Tuesday, April 8, 2025
Google search engine
Homeঅন্যান্যচিতাবাঘকে জল খাওয়াচ্ছেন মধ্যপ্রদেশের যুবক, সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল ছবি

চিতাবাঘকে জল খাওয়াচ্ছেন মধ্যপ্রদেশের যুবক, সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল ছবি

Man feeding cheetahs in Madhya Pradesh: একটা সময় ছিল, যখন মানুষ চিতাবাঘের নাম শুনলেই ভয় পেত, বুক কাঁপত, পা জমে যেত। আর এখন? মধ্যপ্রদেশের বিজয়পুরের উমারি গ্রামের চিত্রটা যেন সেই পুরনো ভয়টাকে মুছে দিয়ে এক নতুন সম্পর্কের গল্প লিখছে। হ্যাঁ, আমরা কথা বলছি সেই ভাইরাল হওয়া ভিডিয়োর, যেখানে দেখা যাচ্ছে এক যুবক এক হাতে প্লেট, অন্য হাতে জলের পাত্র নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছেন চিতাবাঘের একটি পরিবারের দিকে। গাছের ছায়ায় নিশ্চিন্তে বসে থাকা চিতারা, কোনো রকম ভয় না পেয়ে ধীরে ধীরে এগিয়ে এসে সেই প্লেট থেকে জল খাচ্ছে। এই দৃশ্য দেখে সোশ্যাল মিডিয়ায় ঝড় উঠেছে। কেউ বলছেন এটা মানুষের পশুপ্রেমের এক অসাধারণ দৃষ্টান্ত, কেউ আবার বলছেন এটা চরম বোকামি, যেখানে জীবন বিপন্ন করার আশঙ্কা রয়েছে। এই যুবকের নাম সত্যনারায়ণ গুর্জর। তিনি মধ্যপ্রদেশের শেওপুর জেলার উমারি গ্রামের বাসিন্দা।

06cheetahs

সূত্রের খবর অনুযায়ী, কুনো ন্যাশনাল পার্কে ২০২২ সালে দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে কিছু চিতাবাঘ আনা হয়েছিল। উদ্দেশ্য ছিল ভারতে বিলুপ্তপ্রায় চিতা প্রজাতিকে ফিরিয়ে আনা এবং প্রাকৃতিক ভারসাম্য বজায় রাখা। বর্তমানে সেগুলোর সংখ্যা বাড়ছে এবং এদের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে মা চিতা ‘জোয়ালা’। ভিডিয়োতে যাকে দেখা গিয়েছে, তার সঙ্গেই ছিল চারটি ছোট চিতাশাবক। বন দপ্তরের অনুমান, কোনো একটি পশুকে হত্যা করে খাওয়ার পর গাছতলায় বিশ্রাম নিচ্ছিল এই চিতা পরিবার। ঠিক সেই সময়ই জলের পাত্র নিয়ে এগিয়ে যান সত্যনারায়ণ। তবে এই ভিডিয়োর সত্যতা এখনো পুরোপুরি যাচাই করা হয়নি, বন দপ্তর এখনও তদন্ত চালাচ্ছে। বন বিভাগের এক আধিকারিক জানান, “ভিডিয়ো দেখে আমরা বুঝতে পারছি ঘটনাটি শেওপুর জেলার, তবে ওই ব্যক্তি সত্যি ‘চিতা মিত্র’ কিনা তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি।” ‘চিতা মিত্র’ হলেন সেই সব স্থানীয় মানুষ, যাঁরা বন দপ্তরের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে চিতাদের গতিবিধি নজরে রাখেন এবং তাদের সংরক্ষণের কাজে সাহায্য করেন। তবে বন দপ্তর আরও জানিয়েছেন, যদি সত্যনারায়ণ অনুমতি ছাড়া বন্যপ্রাণীর এতটা কাছে গিয়ে এমন কাজ করে থাকেন, তবে সেটা খুবই বিপজ্জনক এবং আইন বিরুদ্ধ। এখানেই প্রশ্ন উঠছে—মানুষ ও বন্যপ্রাণীর এই সম্পর্ক কি আদৌ নিরাপদ?

