Make sure to add Iftar to your outfit: Dilip Ghosh : রাজনীতির মঞ্চে ফের তীব্র উত্তাপ। বিজেপি নেতা দিলীপ ঘোষ ফের বিতর্কিত মন্তব্য করে সংবাদ শিরোনামে। এবার তার আক্রমণের নিশানায় রাজ্যের শাসকদল। নদিয়ার কৃষ্ণনগরে ‘চায়ে পে চর্চা’ কর্মসূচিতে এসে শাসক দলের নেতাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে দিলীপ ঘোষ বলেন, “কিছু নেতা চন্দন কপালে লাগিয়ে, আবার কখনো টুপি পরে মেকি মুসলমান সেজে ইফতারে যোগ দিচ্ছেন। যারা সত্যিকারের রোজা রেখেছেন তাদের জন্য ইফতার ঠিক আছে, কিন্তু যারা শুধুমাত্র রাজনীতির কারণে টুপি পরে ইফতারে যাচ্ছেন, আমি ইসলামিক ভাইদের বলব, তাদের থেকে দূরে থাকুন।”
দিলীপ ঘোষের এই মন্তব্যের পর রাজনৈতিক মহলে তীব্র প্রতিক্রিয়া শুরু হয়েছে। শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস থেকে শুরু করে ইসলামিক সম্প্রদায়ের একাংশও তার এই বক্তব্যের তীব্র সমালোচনা করেছেন। অন্যদিকে বিজেপি শিবিরের কর্মীরা দিলীপ ঘোষের মন্তব্যকে সমর্থন করে বলছেন, “তিনি শুধু সত্য কথাই বলেছেন।”
‘চায়ে পে চর্চা’ এবং বিতর্কিত মন্তব্য
রবিবার নদিয়ার কৃষ্ণনগরে বিজেপি-র জনপ্রিয় কর্মসূচি ‘চায়ে পে চর্চা’-য় যোগ দিতে গিয়েছিলেন দিলীপ ঘোষ। সেখানে স্থানীয় বিজেপি কর্মীদের সঙ্গে চা খেতে খেতে রাজ্যের শাসক দলের বিরুদ্ধে তোপ দাগেন তিনি। সংবাদমাধ্যমের প্রশ্নের উত্তরে দিলীপবাবু বলেন, “এখন রাজনীতির মঞ্চে মেকি ধর্মনিরপেক্ষতা চলছে। কখনো চন্দন লাগিয়ে কেউ হিন্দু সেজে যাচ্ছেন মন্দিরে, আবার কখনো টুপি পরে মুসলমানদের ইফতার পার্টিতে যোগ দিচ্ছেন। এটা শুধু ভোটের রাজনীতি, এর সঙ্গে ধর্মের কোনও সম্পর্ক নেই।”
রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া এবং স্থানীয় মানুষজনের মতামত
দিলীপ ঘোষের এই মন্তব্যের পর তৃণমূল কংগ্রেসের তরফে তীব্র প্রতিক্রিয়া জানানো হয়েছে। দলের মুখপাত্র কুণাল ঘোষ বলেন, “দিলীপ ঘোষ যতবার মুখ খুলবেন, বিজেপির মুখোশ ততবার খুলে যাবে। উনি নিজে কখনও হিন্দুত্বের নামে বিভাজনের রাজনীতি করেন, কখনও মুসলিমদের বিরুদ্ধে বিদ্বেষ ছড়ান। এটা সম্পূর্ণ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।”
তৃণমূল নেতা হুমায়ুন কবির এই প্রসঙ্গে বলেন, “ইফতার পার্টি শুধু মুসলিম সম্প্রদায়ের জন্য নয়, এটি সম্প্রীতির প্রতীক। বিভিন্ন ধর্মের মানুষ সেখানে অংশ নেন, ভালোবাসার বন্ধন আরও মজবুত হয়। দিলীপ ঘোষ এই সম্প্রীতিকে আঘাত করছেন।”
তবে বিজেপির একাংশ দিলীপ ঘোষের বক্তব্যকে সমর্থন করে বলছে, “উনি যা বলেছেন, সেটা বাস্তব। ভোটের রাজনীতির জন্য অনেকেই ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠানে মেকি ভাবে অংশ নেন। দিলীপবাবু সেই ভণ্ডামির বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন।”
ইফতার পার্টির রাজনীতি: ভোটের আগে ধর্মীয় কার্ড?
