Major corruption in Deucha Pachami’s appointment, explosive claim by Subhendur: রাজ্যে শিক্ষক নিয়োগ দূর্নীতি নিয়ে আগেই রাজনৈতিক উত্তাপ ছিল তুঙ্গে। এবার দেউচা-পাচামি কয়লা খনির নিয়োগে বড় দুর্নীতির অভিযোগ তুলে আরও একবার শাসক দলকে কাঠগড়ায় তুললেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। বীরভূমের রামপুরহাটে এসে শুভেন্দু অধিকারী এই নিয়োগ প্রক্রিয়ায় বিস্তর ত্রুটি এবং দূর্নীতির অভিযোগ করেন। তিনি দাবি করেন, “শিক্ষক নিয়োগ কাণ্ডের থেকেও ভয়ঙ্কর দূর্নীতি হয়েছে দেউচা-পাচামি নিয়োগে।”
শুভেন্দু বলেন, ২৯ মার্চ সিউড়িতে এসে সমস্ত প্রমাণপত্র সাংবাদিকদের সামনে তুলে ধরবেন। তার বক্তব্য ঘিরে ইতিমধ্যেই বীরভূমের রাজনীতিতে চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে। শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেস এই অভিযোগকে ভিত্তিহীন বলে দাবি করলেও শুভেন্দুর বক্তব্যে স্থানীয় মানুষ এবং বিজেপি কর্মীদের মধ্যে আগ্রহ ও উত্তেজনা তৈরি হয়েছে।রামপুরহাটে শুভেন্দু অধিকারীর বক্তব্যের প্রেক্ষাপট বেশ গুরুত্বপূর্ণ। দীর্ঘদিন ধরেই তারাপীঠ শ্মশান সংলগ্ন দ্বারকা নদের তীরে জল পরিশ্রুত করার মেশিন বসানোর কাজ নিয়ে বিজেপি তীব্র আপত্তি জানিয়ে আসছে। বিজেপির অভিযোগ, এই কাজের জন্য বৈষ্ণব সম্প্রদায়ের সমাধিস্থল দখল করা হচ্ছে। ৬ মার্চ থেকে বিজেপি কর্মীরা রামপুরহাট মহকুমা শাসকের দপ্তরের সামনে মঞ্চ তৈরি করে অবস্থান বিক্ষোভ চালিয়ে যাচ্ছেন। এদিন সেই মঞ্চে এসে শুভেন্দু অধিকারী শাসক দলকে কার্যত একহাত নেন এবং তারাপীঠ-রামপুরহাট উন্নয়ন পর্ষদের বিরুদ্ধে একাধিক দূর্নীতির অভিযোগ তোলেন।
শুভেন্দু বলেন, “তারাপীঠে হিন্দুদের ভাবাবেগে আঘাত করছে সরকার। বৈষ্ণবদের সমাধিস্থলে জল পরিশ্রুতকরণের মেশিন বসানোর নামে দূর্নীতি হচ্ছে। আমরা এর আইনি লড়াই লড়বো। সমস্ত প্রমাণ আছে আমাদের কাছে।”দেউচা-পাচামি কয়লা খনি প্রকল্প রাজ্যের অন্যতম বৃহৎ প্রকল্প। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে এই প্রকল্পকে পশ্চিমবঙ্গের অর্থনীতির উন্নয়নের মাইলস্টোন হিসেবে তুলে ধরা হয়। তবে শুভেন্দুর অভিযোগ, এই প্রকল্পে স্থানীয় বাসিন্দাদের যথাযথ সুযোগ এবং যোগ্যতার ভিত্তিতে চাকরি দেওয়া হয়নি। তার অভিযোগ, “তৃণমূলের ঘনিষ্ঠদের এবং দলীয় কর্মীদের বেআইনিভাবে চাকরি দেওয়া হয়েছে। যোগ্য প্রার্থীরা কাজ পাননি। সবটাই হয়েছে কাটমানি আর দলীয় তোলাবাজির মাধ্যমে।”