Monday, June 30, 2025
Google search engine
Homeপশ্চিমবঙ্গআসানসোলসাতসকালে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড, পুড়ে ছাই একাধিক দোকানপাট

সাতসকালে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড, পুড়ে ছাই একাধিক দোকানপাট

Massive fire breaks out at 7am, burns down multiple shops : সাতসকালে যেন মৃত্যু নেমে এসেছিল আসানসোল শহরের প্রাণকেন্দ্র রাহালেন মোড়ে। বাজারের ভিড়ে তখনও তেমন ভাটা পড়েনি, দোকানপাট খুলে বেচাকেনা শুরু করেননি সব ব্যবসায়ীই। হঠাৎই ঘন কালো ধোঁয়া এবং আগুনের লেলিহান শিখা দেখা যায় একটি ট্রান্সফরমার থেকে, আর মুহূর্তের মধ্যেই সেই আগুন ছড়িয়ে পড়ে আশপাশের বেশ কয়েকটি ঝুপড়ি দোকানে। আগুনের আঁচ আর আওয়াজে চারদিক ছুটোছুটি শুরু হয়ে যায়, আতঙ্কে ব্যবসায়ীরা দোকান ফেলে পালাতে শুরু করেন। মুহূর্তের মধ্যেই ছড়িয়ে পড়ে আগুন, কিছু বোঝার আগেই তিন-চারটি দোকান সম্পূর্ণভাবে ভস্মীভূত হয়ে যায়। চোখের সামনে জীবনের সঞ্চয় পুড়ে ছাই হয়ে যাচ্ছে—এই দৃশ্য দেখে কেঁদে ফেলেন অনেক দোকানদার। ঘটনাস্থলে পৌঁছায় দমকলের একটি ইঞ্জিন, প্রায় আধঘণ্টার চেষ্টায় আগুন কিছুটা নিয়ন্ত্রণে আনা যায়। তবে, তখনও পর্যন্ত আগুন একাধিক দোকানকে গ্রাস করে ফেলেছে।

স্থানীয় দোকানদার ভোলানাথ সিং জানান, “ট্রান্সফরমারের পাশে আমাদের দোকান ছিল, হঠাৎ আগুন লেগে গেল, কিছুই বাঁচাতে পারিনি। শুধু চোখের সামনে ধোঁয়া আর আগুন।” অন্য এক ব্যবসায়ী চন্দন ঘোষ বলেন, “এই দোকানটাই আমার রুজিরুটি, সব শেষ হয়ে গেল।” আগুন লাগার মূল কারণ কী? দমকল বিভাগের প্রাথমিক অনুমান, সম্ভবত শর্ট সার্কিট থেকেই এই অগ্নিকাণ্ড। তবে অন্য কোনো নাশকতা বা গাফিলতি রয়েছে কি না, তা খতিয়ে দেখছে পুলিশ ও দমকল। কারণ এই ট্রান্সফরমারটি বহুদিন ধরে সমস্যা করছিল, স্থানীয় বাসিন্দারা একাধিকবার বিদ্যুৎ দপ্তরে অভিযোগ জানালেও তেমন কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। এবার সেই অবহেলার খেসারত দিতে হল সাধারণ ব্যবসায়ীদের। আরও এক প্রশ্ন উঠে এসেছে—আগুন নেভাতে কেন মাত্র একটি দমকল ইঞ্জিন এল? আসানসোলের মতো বড় শহরের বাজার এলাকায় আরও দ্রুত সাড়া দেওয়া উচিত ছিল বলেই মত সাধারণ মানুষের। এই ঘটনাকে ঘিরে প্রশ্ন উঠেছে দমকল দপ্তরের প্রস্তুতি নিয়েও। এদিকে, অগ্নিকাণ্ডের পরেই যখন দোকানগুলি ছাই হয়ে গিয়েছে, ঠিক সেই সময় আশপাশের ফাঁকা বাড়ি ও দোকানে শুরু হয় লুটপাট।

