Mahua Moitra gets married to Mishra:-রাজনীতির ময়দানে তিনি এক অকুতোভয় মুখ, সংসদে তাঁর বক্তব্যের ধার ও ভাষা নিয়ে বহু বিতর্ক, প্রশংসা, আবার কখনো বিরোধ। তিনি তৃণমূল কংগ্রেসের কৃষ্ণনগরের সাংসদ মহুয়া মৈত্র। আর ব্যক্তিগত জীবনে এবার এক চুপিসারে, নিভৃতে, অতি সাধারণ অথচ ঐতিহাসিক এক মুহূর্তে নিজের জীবনের নতুন অধ্যায় শুরু করলেন তিনি। বিজেডির প্রাক্তন সাংসদ পিনাকী মিশ্রের সঙ্গে গাঁটছড়া বাঁধলেন মহুয়া, আর সেই বিয়ের সাক্ষী রইল জার্মানির বার্লিন শহর ও তার বিখ্যাত প্রাসাদের ছাদ।শুক্রবার, ইউরোপের ব্যস্ত শহর বার্লিনের এক প্রাচীন প্রাসাদের ছাদে আয়োজিত হয় একেবারে ব্যক্তিগত অথচ অপূর্ব রোমান্টিক পরিবেশে এই বিয়ের অনুষ্ঠান। আলো-আঁধারি বারান্দা, খোলা আকাশ, আর শুধু কাছের কিছু প্রিয়জনের উপস্থিতিতে ৫১ বছরের মহুয়া মৈত্র ও ৬৫ বছরের পিনাকী মিশ্র একে অপরের পাশে দাঁড়িয়ে সাত পাকে বাঁধা পড়েন। বলা ভালো, এই বিয়ে ছিল এক প্রেমের, বন্ধুত্বের এবং বিশ্বাসের পরিণতি, যা দীর্ঘ কয়েক বছরের অন্তরঙ্গ সম্পর্কের ভিত্তিতে গড়ে উঠেছে।

প্রথমবারের মতো প্রকাশ্যে আসা এই বিয়েতে মহুয়াকে দেখা যায় ঘিয়ে আর পিঙ্ক রঙের শাড়ি ও গয়নায়, যা একাধারে পরিপাটি আবার রাজকীয়। অন্যদিকে পিনাকীর পরনে ছিল অফ হোয়াইট কুর্তা-পাজামা ও জহর কোট—একটিই রঙের টানে দু’জনের মিল ছিল চোখে পড়ার মতো। অনুষ্ঠান ছিল একেবারে ঘরোয়া, বিদেশের মাটিতে হলেও প্রতিটি সাজ-সজ্জা, পোশাক, খাবার থেকে শুরু করে রীতিনীতি—সব কিছুতেই ছিল একটি খাঁটি বাঙালি ঘরানার ছোঁয়া।উল্লেখ্য, দু’জনেরই এটা দ্বিতীয় বিয়ে। মহুয়ার আগের সম্পর্ক নিয়ে অতীতেও আলোচনা হয়েছিল, তবে সেই অধ্যায় থেকে অনেকটাই দূরে সরে এসে এবার নতুন করে জীবন শুরু করলেন তিনি। আবার পিনাকী মিশ্র, যিনি একাধিকবার লোকসভার সদস্য ছিলেন ও একজন প্রতিষ্ঠিত আইনজীবী হিসেবে পরিচিত, তিনিও তাঁর প্রাক্তন স্ত্রীকে ছেড়ে একসময় একাকী জীবনযাপন করছিলেন।তবে এই বিয়ে নিয়ে রাজনৈতিক মহলে যেমন উত্তেজনা তৈরি হয়েছে, তেমনি অনেকেই এই সম্পর্ককে প্রগতিশীল রাজনীতির এক নতুন দৃষ্টান্ত বলেও দেখছেন। একদিকে মহুয়া, যিনি একজন স্পষ্টবক্তা, আন্তর্জাতিক ব্যাঙ্কিং ব্যাকগ্রাউন্ড থেকে উঠে আসা শিক্ষিতা, মুক্তচিন্তার এক নারীমুখ। অন্যদিকে পিনাকী মিশ্র, একদা বিজেডির শক্তিমান নেতা, প্রখ্যাত আইনজীবী এবং একজন সংযত, স্থিতধী মানুষ। দু’জনের ব্যক্তিত্ব যেন একে অপরকে পরিপূরক করে তোলে।