এদিন শুভেন্দু আরও হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, “আমাদের কাছে সমস্ত নথি আছে। ২৯ মার্চ সিউড়িতে বিশদে সমস্ত প্রমাণ সাংবাদিকদের সামনে প্রকাশ করবো। দেউচা-পাচামি নিয়োগের আড়ালে কী ভয়ঙ্কর দূর্নীতি হয়েছে, তার সমস্ত তথ্য সামনে আসবে।” তার এই মন্তব্য ঘিরে ইতিমধ্যেই রাজনৈতিক মহলে উত্তেজনা শুরু হয়েছে।
বিজেপির অভিযোগ অনুযায়ী, দেউচা-পাচামি কয়লা প্রকল্পে স্থানীয় বাসিন্দাদের জমি অধিগ্রহণের প্রতিশ্রুতি এবং বিনিময়ে চাকরি দেওয়ার যে প্রতিশ্রুতি ছিল, তা ঠিকমতো পালন করা হয়নি। শুভেন্দু বলেন, “এখানে জমি অধিগ্রহণের নামে সাধারণ মানুষের সঙ্গে প্রতারণা হয়েছে। যে মানুষদের জমি নেওয়া হলো, তাদের অধিকাংশই আজও চাকরি পাননি। অথচ, অন্য জায়গা থেকে লোক এনে চাকরি দেওয়া হয়েছে।”তৃণমূল কংগ্রেস অবশ্য শুভেন্দুর এই সমস্ত অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছে। তৃণমূল নেতারা বলেছেন, “বিজেপি ইস্যু তৈরি করতে চাইছে। দেউচা-পাচামি প্রকল্প সম্পূর্ণ স্বচ্ছ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে পরিচালিত হচ্ছে। বিজেপি মানুষকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছে।”
তবে শুভেন্দুর বক্তব্যের পর থেকেই সাধারণ মানুষ এবং স্থানীয় বাসিন্দারা বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন তুলতে শুরু করেছেন। দেউচা-পাচামি এলাকায় বসবাসকারী বেশ কয়েকজন অভিযোগ করেছেন যে, চাকরি পাওয়ার আশ্বাস পেলেও এখনো অনেকেই কাজ পাননি। স্থানীয় বাসিন্দা বিশ্বজিৎ দাস বলেন, “জমি দিয়েও আমরা কাজ পাইনি। অথচ অনেক বহিরাগত এখানে চাকরি পেয়ে গেছে। কীভাবে হলো এসব, কেউ জানে না।”শুভেন্দুর অভিযোগ শুধু দেউচা-পাচামি নিয়েই নয়। তারাপীঠ শ্মশান সংলগ্ন এলাকায় জল পরিশ্রুতকরণের মেশিন বসানোর নামেও দূর্নীতির অভিযোগ তোলেন তিনি। তিনি বলেন, “তারাপীঠের এই কাজ করার জন্য বৈষ্ণবদের সমাধিস্থল দখল করা হচ্ছে, যা হিন্দুদের ভাবাবেগে আঘাত করছে। এখানে ধর্মীয় ভাবাবেগে আঘাত করার পাশাপাশি দূর্নীতির গন্ধ স্পষ্ট।”
শুভেন্দুর বিস্ফোরক অভিযোগের পর দেউচা-পাচামি প্রকল্প এবং তারাপীঠ এলাকায় নতুন করে উত্তেজনা তৈরি হয়েছে। সাধারণ মানুষের মধ্যে ক্ষোভ এবং প্রশ্ন দেখা দিয়েছে—আসল সত্যিটা কী? বিজেপি এবং তৃণমূলের পাল্টাপাল্টি অভিযোগের মধ্যে প্রকৃত সত্য উদঘাটন করতে প্রশাসনের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন উঠছে।