Mahakumbha fair started in Prayagraj : আজ থেকে উত্তরপ্রদেশের প্রয়াগরাজ শহরের ত্রিবেণী সঙ্গমে শুরু হলো মহাকুম্ভ মেলা, যা হিন্দুদের মধ্যে সবচেয়ে বড় ধর্মীয় সমাবেশ হিসেবে পরিচিত। ত্রিবেণী সঙ্গম হলো গঙ্গা, যমুনা এবং কল্পিত সরস্বতী নদীর সঙ্গমস্থল। এই স্থানে স্নান করলে জীবনের পাপমুক্তি হয় এবং মোক্ষলাভ হয় বলে বিশ্বাস করেন ভক্তরা। এই মেলা প্রতি ১২ বছরে একবার আয়োজন করা হয় এবং মহাকুম্ভের বিশেষ মহাত্ম্য রয়েছে হিন্দু ধর্মগ্রন্থে।
মেলার আনুষ্ঠানিক সূচনা হয়েছে আজ, এবং এটি ২৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত চলবে। প্রায় ৪৫ দিনের এই মহোৎসবের জন্য লক্ষ লক্ষ ভক্ত এবং পর্যটকের সমাগম প্রত্যাশিত। শুধু ভারত নয়, বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ভক্তরা এখানে জমায়েত হন। হিন্দু পঞ্জিকা অনুযায়ী, বিশেষ যোগকালীন দিনে এই মেলায় স্নান অত্যন্ত শুভ বলে গণ্য হয়।
মহাকুম্ভ মেলার সফল আয়োজনের জন্য উত্তরপ্রদেশ সরকার ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথের নেতৃত্বে প্রয়াগরাজের গোটা অঞ্চলকে মেলার উপযোগী করে তোলার জন্য বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। শহরের আশেপাশের এলাকা জুড়ে ভক্তদের থাকার জন্য অস্থায়ী তাঁবু স্থাপন করা হয়েছে। মেলার ভিতরে সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার জন্য পর্যাপ্ত শৌচাগার, পানীয় জলের ব্যবস্থা এবং বিশ্রামের স্থান তৈরি করা হয়েছে। এছাড়া নিরাপত্তার জন্য সিসিটিভি ক্যামেরা ও ড্রোনের মাধ্যমে নজরদারির ব্যবস্থা করা হয়েছে।
মহিলাদের সুরক্ষা ও শিশুদের জন্য আলাদা শিবির স্থাপন করা হয়েছে। মেলায় চিকিৎসা সেবা দেওয়ার জন্য বিভিন্ন স্থানে স্বাস্থ্য শিবির স্থাপন করা হয়েছে। প্রায় ১৫০টিরও বেশি অ্যাম্বুলেন্স সারাক্ষণ মেলার চারপাশে প্রস্তুত রাখা হয়েছে। ভারতীয় রেলের বিশেষ উদ্যোগে মেলা উপলক্ষে অতিরিক্ত ট্রেন পরিষেবার ব্যবস্থা করা হয়েছে, যা দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা ভক্তদের যাতায়াতে সহায়তা করবে।
মহাকুম্ভ মেলা শুধু ধর্মীয় অনুষ্ঠান নয়, এটি ভারতীয় সংস্কৃতির অন্যতম মাইলফলক। হিন্দু পুরাণ অনুযায়ী, সমুদ্র মন্থনের সময় অমৃতের কলস থেকে চারটি স্থানে অমৃতের ফোঁটা পড়েছিল। সেই স্থানগুলো হলো প্রয়াগরাজ, হরিদ্বার, উজ্জয়িনী, এবং নাসিক। এই চার জায়গায় পর্যায়ক্রমে কুম্ভ মেলা অনুষ্ঠিত হয়। প্রয়াগরাজের কুম্ভ মেলা তার আধ্যাত্মিক গুরুত্বের জন্য বিশেষভাবে জনপ্রিয়।
মহাকুম্ভ মেলার অন্যতম আকর্ষণ হলো সাধু ও নাগা সাধুদের জমায়েত। পাহাড়ি গুহা ও অরণ্যে বাস করা সাধুরা এই সময় মেলায় উপস্থিত হন এবং তাদের আচার-অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন। সাধুদের শোভাযাত্রা মেলার অন্যতম আকর্ষণ। তারা ধর্মীয় গান, ধূপ-ধুনো এবং ঐতিহ্যবাহী পোশাক পরিধান করে তাদের সম্প্রদায়ের ঐতিহ্য তুলে ধরেন।
মেলার আয়োজন স্থানীয় বাসিন্দাদের জীবনে বিভিন্নভাবে প্রভাব ফেলেছে। একদিকে, পর্যটকদের সমাগমের ফলে স্থানীয় অর্থনীতিতে নতুন প্রাণ সঞ্চার হয়েছে। ছোট দোকানদার থেকে বড় ব্যবসায়ী—সবাই মেলার সময় উপার্জনের সুযোগ পায়। অন্যদিকে, এত বড় মেলা আয়োজনের কারণে কিছু জায়গায় যানজট এবং জল সরবরাহের মতো সমস্যাও দেখা দিচ্ছে।

মহাকুম্ভ মেলার সফল আয়োজন উত্তরপ্রদেশ সরকার এবং ভারতের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যকে আন্তর্জাতিক স্তরে তুলে ধরার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। মেলা উপলক্ষে স্থানীয় পর্যটন শিল্পের উন্নতি যেমন হয়, তেমনই বিদেশি পর্যটকদের কাছে ভারতীয় সংস্কৃতি তুলে ধরার একটি বড় সুযোগ তৈরি হয়।
মেলায় অংশগ্রহণকারী ভক্তদের মতে, “ত্রিবেণী সঙ্গমে স্নান করার অনুভূতি অতুলনীয়। আমরা মনে করি, এই মেলায় অংশগ্রহণ করার মাধ্যমে জীবনের পাপ থেকে মুক্তি লাভ সম্ভব।” স্থানীয় এক দোকানদার বললেন, “মেলার সময় আমাদের ব্যবসার ব্যস্ততা যেমন বাড়ে, তেমনই অনেক নতুন ক্রেতার সঙ্গে পরিচিত হওয়ার সুযোগও হয়।”
মহাকুম্ভ মেলা শুধুমাত্র একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠান নয়, এটি ভারতীয় ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির এক মহোৎসব। এটি ধর্মীয়, সাংস্কৃতিক এবং সামাজিক দিক থেকে মানুষের জীবনে গভীর প্রভাব ফেলে। ভারতের আধ্যাত্মিক ঐতিহ্যকে বিশ্বের কাছে তুলে ধরার ক্ষেত্রে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম।