Meenakshi Mukherjee takes a dig at Trinamool BJP at a public rally: শনিবার পশ্চিম বর্ধমানের রানীগঞ্জে এক ভরপুর দুপুর, সিয়ারসোল রাজবাড়ী মোড়ে মানুষের ঢল। লাল ঝান্ডার নিচে এক গর্জে ওঠা কণ্ঠ—ডিওয়াইএফআই রাজ্য সম্পাদিকা মীনাক্ষী মুখার্জীর। ‘বিভাজন রুখে দাও, রুটি-রুজি বুঝে নাও’ এই স্লোগানকে সামনে রেখে ডিওয়াইএফআই-এর ২৪তম জেলা সম্মেলনের প্রাক্কালে আয়োজিত এই প্রকাশ্য সভায় কার্যত বিস্ফোরণ ঘটালেন মীনাক্ষী। তার কণ্ঠে ছিল তীব্র ক্ষোভ, তীক্ষ্ণ রাজনৈতিক সমালোচনা এবং আগামী দিনের সংগ্রামের স্পষ্ট বার্তা। একদিকে যখন রাজ্যের শিল্পহীনতা, বেকার সমস্যা এবং বন্ধ হয়ে যাওয়া কল-কারখানার হাহাকার নিয়ে উদ্বিগ্ন সাধারণ মানুষ, ঠিক তখনই এই সভা যেন হয়ে উঠল এক প্রতিবাদ মঞ্চ—যেখানে কেবল অভিযোগ নয়, প্রতিরোধের ডাকও উঠে এল প্রবলভাবে। মীনাক্ষী বলেন, “এই রাজ্যে বিজেপি আর তৃণমূলের মধ্যে গোপন সেটিং রয়েছে। দু’পক্ষই একে অপরকে সুবিধা দিচ্ছে আর সাধারণ মানুষকে ঠকাচ্ছে। একমাত্র বামপন্থীরাই এই আঁতাতের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াচ্ছে।” তার এই বক্তব্যে চওড়া হাততালি পড়ে জনতার মধ্যে। তিনি আরও বলেন, “আজকে যে যুবসমাজ পঙ্গু হয়ে পড়ছে, তার কারণ একটার পর একটা কল-কারখানা বন্ধ হয়ে যাওয়া। লক্ষ লক্ষ শ্রমিক কাজ হারাচ্ছেন, কিন্তু সরকার নীরব। কেউই এই সমস্যা নিয়ে ভাবছে না।” এই প্রসঙ্গে তিনি তুলে ধরেন আসানসোল, দুর্গাপুর, জামুরিয়া ও রানিগঞ্জের সেই পুরনো কলকারখানাগুলির কথা—যেখানে কোনওদিন হাজার হাজার শ্রমিক কাজ করতেন, কিন্তু আজ সেই সব জায়গা পরিণত হয়েছে নীরব ধ্বংসস্তূপে।
সভায় উপস্থিত ছিলেন DYFI’র একাধিক জেলা নেতৃত্ব, স্থানীয় শ্রমিক সংগঠনের প্রতিনিধি এবং সাধারণ মানুষেরাও। বক্তৃতায় মীনাক্ষী স্পষ্ট ভাষায় বলেন, “আমরা জানি লড়াই করতে গেলে শহীদ হতে হয়, কেস খেতে হয়, জেলে যেতে হয়। কিন্তু তা সত্ত্বেও আমরা পিছু হটবো না। রুটি-রুজির লড়াই থেকে কোনও বামপন্থী পিছিয়ে আসেনি, আসবেও না।” এই বক্তব্যের সময় তার কণ্ঠে ছিল দৃঢ়তা, চোখে ছিল স্পষ্ট আগুন। সমাবেশে উপস্থিত এক বয়স্ক কর্মী বলেন, “অনেকদিন পর মনে হচ্ছে কেউ আমাদের হয়ে কথা বলছে। আজকে ছেলে-মেয়েরা কাজ পাচ্ছে না, ভবিষ্যৎ নেই, অথচ সরকার একে অপরের দোষ খোঁজার খেলায় মত্ত।”