ইফতার পার্টি রাজনৈতিক মহলে দীর্ঘদিন ধরেই একটি গুরুত্বপূর্ণ ইভেন্ট। বিভিন্ন রাজনৈতিক দল এই পার্টি আয়োজন করে বা অংশগ্রহণ করে মুসলিম সম্প্রদায়ের ভোটকে প্রভাবিত করার চেষ্টা করে বলে অভিযোগ। প্রতি বছর রমজান মাসের শেষ দিকে শাসক দল এবং বিরোধী শিবিরের নেতারা ইফতার পার্টিতে অংশ নেন। সেখানে উপস্থিত থাকেন বিশিষ্ট ইসলামিক ব্যক্তিত্ব এবং রাজনৈতিক নেতারা।
দিলীপ ঘোষের অতীত বিতর্কিত মন্তব্য
এটি প্রথমবার নয়, যখন দিলীপ ঘোষ তার মন্তব্যের জন্য বিতর্কে জড়িয়েছেন। এর আগে গরু নিয়ে তার মন্তব্য, ‘গোল্ডেন মিল্ক’ এবং ‘বাংলাদেশিদের তাড়িয়ে দেওয়ার’ হুঁশিয়ারি দিয়েও তিনি সমালোচিত হয়েছিলেন। এবার তার মন্তব্যকে কেন্দ্র করে আরও একবার রাজনৈতিক মহলে উত্তেজনা তৈরি হয়েছে।

স্থানীয় মানুষের প্রতিক্রিয়া
নদিয়ার কৃষ্ণনগরের স্থানীয় মানুষজনের মধ্যেও এই মন্তব্য নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। স্থানীয় ব্যবসায়ী মনিরুল ইসলাম বলেন, “ইফতার পার্টি সম্প্রীতির প্রতীক। আমরা চাই সব ধর্মের মানুষ এখানে যোগ দিন। কিন্তু কেউ যদি মনে করেন, এটা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা হচ্ছে, তাহলে সেটা ভিন্ন বিষয়।”
অন্যদিকে, স্থানীয় বিজেপি কর্মী রাজীব বিশ্বাসের বক্তব্য, “দিলীপদা সত্য কথাই বলেছেন। রাজ্যে শাসক দলের নেতারা শুধু মুসলিম ভোট পাওয়ার জন্য টুপি পরে ইফতার পার্টিতে যাচ্ছেন, এটা সবাই জানে।”
মতপ্রকাশের স্বাধীনতা নাকি বিদ্বেষমূলক বক্তব্য?
দিলীপ ঘোষের এই মন্তব্য নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে, এটি কি মতপ্রকাশের স্বাধীনতা নাকি ধর্মীয় বিদ্বেষ ছড়ানোর চেষ্টা? রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মতে, ভোটের আগে এমন মন্তব্য করে দিলীপ ঘোষ মূলত হিন্দু ভোটারদের একত্রিত করার চেষ্টা করছেন। তবে এই ধরনের বক্তব্য ধর্মীয় সম্প্রীতিকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে বলেও আশঙ্কা করছেন অনেকে।
উপসংহার
দিলীপ ঘোষের মন্তব্য রাজনৈতিক ময়দানে নতুন বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। তার বক্তব্যের প্রভাব কতদূর যাবে এবং এটি আসন্ন নির্বাচনে বিজেপি-র পক্ষে কোনো ইতিবাচক ফলাফল নিয়ে আসবে কিনা, তা সময়ই বলবে। তবে এখনই এটা স্পষ্ট, ধর্ম ও রাজনীতির এই মেলবন্ধন ভবিষ্যতে আরও উত্তেজনা এবং বিতর্ক তৈরি করবে।