একদিকে দেখা যাচ্ছে, মানুষ ও চিতার মধ্যে এক সহাবস্থানের সম্ভাবনা তৈরি হচ্ছে। যেখানে এক চিতাবাঘ জল খাচ্ছে মানুষের হাতের দেওয়া পাত্র থেকে, আর মানুষও ভয়ডর না পেয়ে সেই কাজ করছে। অন্যদিকে, এই বিষয়টি যদি সাধারণ মানুষের মধ্যে ভুল বার্তা ছড়িয়ে দেয়, তাহলে ভবিষ্যতে কেউ সাহস করে এমন কাজ করলে, তা মারাত্মক বিপদ ডেকে আনতে পারে। চিতা বাঘ কিন্তু পোষা প্রাণী নয়, তার বুনো স্বভাবের হঠাৎ পরিবর্তন হওয়া অসম্ভব। তাই এই ভিডিয়ো যতটা না প্রশংসনীয়, ততটাই চিন্তার কারণ। আরেকটা দিক এখানে গুরুত্বপূর্ণ—এই ঘটনাটি এমন এক সময়ে সামনে এল, যখন গত মাসেই কুনো ন্যাশনাল পার্কে এক চিতা পরিবারকে লক্ষ্য করে কেউ পাথর ছুঁড়েছিল। তখন অনেকেই প্রশ্ন তুলেছিলেন, স্থানীয় মানুষের সচেতনতার অভাব নিয়ে। তার ঠিক কিছুদিন পরেই এমন একটি সহনশীল ভিডিও ভাইরাল হওয়া, যেন সেই নেতিবাচক ঘটনার পাল্টা জবাব হয়ে এল। সত্যনারায়ণ গুর্জরের কাজকে তাই কেউ দেখছেন ভালোবাসা আর সাহসের দৃষ্টান্ত হিসেবে, কেউ আবার এটাকে মানছেন গাফিলতির নমুনা। সত্যনারায়ণ নিজে এই বিষয়ে এখনও কোনো মিডিয়াতে মুখ খোলেননি, তবে স্থানীয়দের কথায় বোঝা যাচ্ছে, তিনি বন্যপ্রাণীদের খুবই ভালোবাসেন, এবং আগেও একাধিকবার চিতাদের আশেপাশে দেখা গিয়েছে তাঁকে। বন দপ্তরের কর্মকর্তারা এখনও তদন্ত করছেন, আর জানিয়েছেন, যদি এই কাজ কোনওভাবে আইন লঙ্ঘন করে, তাহলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

Untitled design 2025 04 05T214156.149

এই ঘটনার মাধ্যমে আবার সামনে এল একটি পুরনো প্রশ্ন—মানুষ ও বন্যপ্রাণীর সহাবস্থান কি আদৌ সম্ভব? প্রকৃতি আমাদের শেখায়, যদি আমরা তাদের সঙ্গে সম্মান ও দূরত্ব রেখে থাকি, তাহলে তারাও আমাদের ক্ষতি করে না। তবে এই দূরত্ব না রাখলে যেকোনও মুহূর্তে ঘটে যেতে পারে বিপদ। এছাড়া এই ঘটনার মাধ্যমে কুনো ন্যাশনাল পার্ক ও তার চিতা পুনর্বাসন প্রকল্প আবারও আলোচনার কেন্দ্রে উঠে এল। কুনো পার্কে বর্তমানে বেশ কয়েকটি আফ্রিকান চিতা রয়েছে, এবং তাদের মধ্যে অনেকেই নতুন পরিবেশে মানিয়ে নিয়েছে। মধ্যপ্রদেশ সরকার ও বন দপ্তর এই প্রকল্পকে সফল করতে নিরলস কাজ করে চলেছে। কুনো ছাড়াও মধ্যপ্রদেশের অন্যান্য অভয়ারণ্য যেমন পেঞ্চ, কানহা, বান্ধবগড়, সাতপুরা—এগুলি বাঘ সংরক্ষণে বিখ্যাত, এবং সেখানেও বন্যপ্রাণীদের সঙ্গে মানুষের সহাবস্থান নিয়ে নানা গবেষণা চলছে। সবমিলিয়ে, সত্যনারায়ণ গুর্জরের এই কাজ নিয়ে দেশজুড়ে আলোচনা শুরু হয়েছে। এটা শুধু একটা ভাইরাল ভিডিয়ো নয়, বরং এর মাধ্যমে সমাজে একটা বার্তা পৌঁছে যাচ্ছে—ভালোবাসা ও সচেতনতায় হয়তো সহাবস্থানের একটি দরজা খুলে যেতে পারে। তবে সেই দরজা যেন দায়িত্বহীনভাবে না খোলা হয়, তা মনে রাখাও জরুরি।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments