Man dies in mango row:আমের মিষ্টি স্বাদে যে এমন তিক্ততা ছড়াতে পারে, তা কে জানত! গোবরডাঙা থানার বেরগুম এক নম্বর পঞ্চায়েতের ঝনঝনিয়া পশ্চিমপাড়ার মানুষ এখনও ভাবতে পারছে না, কীভাবে ছোট্ট একটা ঝগড়া এত বড় অশান্তির রূপ নিল, আর তার পরিণতিতে এক তরতাজা প্রাণ ঝরে গেল। রবিবার দুপুরে ঘটনার সূত্রপাত—দুই নাবালক বাচ্চার মধ্যে সাধারণ একটি আম পাড়াকে কেন্দ্র করে প্রথমে বচসা, তারপর ধাক্কাধাক্কি। গ্রামের অন্য বাচ্চাদের মতো তারাও হয়তো ভাবছিল, গাছ থেকে পাড়ার জন্য কয়েকটা আম পাড়লে কী-ই বা হবে? কিন্তু সেই ছোট্ট ঝামেলাই যখন বড়দের মধ্যে গিয়ে পৌঁছল, তখন যেন আগুনের আঁচ লেগে গেল। দুই পরিবারের মধ্যে শুরু হয় তর্কাতর্কি, একে অপরকে দোষারোপ, গালিগালাজ। এরপরেই আচমকাই ঘটে যায় মর্মান্তিক ঘটনা। অভিযোগ, ৩৩ বছরের বশির মণ্ডলকে ঘিরে ধরে এলাকারই রজীবুল মণ্ডল, এবং তার পরই মাথায় ও ঘাড়ে এলোপাতাড়ি পাথর-লাঠির আঘাত করে বসিরকে মাটিতে ফেলে দেয়। উপস্থিত লোকজন চিৎকার-চেঁচামেচি শুরু করে, বশিরের পরিবার আর প্রতিবেশীরা তাঁকে দ্রুত হাবরা হাসপাতালে নিয়ে যায়।
প্রথম অবস্থায় বশিরের শারীরিক অবস্থা কিছুটা স্থিতিশীল মনে হলেও সোমবার সকালে হঠাৎ তাঁর শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়, তখনই তাঁকে বারাসাত মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার করা হয়। চিকিৎসকদের আপ্রাণ চেষ্টা সত্ত্বেও বিকেল সাড়ে চারটে নাগাদ বশির মণ্ডল মারা যান। গোটা এলাকায় শোকের ছায়া নেমে আসে, আতঙ্ক ছড়ায় ঝনঝনিয়া পশ্চিমপাড়ায়।এই ঘটনার পরেই গোবরডাঙা থানায় রজীবুল মণ্ডলের বিরুদ্ধে খুনের মামলা রুজু করা হয়েছে। পুলিশ সূত্রে খবর, অভিযুক্ত রজীবুলকে গ্রেফতারের জন্য তল্লাশি শুরু হয়েছে। গোবরডাঙা থানার এক পুলিশ আধিকারিক জানান, “ঘটনাটি অত্যন্ত দুঃখজনক। আমরা খুনের মামলা রুজু করেছি, দোষী যাতে কোনোভাবেই পার পেতে না পারে, সে বিষয়ে কঠোর নজর রাখা হচ্ছে।”
গ্রামের মানুষও শোকস্তব্ধ। স্থানীয় বাসিন্দা মজনু শেখ বলেন, “কে জানত একটা আম পাড়াকে ঘিরে এমন ঘটনা ঘটবে! আমরা চাই, দোষী যেন কড়া শাস্তি পায়।” একইসঙ্গে অনেকে বলছেন, “এলাকার মধ্যে ছোটখাটো বচসা হতেই পারে, কিন্তু সেই কারণে যদি জীবন চলে যায়, তাহলে এর থেকে লজ্জার আর কিছু হতে পারে না।”এই ঘটনার পরে গোটা এলাকায় যাতে আর কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে, তার জন্য পুলিশি পিকেট বসানো হয়েছে। পুলিশের একটি টিম এলাকায় টহল দিচ্ছে।এই ঘটনার প্রেক্ষিতে সমাজকর্মী সায়রা পারভীন বলেন, “আমরা বারবার বলি, সহনশীলতা শেখাতে হবে, ছোট ছোট ঘটনাকে বড় করে তোলা ঠিক নয়। দুই পরিবারের মধ্যে আলোচনার মাধ্যমে সমস্যার সমাধান করা উচিত ছিল। একটুখানি সহনশীলতার অভাবেই কত বড় বিপদ হয়ে গেল!”