9k=

কিছু দুষ্কৃতী এই সুযোগে দোকানের অর্ধপোড়া মালপত্র লুঠ করে পালায় বলে অভিযোগ। স্থানীয় মানুষজন বেশ কয়েকজনকে চোর সন্দেহে ধরে পুলিশে দেয়। একজন প্রত্যক্ষদর্শী জানান, “আগুন নিয়ন্ত্রণে আসার পরেই আমরা দেখি, কয়েকজন ছেলেমেয়ে ছুটে এসে দোকান থেকে কিছু তুলে নিয়ে যাচ্ছে। আমরা দৌড়ে গিয়ে একজনকে ধরে ফেলি।” এই ঘটনায় নতুন করে আতঙ্ক ছড়িয়েছে বাজারজুড়ে। আগুনে পুড়ে যাওয়া দোকানদারদের অনেকেই এখন চরম অর্থনৈতিক সমস্যায় পড়েছেন। অনেকের কোনও বীমা ছিল না, সরকারি সাহায্য পাওয়া নিয়েও সন্দিহান তাঁরা। স্থানীয় কাউন্সিলর শ্যামল সরকার বলেন, “ঘটনাটি অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক। আমরা দমকল ও পুলিশ প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছি। ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের পাশে দাঁড়ানোর জন্য রাজ্য সরকারের কাছেও আবেদন জানানো হবে।” ইতিমধ্যেই জেলা প্রশাসন থেকে ক্ষয়ক্ষতির রিপোর্ট চাওয়া হয়েছে এবং এলাকা ঘুরে দেখে একটি প্রাথমিক তালিকা তৈরি করা হয়েছে। ছোট ব্যবসায়ীদের দাবি, দ্রুত ক্ষতিপূরণ এবং পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করতে হবে। না হলে জীবিকা নিয়ে বড় সংকটে পড়বেন তাঁরা।

এই ঘটনায় আবারও সামনে এল পুরনো অব্যবস্থা, অবহেলা এবং অপ্রস্তুতির ছবি। প্রশ্ন উঠছে—এত গুরুত্বপূর্ণ বাজার এলাকায় আগুন নেভানোর জন্য পর্যাপ্ত পরিকাঠামো নেই কেন? বিদ্যুৎ বিভাগের গাফিলতির জবাবদিহি কে দেবে? আর লুটপাটের সুযোগ পেল কীভাবে চোরেরা? সব মিলিয়ে, সাতসকালের এই অগ্নিকাণ্ড কেবল কয়েকটি দোকান নয়, গোটা এলাকার নিরাপত্তা ব্যবস্থা, প্রশাসনিক সাড়া এবং সাধারণ মানুষের ভবিষ্যৎ নিয়ে বড় প্রশ্ন তুলে দিল। এখনও পর্যন্ত কোনও প্রাণহানির খবর নেই, তবে জীবনের সঞ্চয় হারানো ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের চোখে অশ্রু আর ক্ষোভের আগুন জ্বলছেই। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে। এলাকার সিসিটিভি ফুটেজ খতিয়ে দেখা হচ্ছে এবং লুটপাটে অভিযুক্তদের শনাক্ত করার কাজ চলছে। তবে স্থানীয়দের দাবি, শুধুই তদন্ত নয়, ভবিষ্যতে যাতে এমন ঘটনা না ঘটে তার জন্য প্রশাসনিক উদ্যোগ এখনই নিতে হবে। নাহলে এমন অগ্নিকাণ্ড আবারও জীবন তছনছ করে দিতে পারে। এই ঘটনার সূত্র ধরে আরও একবার প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠছে শহরের পুরনো বৈদ্যুতিক অবকাঠামো ও আগুন নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার ঢিলেঢালা প্রস্তুতির বিষয়টি। আশা করা যায়, এবারের মতো শুধু তদন্ত রিপোর্টেই বিষয়টা আটকে থাকবে না, বাস্তবিক পরিবর্তনের পথে হাঁটবে প্রশাসন।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments