MAMTA BANERJEE: মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দার্জিলিং সফরে পাহাড়বাসীদের কর্মসংস্থানের উন্নয়নে নেওয়া বেশ কয়েকটি উদ্যোগের ঘোষণা গুরুত্বপূর্ণ দিশা দেখিয়েছে। তিনদিনের এই সফরে মুখ্যমন্ত্রী জানান, তরুণ প্রজন্মকে কর্মসংস্থানের উপযোগী করে তুলতে পাহাড় অঞ্চলে চারটি স্কিল ডেভেলপমেন্ট সেন্টার চালু করা হবে, যা স্থানীয় যুবকদের প্রশিক্ষণ এবং দক্ষতা বৃদ্ধি করবে। মঙ্গলবার দার্জিলিংয়ে জিটিএ, কালিম্পং ও দার্জিলিং জেলা প্রশাসনের শীর্ষ কর্মকর্তাদের সাথে বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন মুখ্যমন্ত্রী, যেখানে বোর্ডের উন্নয়ন, দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণ এবং নজরদারি নিয়ে আলোচনা হয়। বৈঠকের শেষে মুখ্যমন্ত্রী জানান, সমস্ত উন্নয়ন বোর্ড পুনর্গঠন করা হবে এবং উন্নয়ন প্রকল্পগুলির সঠিক অগ্রগতি তদারকির জন্য একটি ‘মনিটরিং সেল’ তৈরি করা হবে। এই মনিটরিং সেলের চেয়ারম্যান হিসেবে নিযুক্ত করা হবে জিটিএ চিফ এক্সিকিউটিভ অনিত থাপাকে, সহকারী হিসেবে থাকবেন হিল তৃণমূলের চেয়ারম্যান এলবি রাই এবং দুই জেলার জেলাশাসক।

পাহাড়ে উন্নয়ন প্রকল্পগুলির অগ্রগতি এবং দুর্নীতির অভিযোগ নিয়ে উদ্বিগ্ন মুখ্যমন্ত্রী জানান, উন্নয়ন বোর্ডগুলির উপর নজরদারি জোরদার করা হবে এবং যে কোনো ধরনের অবহেলা বা দুর্নীতি রোধে শক্ত পদক্ষেপ নেওয়া হবে। এই উদ্যোগটি স্থানীয়দের মধ্যে আশা এবং কর্মসংস্থানের নতুন সম্ভাবনা তৈরি করেছে। তিনি আরও জানান, দেড় মাসের মধ্যে উন্নয়ন বোর্ড পুনর্গঠনের কাজ শেষ হবে এবং এরপর একাধিক মনিটরিং সেলের মাধ্যমে অগ্রগতির উপর নজরদারি চালানো হবে। মুখ্যমন্ত্রীর এই পদক্ষেপ পাহাড়বাসীদের মধ্যে উৎসাহের সঞ্চার করেছে এবং তারা বিশ্বাস করছেন, এই উদ্যোগ পাহাড়ের সামগ্রিক অর্থনৈতিক উন্নয়নে সহায়ক হবে।
মুখ্যমন্ত্রী চা বাগানের শ্রমিকদের জমির পাট্টা দেওয়ার কথাও বলেন, যা তাদের অর্থনৈতিক স্বাবলম্বিতায় সহায়তা করবে। জিটিএ চিফ এক্সিকিউটিভ অনিত থাপা এই বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রীর সামনে রাজ্য সরকারের উন্নয়নমূলক কাজগুলি তুলে ধরেন এবং মুখ্যমন্ত্রীর ভূয়সী প্রশংসা করেন। তিনি বলেন, “মুখ্যমন্ত্রীর সহায়তায় পাহাড়ে বহু উন্নয়ন প্রকল্প সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছে, যা এখানকার মানুষকে অনেক উপকৃত করেছে।”
মুখ্যমন্ত্রীর এই উদ্যোগগুলির পেছনের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে পাহাড়ে সুসংহত উন্নয়ন বজায় রাখা। গোর্খাল্যান্ডের দাবিতে কিছু বছর আগে পাহাড়ে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছিল এবং তখন জিটিএ বোর্ডের অভাব ছিল। সেই পরিস্থিতিতে উন্নয়নের স্বার্থে পৃথক উন্নয়ন বোর্ড গঠন করা হয়, যার জন্য প্রতি বছর ২ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হত। বর্তমানে মোট ১৬টি বোর্ড সক্রিয় রয়েছে, তবে উন্নয়ন বোর্ডগুলিতে নানা দুর্নীতির অভিযোগ ওঠায় প্রশাসনের তরফে নজরদারি ও পুনর্গঠনের পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই পদক্ষেপ পাহাড়বাসীদের কর্মসংস্থান এবং জীবনের মান উন্নয়নে সহায়ক হবে। সরকারের এই উদ্যোগগুলি শুধু পাহাড়বাসীদের জীবনমান উন্নয়নেই সীমাবদ্ধ থাকবে না বরং রাজ্য সরকারের প্রতি স্থানীয়দের আস্থা বাড়াবে। মুখ্যমন্ত্রীর এই সাহসী পদক্ষেপ এবং দৃঢ় মনোভাব পাহাড়ের জনগণের জন্য এক নতুন অধ্যায় শুরু করতে সহায়ক হবে।