হারিয়েছেন, যা আন্তর্জাতিক স্তরে চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেছে। নিহতদের পরিবারের প্রতি শোক প্রকাশ করেছে বিভিন্ন দেশ, আর আহতদের দ্রুত আরোগ্য কামনায় আন্তর্জাতিকভাবে বার্তা পৌঁছাচ্ছে। হাসপাতালগুলোতে আহতদের নিয়ে যাওয়ার পর চিকিৎসকরা জানান, অন্তত পাঁচজনের অবস্থা এখনও সংকটজনক।
ইজরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনজামিন নেতানিয়াহু ঘটনাস্থলে গিয়ে বলেন, “এই হামলার প্রতিশোধ কঠোরভাবে নেওয়া হবে। যারা এই সন্ত্রাসীদের পাঠিয়েছে, আশ্রয় দিয়েছে, সাহায্য করেছে—তাদের কাউকেই রেহাই দেওয়া হবে না।” তিনি উচ্চ পর্যায়ের নিরাপত্তা বৈঠকও ডাকেন এবং দেশজুড়ে সতর্কতা জারি হয়। ইজরায়েলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, হামলাকারীরা পশ্চিম তীরের অঞ্চল থেকে এসেছিল এবং সেখানেই তাদের ঘাঁটি চিহ্নিত করা হয়েছে। অন্যদিকে, প্যালেস্টিনীয় কর্তৃপক্ষ এ ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করলেও সরাসরি কোনও জঙ্গি সংগঠন এখনও হামলার দায় স্বীকার করেনি। ইউরোপীয় ইউনিয়ন এই হামলার নিন্দা জানিয়ে বলেছে, সাধারণ মানুষের উপর আক্রমণ ঘৃণ্য এবং এটি সংঘাত থামানোর প্রয়োজনীয়তাকে আরও বাড়িয়ে তুলছে।
স্থানীয় মানুষ এখনও আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে। অনেক পরিবার সন্তানদের স্কুলে পাঠাতে ভয় পাচ্ছে, সাধারণ যাত্রীরা বাসে চড়তে দ্বিধায় ভুগছেন। সাধারণ নাগরিকরা বলছেন, “প্রতিদিন আমরা ভয়ে বাঁচছি। সকালে বের হলে আর সন্ধ্যায় বাড়ি ফিরতে পারবো কিনা, তার কোনও নিশ্চয়তা নেই।” আতঙ্ক এবং শোকে ডুবে থাকা শহরে এখন নিরাপত্তার নতুন ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। প্রতিটি বাস স্টপে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে, সন্দেহভাজনদের তল্লাশি বাড়ানো হয়েছে।

ভবিষ্যৎ নিয়ে নানা প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে। প্রথমত, ইজরায়েল আরও কড়া নিরাপত্তা নীতি নেবে, বিশেষ করে পূর্ব জেরুজালেম এবং পশ্চিম তীরে। দ্বিতীয়ত, সামরিক অভিযান আরও জোরদার হতে পারে, যা নতুন সংঘাতের জন্ম দিতে পারে। তৃতীয়ত, আন্তর্জাতিক স্তরে এই হামলার প্রতিক্রিয়া ইতিমধ্যেই দেখা দিয়েছে—স্পেনে ক্ষোভ, ইউরোপীয় ইউনিয়নে প্রতিবাদ, এবং মধ্যপ্রাচ্যের পরিস্থিতি নিয়ে আবারও দুশ্চিন্তা। রাজনৈতিকভাবেও এটি ইজরায়েলের অভ্যন্তরে নতুন চাপ তৈরি করেছে, কারণ নেতানিয়াহু ইতিমধ্যেই বলছেন, “আমরা একাধিক ফ্রন্টে যুদ্ধ করছি।” অর্থাৎ, পরিস্থিতি আরও জটিল ও বিস্ফোরক হয়ে উঠতে পারে।
সবচেয়ে বড় কথা, এই ধরনের হামলা সাধারণ মানুষের জীবনে যে ভয় এবং অনিশ্চয়তার জন্ম দেয়, তার কোনও সমাধান চোখে পড়ছে না। একদিকে নিহতদের পরিবার হারানোর শোক সামলাচ্ছে, অন্যদিকে আহতদের পরিবার উদ্বিগ্ন প্রিয়জনের সুস্থতা নিয়ে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় যদিও একযোগে হামলার নিন্দা করছে, তবে শান্তি প্রতিষ্ঠার কোনও স্পষ্ট রূপরেখা এখনও দেখা যাচ্ছে না।
এই ঘটনার প্রেক্ষাপটে বলা যায়—যাত্রিবাহী বাসে সন্ত্রাসী হামলার মতো ঘটনা শুধুমাত্র একটি দেশের নয়, সমগ্র বিশ্বের কাছে সতর্কবার্তা। যখন সাধারণ মানুষই টার্গেট হয়, তখন মানবতার সবচেয়ে বড় ক্ষতি হয়। আজকের এই শোকঘন পরিস্থিতিতে নিহতদের পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানাই, আহতদের দ্রুত আরোগ্য কামনা করি, এবং আশা করি ভবিষ্যতে এমন নারকীয় ঘটনা আর না ঘটে।