এদিন মীনাক্ষী মুখার্জীর বক্তব্যে একাধিক বার উঠে এসেছে দুই প্রধান রাজনৈতিক দলের বিরুদ্ধে ক্ষোভ। তৃণমূল সরকারকে কটাক্ষ করে তিনি বলেন, “যেখানে একদিকে তৃণমূল দাবি করে তারা উন্নয়নের সরকার, সেখানে কেন শিল্প আসছে না? কেন কলকারখানা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে? কেন যুবক-যুবতীরা কাজ না পেয়ে ভিনরাজ্যে যেতে বাধ্য হচ্ছে?” বিজেপির বিরুদ্ধে কড়া ভাষায় বলেন, “বিজেপি শুধু ধর্মের নামে মানুষকে বিভক্ত করে। রাম নাম করে রুটি-রুজির কথা ভুলিয়ে দিচ্ছে। কিন্তু পেট ভরলে তবেই তো ধর্মের কথা ভাবা যায়।” তাঁর এই সোজাসাপ্টা ভাষায় মানুষ যেন ফিরে পেল সেই পুরনো বাম কণ্ঠ—যা জনতার দুঃখ, হতাশা আর ক্ষোভকে ভাষা দেয়।
এই সভা নিয়ে রাজনৈতিক মহলেও চাঞ্চল্য তৈরি হয়েছে। তৃণমূলের এক নেতা বলেন, “বামেদের আর কোনও জমি নেই। এরা এখন শুধুই বক্তব্যে বাঁচে।” অন্যদিকে বিজেপি নেতা পাল্টা বলেন, “DYFI বা বামদের এই ধরণের সভা আসলে ভোটের আগে নিজের অস্তিত্ব প্রমাণের একটা ব্যর্থ চেষ্টা।” তবে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ যা-ই বলুক, স্থানীয় যুবক সুমন মন্ডল জানান, “কাজ পাই না। কোথাও আবেদন করলে বলে অভিজ্ঞতা চাই। কিন্তু কেউই তো সেই সুযোগটাই দিচ্ছে না। আজকে মীনাক্ষীদি যা বললেন, সেটাই আমাদের আসল সমস্যা। চাকরি চাই, ধর্ম বা খেলা নয়।”বিশেষজ্ঞদের মতে, বামেদের দীর্ঘ রাজনৈতিক সুপ্ততা কাটিয়ে ময়দানে ফেরার এই চেষ্টায় মীনাক্ষীর মতো নেতৃত্ব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিতে পারে। তার বক্তৃতায় যে রাজনৈতিক স্পষ্টতা ও বাস্তব সমস্যার প্রতি নজর ছিল, তা বামপন্থী রাজনীতিকে নতুন করে চাঙ্গা করতে পারে। তাছাড়া DYFI এর মতো যুব সংগঠন যদি রুটি-রুজি, কর্মসংস্থান ও শিল্প নিয়ে ময়দানে নামতে পারে, তবে রাজ্যের যুবসমাজ একবার হলেও তাদের দিকে নজর ফেরাতে বাধ্য। ভবিষ্যতের রাজনীতিতে এই ধরনের সমাবেশগুলি কার্যত ‘চেতনামঞ্চ’-এর ভূমিকা নিতে পারে।এই ঘটনার প্রেক্ষিতে বলা যায়, রাজ্যের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে মানুষের মধ্যে একটি ‘বিকল্পের খোঁজ’ রয়েছে—যেখানে সমস্যার কথা কেউ বলবে, যেখানে ভোটের আগে নয়, ভোটের পরেও লড়াই চলবে, যেখানে প্রতিশ্রুতি নয়, বাস্তব সমস্যা ও সমাধানের চেষ্টা হবে মূলমন্ত্র। মীনাক্ষী মুখার্জীর বক্তব্য, তার স্বর এবং দৃঢ়তা সেই বার্তাই বয়ে আনছে।