Mango in winter! Totapuri Mangoes are being sold at Kanchenjunga Stadium: শীতকাল মানেই আমরা কমলালেবু, আপেল, আঙুরের মতো ফল খেয়ে থাকি। কিন্তু শীতকালে আম? শুনতে অদ্ভুত লাগলেও, দার্জিলিংয়ের সিলিগুড়ি শহরের কাঞ্চনজংগা স্টেডিয়ামের কাছে এখন বিক্রি হচ্ছে তোতাপুরি আম। ঘটনাটি যেমন চমকপ্রদ, তেমনই আকর্ষণীয়। ঠেলাগাড়ি চালিয়ে এই আম বিক্রি করছেন এক ব্যক্তি, যাঁর নাম রাজীব রায়। তিনি জানালেন, এই আম এসেছে কর্ণাটকের ব্যাঙ্গালোর থেকে। বড়সড় আকৃতির হলুদ-সবুজ রঙের এই আমের নাম তোতাপুরি। যেমন দেখতে সুন্দর, তেমনই খেতে অসাধারণ।
রাজীবের দাবি, তোতাপুরি আমের বিশেষত্ব হল এর স্বাদ। এটি খেতে একটু টক-মিষ্টি, আর এতে সজ্জিত থাকে একটি আলাদা স্বাদ, যা কমলালেবুর সঙ্গে মিল রয়েছে। প্রতিটি আমের ওজন প্রায় ৭০০ থেকে ৮০০ গ্রাম। তবে দামটা বেশ চড়া, কেজি প্রতি ২২০ টাকা। তা সত্ত্বেও ক্রেতারা এই শীতের আমের প্রতি প্রবল আকর্ষণ দেখাচ্ছেন। প্রতিদিনই ভাল বিক্রি হচ্ছে বলে জানিয়েছেন রাজীব।
ক্রেতাদের অনেকেই জানাচ্ছেন, শীতকালে আম খাওয়ার অভিজ্ঞতা নতুন। এক ক্রেতা শম্পা ঘোষ বলেন, “আমি কখনো ভাবিনি শীতকালে আম কিনতে পারব। এই আম একদম আলাদা, খেতেও খুব ভালো। আমার ছেলে খুব খুশি।”
অন্যদিকে, কিছু ক্রেতা অবশ্য দামের বিষয়টি নিয়ে একটু চিন্তিত। “২২০ টাকা কেজি, তাও শীতকালে! এটা একটু বেশি, তবে এই ব্যতিক্রমী অভিজ্ঞতার জন্য মেনে নিচ্ছি,” বললেন প্রদীপ দে, স্থানীয় বাসিন্দা।
রাজীব জানালেন, তিনি এই আম সরাসরি ব্যাঙ্গালোরের একটি ফার্ম থেকে আনছেন। কর্ণাটকে এই জাতের আম শীতকালেও ফলানো সম্ভব, কারণ সেখানে জলবায়ু কিছুটা উষ্ণ। তিনি বলেন, “আমি ভেবেছিলাম শীতকালে এই নতুনত্ব মানুষকে আকর্ষিত করবে। প্রথমে ভয় ছিল, কিন্তু এখন বেশ ভাল সাড়া পাচ্ছি।”
শীতকালে আমের চাহিদা দেখে স্থানীয় ফল ব্যবসায়ীরাও আগ্রহী। অনেকেই ভাবছেন, অন্য প্রদেশের উষ্ণ আবহাওয়ার ফলে উৎপন্ন শীতকালীন ফল স্থানীয় বাজারে এনে বিক্রি করলে ব্যবসায় বড়ো সুযোগ হতে পারে।
এই নতুন ধরনের ফল বাজারে আসায় স্থানীয় মানুষদের মধ্যে কৌতূহল এবং উৎসাহ দেখা দিয়েছে। শীতকালীন আম খাওয়ার অভিজ্ঞতা এখন এলাকার আলোচনার অন্যতম বিষয়। এমনকি সোশ্যাল মিডিয়াতেও এই খবর ভাইরাল হয়েছে। অনেকে ছবি তুলে পোস্ট করছেন, লিখছেন, “শীতকালে আম খাওয়ার আনন্দই আলাদা!”
তবে এই প্রবণতা ভবিষ্যতে কীভাবে প্রভাব ফেলবে, তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। কেউ কেউ বলছেন, এটি স্থানীয় ফলের বাজারে প্রভাব ফেলতে পারে। আবার অন্যরা মনে করছেন, এটি একটি নতুন ধরনের ব্যবসার সূচনা করতে পারে, যেখানে বিভিন্ন ঋতুর ফল একসঙ্গে পাওয়া যাবে।
স্থানীয় পরিবেশবিদ দেবাশিস সেন এই ঘটনার বিষয়ে বলেন, “এটি একটি দারুণ উদাহরণ যে কীভাবে প্রযুক্তি এবং উন্নত চাষ পদ্ধতি আমাদের খাদ্যাভ্যাসে বৈচিত্র্য আনতে পারে। তবে স্থানীয় উৎপাদকদের সুরক্ষার কথাও ভাবতে হবে।”
অন্যদিকে, খাদ্যপ্রেমী এবং স্থানীয় যুব সম্প্রদায়ের মধ্যে এই আম ইতিমধ্যে জনপ্রিয়। এক তরুণ অনিকেত চক্রবর্তী জানালেন, “বন্ধুদের সঙ্গে শীতকালে কাঞ্চনজংগা স্টেডিয়ামে ঘুরতে এসে এই আম কেনা এখন রীতিমতো অভ্যাস হয়ে দাঁড়িয়েছে।”
শীতকালে তোতাপুরি আম বিক্রির এই ব্যতিক্রমী ঘটনা শুধু একটি ফল বিক্রির গল্প নয়, বরং এটি আমাদের খাদ্য সংস্কৃতির পরিবর্তনের প্রতিফলন। ক্রেতারা যেমন নতুন অভিজ্ঞতা উপভোগ করছেন, তেমনই ব্যবসায়ীরা নতুন বাজারের সন্ধান পাচ্ছেন। তবে এর ভবিষ্যৎ দিক নিয়ে চিন্তাভাবনা এবং সঠিক পরিকল্পনার প্রয়োজন রয়েছে।