...
Thursday, April 3, 2025
Google search engine
Homeটপ 10 নিউস'বিনে পয়সার মাস্টার' হংসশুভ্র পাল

‘বিনে পয়সার মাস্টার’ হংসশুভ্র পাল

‘Master of the Money’ Hansashubhra Pal:- সকাল হলেই বাইক নিয়ে বেরিয়ে পড়েন হংসশুভ্র পাল। কোলাঘাটের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে ছোটেন। কখনও বৈষ্ণবচক, কখনও কলাগেছিয়া, আবার কখনও বাড়বড়িশা। লক্ষ্য একটাই— দুঃস্থ ছাত্রছাত্রীদের বিনে পয়সায় ইংরেজি শেখানো। এক দশকেরও বেশি সময় ধরে এই মহান কাজটি করে চলেছেন হংসশুভ্র পাল, যিনি আজ কোলাঘাটবাসীর কাছে পরিচিত ‘বিনে পয়সার মাস্টার’ নামে। তাঁর এই পথচলা কেবল একটি মানুষের ব্যক্তিগত প্রচেষ্টা নয়, বরং এটি দুঃস্থ ছাত্রছাত্রীদের জীবনে নতুন আলো দেখানোর এক অসাধারণ প্রয়াস।হংসশুভ্র পাল কোনও প্রতিষ্ঠিত স্কুলের শিক্ষক নন, কিংবা কোনও সংস্থার চাকুরিজীবীও নন। অথচ এলাকার কয়েকশো ছাত্রছাত্রীর কাছে তিনি শিক্ষার একমাত্র ভরসা। প্রায় দশ বছর আগে যখন তাঁর কাছে পড়তে আসা অনেক ছাত্রছাত্রী ফি দিতে পারছিল না, তখনই তিনি সিদ্ধান্ত নেন ফ্রি কোচিং সেন্টার খোলার। প্রথমে একটি কেন্দ্র দিয়ে শুরু হলেও ধীরে ধীরে এর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ১৩টি। আজ কোলাঘাটের বিভিন্ন এলাকায় হংসশুভ্র পালের পরিচালনায় মোট ১৩টি বিনে পয়সার কোচিং সেন্টার চলছে। প্রতিটি সেন্টারে সপ্তাহে দু’দিন করে ইংরেজি পড়ান তিনি।

Snapshot 1012 2

কিন্তু শুধু পড়ানোতেই থেমে থাকেন না হংসশুভ্র। তাঁর দায়িত্বের মধ্যে পড়ে বই, খাতা, পেন কেনার খরচও। অনেক দুঃস্থ ছাত্রছাত্রীকে নিজের টাকায় এই সামগ্রী কিনে দেন তিনি। তাঁর উদ্যোগে এখন বিনে পয়সার কোচিং সেন্টারে পড়ছে প্রায় ২৮১ জন ছাত্রছাত্রী। তাঁদের মধ্যে অনেকেই পড়াশোনা শিখে আজ জীবনে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।হংসশুভ্র পালের কাজের পরিধি শুধু কোচিং সেন্টারের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। সমাজের জন্যও একাধিক উদ্যোগ নিয়েছেন তিনি। কোলাঘাটের বিভিন্ন এলাকায় বিনে পয়সায় অক্সিজেন সিলিন্ডার বিতরণ, শবদেহ বহনের জন্য স্ট্রেচার সরবরাহ, রক্তদান শিবিরের আয়োজন, এমনকি মনীষীদের মূর্তি বসানোর মতো নানা উদ্যোগ নিয়েছেন তিনি। তাঁর এই উদ্যোগগুলির পেছনে রয়েছে মানুষের প্রতি অসীম দায়বদ্ধতা এবং সমাজের জন্য কিছু করার অদম্য ইচ্ছে।

হংসশুভ্র পালের পরিবারও তাঁর এই উদ্যোগে পাশে দাঁড়িয়েছে। তাঁর ভাই একজন ইঞ্জিনিয়ার, যিনি দাদার এই বিনে পয়সার শিক্ষাদান এবং সমাজসেবার কাজে সর্বতোভাবে সহযোগিতা করেন। হংসশুভ্রের একমাত্র মেয়ে একটি বেসরকারি সংস্থায় কাজ করেন এবং তিনিও বাবার এই কাজের প্রতি যথেষ্ট গর্ব অনুভব করেন।হংসশুভ্র পালের এই মহান উদ্যোগের পেছনে রয়েছে তাঁর নিজের ছাত্রজীবনের অভিজ্ঞতা। ছোটবেলায় তিনি ছিলেন অত্যন্ত গরিব। অনেক বাধা-বিপত্তি সত্ত্বেও তিনি পড়াশোনা চালিয়ে গেছেন। সেই সময়ের অভাবের যন্ত্রণা থেকেই তিনি ঠিক করেন, ভবিষ্যতে যেকোনোভাবে দুঃস্থ ছাত্রছাত্রীদের পাশে দাঁড়াবেন। তাঁর নিজের ভাষায়, “ছাত্রজীবনে খুব গরিব ছিলাম। তাই আমি চেষ্টা করি ছাত্রছাত্রীদের পাশে দাঁড়াতে। অনেক দুঃস্থ ছাত্রছাত্রী এখান থেকে পড়ে জীবনে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।”

Snapshot 1011 2

আজ কোলাঘাটের মানুষদের কাছে হংসশুভ্র পাল শুধুই একজন ইংরেজি শিক্ষক নন, তিনি এক পথপ্রদর্শক। এলাকার বাসিন্দারা জানিয়েছেন, তাঁর মতো মানুষ খুব কমই দেখা যায়। বিনে পয়সার মাস্টার হিসেবে পরিচিতি পাওয়া এই মানুষটি আজও বিন্দুমাত্র অহংকার ছাড়াই নিজের কাজ করে চলেছেন। তাঁর ছাত্রছাত্রীরা তাঁকে যেমন শ্রদ্ধা করে, তেমনি এলাকার মানুষও তাঁকে হৃদয় দিয়ে ভালোবাসে।হংসশুভ্র পালের এই উদ্যোগ ধীরে ধীরে সোশ্যাল মিডিয়াতেও প্রশংসা কুড়োতে শুরু করেছে। তাঁর কাজের কথা জানার পর অনেকেই টুইট, ফেসবুক পোস্টের মাধ্যমে প্রশংসা করছেন। কেউ লিখেছেন, “এই ধরনের মানুষরাই সমাজের আসল হিরো।” আবার কেউ লিখেছেন, “হংসশুভ্র পাল দেখিয়ে দিলেন, শুধু অর্থের নয়, ইচ্ছে আর উদ্যোগ থাকলেই সমাজে পরিবর্তন আনা সম্ভব।”হংসশুভ্র পালের এই কাজ শুধু ছাত্রছাত্রীদের শিক্ষাজগতে নয়, সমাজের প্রতিটি স্তরে ইতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। তাঁর উদ্যোগ অনেক তরুণকে অনুপ্রাণিত করেছে। আগামী দিনে আরও মানুষ যদি এই ধরনের উদ্যোগে সামিল হন, তাহলে শিক্ষার আলো আরও বেশি সংখ্যক মানুষের কাছে পৌঁছে যাবে।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments

Seraphinite AcceleratorOptimized by Seraphinite Accelerator
Turns on site high speed to be attractive for people and search engines.