এই প্রসঙ্গে মহুয়ার ঘনিষ্ঠমহলের একজন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ব্যক্তি জানান, “মহুয়া ও পিনাকীর বন্ধুত্ব গত পাঁচ-ছয় বছর ধরেই ছিল। তাঁরা একে অপরের সঙ্গে রাজনৈতিক, সামাজিক ও ব্যক্তিগত নানা বিষয়ে মত বিনিময় করতেন। এই সম্পর্কটা সময়ের সঙ্গে আরও গভীর হয়েছে। আমরা সবাই জানতাম, একদিন না একদিন এটা বিয়ে পর্যন্ত পৌঁছবেই।”বিয়ে নিয়ে মহুয়া বা পিনাকী কেউই এখনো আনুষ্ঠানিক বিবৃতি দেননি। তবে তাঁদের ঘনিষ্ঠমহল বলছে, বিয়ে সম্পূর্ণ হওয়ার পর তাঁরা কলকাতায় ফিরে একটি ছোট, ঘরোয়া রিসেপশন এর পরিকল্পনা করছেন, যেখানে রাজনীতি, আইন, সাহিত্য ও শিল্প জগতের একাধিক ব্যক্তিত্ব আমন্ত্রিত হবেন।এই ঘটনায় অবশ্য রাজনৈতিক প্রতিপক্ষরা খুব একটা খোঁচা দেওয়ার চেষ্টা করেনি। বরং অনেকে অভিনন্দন জানিয়েছেন। বিজেপি নেত্রী লকেট চ্যাটার্জি বলেন, “রাজনৈতিক মতভেদ থাকতে পারে, কিন্তু ব্যক্তিগত জীবনে সুখের কামনা করাই মানবিকতার দৃষ্টিভঙ্গি। মহুয়া ও পিনাকী মিশ্রকে আমি আন্তরিক শুভেচ্ছা জানাই।”

অন্যদিকে, সামাজিক মাধ্যমে এই বিয়ের খবর ছড়িয়ে পড়তেই নেটিজেনদের শুভেচ্ছার জোয়ার বইতে শুরু করেছে। অনেকেই মহুয়ার সাহসিকতাকে প্রশংসা করেছেন, যেভাবে তিনি জীবনের দ্বিতীয় ইনিংস শুরু করেছেন এবং নিজের ভালবাসাকে সাহসের সঙ্গে গ্রহণ করেছেন, সেটাই আজকের সমাজে বহু মানুষের জন্য অনুপ্রেরণা।তবে এই বিয়ের আরেকটা দিক হল মহুয়ার রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ নিয়েও নতুন করে কৌতূহল তৈরি হয়েছে। এখন প্রশ্ন উঠছে, “এই বিয়ের পর কি মহুয়া তাঁর রাজনৈতিক অবস্থানে কোনও পরিবর্তন আনবেন? পিনাকী মিশ্র যেহেতু বিজেডির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন, সেই যোগাযোগের কোনও ছায়া কি পড়বে মহুয়ার রাজনীতিতে?” যদিও এর উত্তর ভবিষ্যতের হাতে, তবে আপাতত মহুয়া ও পিনাকীর এই বিয়ে শুধুই একটি ব্যক্তিগত সম্পর্কের শুভ সূচনা, যার সঙ্গে রাজনীতির সম্পর্ক থাকুক বা না থাকুক, মানুষের হৃদয়ে তার স্থান পাক নিঃসন্দেহে।সব মিলিয়ে বলা যায়, বার্লিনের ছাদে দাঁড়িয়ে মহুয়া মৈত্র ও পিনাকী মিশ্রের এই গাঁটছড়া শুধু দুটি মানুষের মিলন নয়, এটি একটি বার্তা—ভালোবাসা এবং পারস্পরিক শ্রদ্ধা থাকলে দ্বিতীয় ইনিংসও হয় অনন্য সুন্দর। এখন সময়ই বলবে, এই সংসার কতটা রাজনৈতিক চর্চার কারণ হবে, আর কতটা এক নিভৃত সুখের আশ্রয় হয়ে থাকবে।