Mamata opens Jagannath Dham in Digha:অক্ষয় তৃতীয়া—এই পুণ্য দিনে দিঘার বালিয়াড়ির বুক জুড়ে ইতিহাস তৈরি করল রাজ্য সরকার, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাত ধরে দ্বারোদ্ঘাটন হল পূর্ব মেদিনীপুরের সমুদ্র শহরে নবনির্মিত জগন্নাথ ধামের, যার স্থাপত্যে মিশেছে ঐতিহ্য আর আধুনিকতার মেলবন্ধন; রাজ্য সরকারের উদ্যোগে কলিঙ্গ শৈলীতে তৈরি এই সুবিশাল মন্দিরটি একেবারে পুরীর জগন্নাথ মন্দিরের অনুকরণে গড়ে তোলা হয়েছে, যা দিঘাকে শুধুমাত্র একটি পর্যটন কেন্দ্র নয়, ধর্মীয় এবং সাংস্কৃতিক তীর্থক্ষেত্র হিসেবেও পরিচিত করে তুলবে—এমনটাই আশাবাদী মুখ্যমন্ত্রী নিজে; বুধবার দুপুর আড়াইটে নাগাদ মন্দির উদ্বোধন এবং বিকেল তিনটায় আনুষ্ঠানিকভাবে দ্বারোদ্ঘাটনের মাধ্যমে সূচনা হয় জগন্নাথ ধামের নতুন যাত্রার, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পূর্ণাহুতি দিয়ে শুরু করেন শুভ কর্মসূচি, যেখানে উপস্থিত ছিলেন রাজ্য সরকারের উচ্চপদস্থ আধিকারিক, তৃণমূল কংগ্রেসের একাধিক নেতা-মন্ত্রী, সাংসদ এবং সমাজের নানা স্তরের কৃতী ব্যক্তিত্ব; একদিকে শঙ্খধ্বনি আর অপরদিকে উলুধ্বনির মাঝে রীতিমতো উৎসবের আবহে মুখর ছিল দিঘা শহর, সকাল থেকেই মন্দির চত্বরজুড়ে ছিল বিশেষ যজ্ঞ, হোম, পুরোহিতদের মন্ত্রোচ্চারণ,
আর ভক্তদের দীর্ঘ লাইন—প্রথমবারের জন্য প্রভু জগন্নাথ, বলরাম ও সুভদ্রার দর্শনের আশায়; এই মন্দির নির্মাণ শুধু একটি ধর্মীয় কাঠামো নয়, বরং রাজ্য সরকারের এক বৃহৎ পর্যটন উন্নয়ন প্রকল্পের অংশ, যার মাধ্যমে দিঘাকে আন্তর্জাতিক মানের ধর্মীয় পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলার পরিকল্পনা রয়েছে; স্থানীয় হোটেল ব্যবসায়ী দীপ্তেন্দু সেনগুপ্ত বলেন, “এটা শুধু আমাদের শহরের গর্ব নয়, বরং ব্যবসায়িক দিক থেকেও এটা আমাদের কাছে এক বিশাল সুযোগ,” অন্যদিকে কলকাতা থেকে আসা এক ভক্তা সুচেতা দত্ত বলেন, “পুরীর মতো অনুভূতি হচ্ছে এখানে, আর মমতা দিদির হাতেই এই শুভ সূচনা হওয়াটা সত্যিই অসাধারণ”; উদ্বোধনের পর সন্ধ্যাবেলায় শুরু হয় বিশাল সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, যেখানে অংশ নেয় বাংলার বিভিন্ন জেলার লোকনৃত্য দল, বাউল শিল্পী, এবং ভক্তিমূলক গানের দল, যা দর্শকদের অভিভূত করে তোলে; তৃণমূলের তরফ থেকে জানানো হয়েছে,

মন্দির সংলগ্ন এলাকায় পর্যটকদের জন্য আরও নানা পরিকাঠামো তৈরি করা হবে—বিশ্রামাগার, ক্যান্টিন, প্রার্থনা হল, জগন্নাথ জাদুঘর, এবং একটি ধর্মীয় লাইব্রেরি—যা আগামীতে দিঘাকে বাংলার পুরী হিসেবে প্রতিষ্ঠা করবে; তবে এই মন্দির নিয়ে রাজনৈতিক মহলেও আলোচনা চলছে, কারণ অনেকেই বলছেন, আসন্ন লোকসভা নির্বাচনের আগে ধর্মীয় আবেগে হাত রেখেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রাজনীতির মাঠে নতুন চাল চেলেছেন, যদিও মুখ্যমন্ত্রীর স্পষ্ট বক্তব্য—”এটা বাংলার সংস্কৃতি, বাংলার গর্ব, এখানে রাজনীতি নেই, আছে মানুষের জন্য কাজ করার সংকল্প”; স্থানীয়দের মধ্যে এই উদ্যোগ ঘিরে উৎসাহের পাশাপাশি আশা—এই মন্দির ঘিরে পর্যটন বাড়বে, কাজের সুযোগ তৈরি হবে, আর দিঘা আন্তর্জাতিক মানের ধর্মীয় পর্যটন মানচিত্রে জায়গা করে নেবে; ভবিষ্যতে এই মন্দিরে রথযাত্রা, স্নানযাত্রা, উল্টো রথ, জগন্নাথ অন্নকূটের মতো উৎসবগুলি বড় আকারে পালিত হবে বলে জানিয়েছেন দিঘা-শঙ্করপুর উন্নয়ন পর্ষদের চেয়ারম্যান; সব মিলিয়ে মমতার হাত ধরে দিঘার জগন্নাথ ধামের দ্বারোদঘাটনের মধ্য দিয়ে আজ শুধু একটি মন্দির নয়, খুলে গেল এক নবদিগন্ত—ধর্ম, সংস্কৃতি, অর্থনীতি আর আস্থার যুগ্মপথে বাংলার আত্মপরিচয়ের নতুন প্রকাশ।